পরিযায়ীদের নিয়ে মহারাষ্ট্র থেকে পর পর ট্রেন আসছে বাংলায়, বেজায় ক্ষুব্ধ রাজ্য

পরিযায়ী শ্রমিক ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গ্রিন জোন রেড জোন হয়ে যাচ্ছে। পুরুলিয়া, বীরভূম, উত্তরবঙ্গের জেলাতেও সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এখন আবার ২০৬টি ট্রেন আসছে। এর মধ্যে মহারাষ্ট্র (Maharashtra) থেকেই আসছে ৩০টি ট্রেন। প্রতিদিন গড়ে দশ-পনেরো ট্রেন আসবে। আগে চলে এসেছে ১৯টি ট্রেন। মঙ্গলবার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাড়ছে ট্রেনগুলি। এছাড়াও নেপাল, ভুটান থেকে এবং অন্য রাজ্য থেকে হাজার-হাজার মানুষ আসছেন সড়ক পথে। এর মধ্যেই আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে কলকাতা বিমানবন্দরে ঘরোয়া বিমান চলাচল। এসবে করোনা সংক্রমন ঠেকাতে আগাম সতর্কতামূলক প্রস্তুতি নিচ্ছে নবান্ন। এদিকে রাজ্যগুলিকে না জানিয়েই ট্রেন পাঠাচ্ছে কেন্দ্র, এই অভিযোগে সরব হয়েছে কেরলও। সে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী থমাস আইজ্যাকের অভিযোগ, এর ফলে কেরলের করোনা বিরুদ্ধে লড়াই অনেকটাই ধাক্কা খাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাটা প্রয়োজন। নিজের বাড়িতে সকলেই ফিরতে চান। সরকারও আন্তরিক। আবার ঘূর্ণিঝড়ে যেভাবে পরিকাঠামো বিঘ্নিত, যেভাবে স্বাস্থ্য, খাদ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিতে সমস্যা রয়েছে, সেখানে আবার এত জনের ফেরাটা নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হচ্ছে সরকারকে। ভাবতে হচ্ছে পরিযায়ীরা যেন অস্বাস্থ্যকর স্থানে এসে না ওঠেন। তাই ঠিক করা হয়েছে তারা বরং নিজের বাড়িতেই কোয়ারেনন্টাইনে থাকুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। লক্ষণ দেখা দিলেই হাসপাতালে যান।”

উল্লেখ্য, ২০৬টি ট্রেনের মধ্যে সর্বাধিক সংক্রামিত রাজ্য মহারাষ্ট্রের ৩০টি ট্রেনও রয়েছে। যে রাজ্যগুলি থেকে আসবে, প্রায় সবগুলি দারুনভাবে সংক্রামিত। বস্তুত রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় বা এতদিন গ্রিন জোন এ থাকা জেলাগুলিতে সংক্রমন ঘটছে এই পরিযায়ী শ্রমিকদের কারণে। রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার ক্ষেত্রে বড় এবং বর্তমানে মূল কারণ এটাই। এমনও দেখা যাচ্ছে যে প্রতি দশ জনের সাত-আট জন করোনা বাহক। সেই প্রেক্ষিতেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যে গ্রামে যাবেন সেখানকার মানুষ যাতে কঠোর ভাবে সামাজিক দূরত্বের বিধি এবং হোম কোয়ারেনন্টাইনে মেনে চলেন সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশাবলী দেওয়া হল। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেন, “সংক্রমণ প্রাদুর্ভাবগ্রস্ত রাজ্য থেকে অনেক মানুষ আসছেন। যে জায়গায় এরা যাবেন সেখানে মানুষের প্রতি রাজ্যের আবেদন, সামাজিক দূরত্বের বিধি কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে। ওই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অবশ্যই হোম কোয়ারেনন্টাইনে মেনে চলবেন, সেটা নজরও রাখতে হবে।”

কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই মানুষদের কীভাবে রাখা হবে সে ব্যাপারে এদিন বৈঠকও করেন। পরিযায়ী এবং ভিন রাজ্যে থাকা মানুষদের আনতে মোট ২২৫টি ট্রেন এই পরিযায়ী শ্রমিক দের আনতে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯টি ঢুকে গিয়েছে। আমফান এর কারণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার আরজি জানিয়েছিলেন। এবার মঙ্গলবার থেকেই চালু হল সেই ট্রেন চলাচল। স্বরাষ্ট্র সচিব জানান, ২০৬টি ট্রেন এদিন বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসার জন্য রওনা দিয়েছে। প্রতিদিন দশ থেকে পনেরোটি ট্রেন চলে আসবে রাজ্যে। বিভিন্ন স্টেশনে যাতে কেন্দ্রীভূত ভিড় না হয়ে যায়, কোয়ারেনন্টাইন সেন্টারে ভিড় না হয় বা রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়ানো ঠেকাতে স্বাস্থ্য দপ্তর নির্দিষ্ট প্রোটোকল তৈরি করেছে বলেও স্বরাষ্ট্র সচিব উল্লেখ করেন। ভিন রাজ্য থেকে ট্রেন, বিমান বা বাসে করে যারা আসবেন তাদের ক্ষেত্রে কোনও লক্ষণ না থাকলে বা খুব অল্প মাত্রায় লক্ষণ থাকলে হোম কোয়ারেনন্টাইন, লালারসের পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ হলে হাসপাতালে ভরতি বন্দোবস্ত রাখতে হবে। যদিও বিভিন্ন স্টেশনে চিকিৎসক থাকবেন। করা হচ্ছে সব ব্যবস্থাও।

করোনা সংক্রমণের দুশ্চিন্তার মধ্যেই আগামীকাল, বৃহস্পতিবার থেকে কলকাতায় চালু হচ্ছে অন্তর্দেশীয় বিমান পরিষেবা। তার আগেই যাত্রীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি জানিয়ে গাইডলাইন জারি করেছে নবান্ন। বিমানবন্দরের পুরনো টার্মিনালে ৪০০ শয্যার কোয়ারেনন্টাইন সেন্টার প্রায় তৈরি। বিন্দুমাত্র উপসর্গ থাকলেই সেই সেন্টারে থাকতে হবে। সংক্রমণের কোনও লক্ষণ না থাকলেই দেওয়া হবে বিমানে চড়ার অনুমতি। সব মিলিয়ে রাজ্য সরকার যে ভিন রাজ্যের থেকে আসা মানুষদের নিয়ে উদ্বিগ্ন সেটা স্পষ্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.