প্রথম দু’দফার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি রাজ্য পুলিশ দিয়েও ভোট পরিচালনা করেছে নির্বাচন কমিশন। এই রাজ্য পুলিশের মধ্যে যেমন সশস্ত্র পুলিশ ছিল, তেমনই ছিল লাঠিধারি পুলিশও। বিরোধীরা বারবার অভিযোগ করেছে, যে সব বুথে লাঠিধারী পুলিশ ছিল, সেখানে কারচুপি করেছে শাসক দল। আর তাই তৃতীয় দফার ভোটের আগে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি জানায় বিরোধীরা। এই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, ৩২৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে তৃতীয় দফার ভোটের আগে। শনিবার নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, ৯২ শতাংশ বুথে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাকি বুথে থাকবে রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী। কিন্তু কোনও লাঠিধারী পুলিশ থাকবে না কোনও বুথে।

শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছিল তৃতীয় দফার পাঁচটি কেন্দ্রের সব বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। সেই সঙ্গে থাকবে রাজ্য পুলিশও। কিন্তু শনিবার কমিশনের তরফে জানানো হয়, সব বুথে নয়, ৯২ শতাংশ বুথে মোতায়েন থাকবে আধাসেনা। বাকি ৮ শতাংশ বুথে ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে রাজ্য পুলিশ। তবে এই ৮ শতাংশ বুথেও রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী থাকবে বলে জানিয়ে দিয়েছে কমিশন। কোনও বুথে লাঠিধারী পুলিশ থাকবে না বলে কমিশন সূত্রে খবর। এমনকী এও বলা হয়েছে, কোনও বুথে একসঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ থাকবে না। হয় আধাসেনা থাকবে, নইলে রাজ্য পুলিশ থাকবে বুথের দায়িত্বে।

তৃতীয় দফায় রাজ্যের তিন রাজ্যের পাঁচ কেন্দ্রে হবে ভোট। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট, মালদহের মালদহ উত্তর ও দক্ষিণ এবং মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে ভোট রয়েছে মঙ্গলবার। শুক্রবার কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রথম দুই দফার ভোটেও মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ছিল ভোট। বিক্ষিপ্ত কিছু গণ্ডগোল হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় দফার ভোটে সেটাও যাতে না হয়, সে ব্যাপারে তৎপর কমিশন।

প্রথম দফায় কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার দুই কেন্দ্রের জন্য মোট ৮৩ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। তার মধ্যে কোচবিহারে ৪৭ কোম্পানি ও আলিপুরদুয়ারে ৩৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকেই শাসকদল ও বিরোধীপক্ষ একের পর এক অভিযোগ জানায় কমিশনে। প্রথম দফার ভোটের পর রাজ্য বিজেপি কমিশনের কাছে দাবি করে, যে সব বুথে পুলিশ মোতায়েন করে ভোটগ্রহণ হয়েছে সেখানে ফের ভোট নিতে হবে। বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেন, দ্বিতীয় দফায় যে তিনটি আসনে ভোট রয়েছে তার জন্য ১৪৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। অর্থাৎ কমিশনের হাতে ১৪ হাজার ৬০০ আধা সেনা। মোট বুথের সংখ্যা ৫ হাজার ৪০০। এই বাহিনী দিয়ে ভোট করালে সব বুথেই দু’জন করে আধা সেনা মোতায়েন করা সম্ভব। এর পরেও যদি কমিশন মনে করে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটগ্রহণের জন্য বাহিনী পর্যাপ্ত নয় তবে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও রায়গঞ্জের মধ্যে একটি আসনের ভোটগ্রহণ পিছিয়ে দেওয়া হোক। বাহিনী এলে তবেই ভোট হোক।

বিরোধীদের অভিযোগের পর দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে রাজ্যে আরও কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠায় কমিশন। এই দফার তিন কেন্দ্রে ভোট পরিচালনা করার জন্য মোট ২০০ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েন করা হয়। তারপরেও চোপড়া, গোয়ালপোখর প্রভৃতি কিছু জায়গায় অশান্তি হয় ভোটের দিনে। পরিস্থিতি সামলাতে র‍্যাফকে লাঠিচার্জ করতে হয়, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে হয়। স্থানীয় মানুষ কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি জানান। তারপরে ফের কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে গ্রামবাসীদের এসকর্ট করে নিয়ে আসা হয় বুথে। তৃতীয় দফায় রয়েছে বালুরঘাট, মালদহ উত্তর, জঙ্গিপুরের মতো আসন। কমিশন জানে, কোনও সমস্যা হলেই বিরোধীরা আঙুল তুলবে তাদের দিকে। আর তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তৃতীয় দফার ভোটের আগে সুরক্ষা মজবুত করতে বদ্ধপরিকর কমিশন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.