‘পাওয়ার’ পলিটিক্সের অবসান! জাত খোয়ালো শিবসেনা, ভুলবে না মহারাষ্ট্র

বেনারসের ঘাটে দাঁড়ালে আপনার জয় বাবা ফেলুনাথের ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যটার কথা মনে পড়বেই। মগনলাল মেঘরাজ যখন চোরাই মূর্তিটা তাঁর গুরুজির জন্য নিয়ে আসছে, তখন আবিষ্কৃত হচ্ছে সাধুবেশে তাঁর জন্য ঘাটে অপেক্ষা করছেন স্বয়ং ফেলু মিত্তির| এবং মূর্তি চলে যাচ্ছে একেবারে জয় বাবা ফেলুনাথের খপ্পরে। সত্যজিৎ রায়ের আইকনিক সিনেমা যতটা বেনারসকে চিনিয়েছিল, ততটাই চমকের দিক থেকে অভিনব ছিল।

শনিবার বেনারসের ঘাটে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে যে এইরকম ক্লাইম্যাক্স অপেক্ষা করে আছে সেটা কি মারাঠা কুলাধিপতি শরদ পাওয়ার আন্দাজ করতে পারেননি? মগনলাল মেঘরাজ যেমন সাধুবেশী গোয়েন্দাকে চিনতে পারেননি, তেমনই শরদ পাওয়ারও কি নিজের উচ্চাকাঙ্খী ভাইপোর মধ্যে ঘরশত্রু বিভীষণকে আবিষ্কার করতে পারেননি?

শনিবার সকালের প্রবল নাটকীয় শপথগ্রহণের পর যদি সবচেয়ে খুশি কেউ হয়ে থাকেন তিনি বারাণসীর সাংসদ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কারণ দলের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দেবেন্দ্র ফাড়নবিশ মোদীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এমনকি দলের সভাপতি হিসেবে অমিত শাহ গত পাঁচ বছরে বেশ কয়েকবার ফড়নবিশকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরাতে চাইলেও পারেননি শুধুমাত্র মোদীর ভোটের কারণে।

সেই ফড়নবিশের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসায় এত কাঁটা থাকায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যথেষ্ট অস্বস্তিতে ছিলেন। শেষপর্যন্ত পাওয়ার প্লে মহারাষ্ট্রকে আবারও বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী দেওয়ায় নরেন্দ্র মোদীর মুখের হাসি আরও চওড়া হবে। হবেই। এবং শনিবারের পর থেকে শরদ পাওয়ারের মতোই শিবসেনার রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন উঠে গেল। কারণ কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে সরকার গড়তে গিয়ে শিবসেনা তার জাত-ধর্ম-মান… সবই খুইয়েছে। শিবসেনা যেমন আর নিজেদের হিন্দুত্ববাদী অস্তিত্বের সোচ্চার ঘোষণা দিতে পারবে না, রামমন্দির নিয়ে কৃতিত্ব দাবি করে হিন্দুত্ববাদের গেরুয়া ঝান্ডা পতপত করে ওড়াতে পারবে না, তেমনই পাওয়ার মহারাষ্ট্রে দল ধরে রাখবেন কি ভাবে?

উপ মুখ্যমন্ত্রী পদ ব্যবহার করে ভাইপো অজিত পাওয়ার বিধায়ক তো বটেই, অধিকাংশ জায়গায় পুরো এনসিপিকেই নিজের দিকে টেনে নেবেন।

সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে অসুস্থ পাওয়ার কতটা দল এবং মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নিজের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে পারবেন, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। অজিত পাওয়ার যে ভাবে গোটা এনসিপিটাকেই হাইজ্যাক করতে নেমে পড়েছেন এবং শনিবারের পর অনেকটা এগিয়েও গেলেন, শরদ পাওয়ার এবং তাঁর কন্যা, সুপ্রিয়া সুলে সেই চ্যালেঞ্জের কিভাবে মোকাবিলা করবেন, তা নিয়েও বড় প্রশ্ন রযেছে।

শনিবারের ঘটনা থেকে আর কি শেখার আছে? সে শিক্ষা অবশ্যই কংগ্রেসের জন্য। মিটিং কমিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুত নাও, না হলে এভাবেই জেতা খেলা কেঁচে যাতে পারে।

সুমন ভট্টাচার্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.