টাটা মোটরসের জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে নিযুক্ত হলেন প্রয়াত শিল্পপতি রতন টাটার বন্ধু শান্তনু নায়ডু। মাত্র ৩২ বছর বয়সে এই গুরুদায়িত্ব পেলেন তিনি। সমাজমাধ্যমে নিজেই দায়িত্ব পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
রতনের সঙ্গে তাঁর বয়সের ফারাক ৫৪ বছরের। কিন্তু বন্ধুত্বের বয়স হয় না। একটা সময়ে রতনের ছায়াসঙ্গী ছিলেন যুবক শান্তনু। গত ৯ অক্টোবর ৮৬ বছর বয়সে শিল্পপতির প্রয়াণের দিন শোকাহত শান্তনু জানিয়েছিলেন, তিনি গুরুকে হারালেন। রতনের উইলেও শান্তনুর নাম ছিল। তাঁকে এ বার টাটা মোটরসের জেনারেল ম্যানেজার তথা ‘হেড অফ স্ট্র্যাটেজিক ইনিশিয়েটিভস্’ হিসাবে নিযুক্ত করা হল।
মঙ্গলবার লিঙ্কডিনে প্রয়াত শিল্পপতি রতনের অন্যতম ‘প্রিয় উদ্যোগ’-এর ফসল ন্যানো গাড়ির সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট করেছেন শান্তনু। সঙ্গে লেখেন, ‘‘অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, টাটা মোটরসের জেনারেল ম্যানেজার, হেড অফ স্ট্র্যাটেজিক ইনিশিয়েটিভস্’ হিসাবে নিযুক্ত হয়েছি আমি।’’ তিনি আরও লেখেন, ‘‘মনে পড়ছে, নীল ট্রাউজার্স-সাদা শার্ট পরিহিত বাবার হাত ধরে টাটা মোটরস প্ল্যান্ট থেকে যখন বাবা ফিরতেন। ওঁর জন্য জানলার ধারে বসে অপেক্ষা করতাম আমি। আজ একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।’’
রতনের হাসপাতালে ভর্তি থেকে শেষকৃত্য, সর্বত্র দেখা গিয়েছিল শান্তনুকে। দুই অসমবয়সির বন্ধুত্ব নিয়ে বিস্তর লেখালিখি হয়েছে। প্রয়াত শিল্পপতির উইল যখন প্রকাশ্যে এল, তাতেও দেখা যায় ‘বন্ধু’র নাম। শান্তনু রতনের অফিসের কাজে নিয়মিত সাহায্য করতেন। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের কোথায় কোন হ্যাশট্যাগ দিতে হবে, কোন ইমোজির মানে কী, এ সব ব্যপারে বন্ধুকে চোস্ত করে তুলেছিলেন তিনি। মধ্য আশির শিল্পপতির সঙ্গে এ ভাবেই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে পুণের বাসিন্দা ওই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের। বস্তুত, টাটাদের পরিবারের সঙ্গে শান্তনুদের পরিবারের জানাশোনা অনেক দিনের। এক সময় টাটা এলেক্সিতে কাজও করতেন শান্তনু।
রতন এবং শান্তনুর বন্ধুত্বের সূত্র ছিল কুকুর। দু’জনেই পশুপ্রেমী। শান্তনুর পরিকল্পনা ছিল পথকুকুরদের আলো জ্বলা কলার পরানো হবে। যাতে রাতের অন্ধকারেও তাদের দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু কলার বানাবে কে? কেই বা পরাবে? এক দিন শান্তনুর এই উদ্যোগের কথা জানতে পারেন রতন। তিনি নিজেই যোগাযোগ করেন ওই যুবকের সঙ্গে। সেই শুরু। শান্তনুর সঙ্গে দেখা হয় রতনের। তাঁর সংস্থাকে অর্থ সাহায্য করেন রতন। তবে টাটা গোষ্ঠীর তরফে নয়, ব্যক্তিগত খাত থেকে ওই অর্থ দিয়েছিলেন তিনি। পরে বিদেশে পড়াশোনার জন্য যে ঋণ নিয়েছিলেন শান্তনু, তা-ও মিটিয়ে দিয়ে গিয়েছেন রতন।