Passport: বৈধ পাসপোর্ট সত্ত্বেও বিদেশে হেনস্থা, বিদেশ মন্ত্রকের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি

বিদেশ মন্ত্রক থেকে পাসপোর্ট পেয়েছিলেন যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ জমা দিয়েই। কলকাতার পাসপোর্ট অফিস থেকে সেই পাসপোর্ট পৌঁছয় উত্তর কলকাতার বাড়িতে। সেই পাসপোর্ট দেখিয়েই ভিসা পান দক্ষিণ আফ্রিকার। কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে জীবনের প্রথম বিদেশ সফরে গিয়ে সেই পাসপোর্টের জন্যই ভয়ঙ্কর বিপদে পড়ে যান সন্দীপ মল্লিক। জোহানেসবার্গ বিমানবন্দরে নামার পরে অন্য বন্ধুরা সবাই বিনা বাধায় শহরে ঢুকতে পারলেও তাঁকে আটকে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকার অভিবাসন দফতর। বলা হয়, তাঁর পাসপোর্ট নাকি বৈধ নয়।

দীর্ঘ হয়রানির শেষে কলকাতায় ফিরে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে ই-মেল করেছেন সন্দীপবাবু। জানিয়েছেন, ১৫ দিনের মধ্যে মন্ত্রকের সদর্থক জবাব না-পেলে আদালতের দ্বারস্থ হবেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমি অরিজিনাল পাসপোর্ট নিয়ে গিয়েছি। অথচ জোহানেসবার্গে নামার পরে বলা হল, আমার পাসপোর্ট বৈধ নয়! এর ফলে আমার শুধু আর্থিক ক্ষতিই হয়নি, চূড়ান্ত হয়রানির পাশাপাশি সম্মানহানিও হয়েছে। প্রতিকার চাই।”

কলকাতার রিজিয়নাল পাসপোর্ট অফিসার আশিস মিদ্দা বুধবার বলেন, “আমরা সন্দীপবাবুর বিষয়টি দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয় দূতাবাসকে জানিয়েছি। কেন এমন হল, তা খতিয়ে দেখে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। জানানো হয়েছে বিদেশ মন্ত্রককেও।”

সন্দীপবাবু জানান, বন্ধুদের সঙ্গে কলকাতা থেকে মুম্বই ও মরিশাস হয়ে তিনি জোহানেসবার্গ পৌঁছন ২৭ মে। সেখানকার বিমানবন্দরের অভিবাসন দফতর বন্ধুদের যেতে দিলেও তাঁকে আটকে দেয়। পাসপোর্ট দেখিয়ে বলা হয়, তা তাঁদের মেশিনে ‘রিড’ করছে না। সন্দীপবাবু বলেন, “আমার পাসপোর্টের প্রথম পাতার তলার দিকে যে-দু’টি লাইন লেখা আছে, তা তুলনায় একটু ঝাপসা ছিল। কিন্তু সেই পাসপোর্ট নিয়ে মুম্বই বা মরিশাস বিমানবন্দরে কোনও অসুবিধা হয়নি।” তাঁর অভিযোগ, পাসপোর্টে যদি গন্ডগোলই থাকবে, তা হলে ভিসা দেওয়া হল কেন? ভিসা দেওয়ার সময় তিনি তো সেই পাসপোর্টই দক্ষিণ আফ্রিকার দূতাবাসেজমা দিয়েছিলেন।

সন্দীপবাবুর অভিযোগ, তাঁর কোনও যুক্তিতেই কর্নপাত করেননি জোহানেসবার্গ বিমানবন্দরের অফিসারেরা। ২৭ মে সারা দিন তাঁকে একটি ঘরে কার্যত বন্দি করে রাখা হয়েছিল। মাঝখানে শুধু খাবার দেওয়া হয়। পরের দিন সকালেতাঁকে সেখান থেকে বার করে ফিরতি উড়ানে সটান ফেরত পাঠানো হয় মরিশাসে। তাঁর কথায়, “আমাদের মরিশাসে বেড়ানোর কোনও পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু ফেরার কথা ছিল মরিশাস হয়েই। তাই আমার কাছে মরিশাস-মুম্বই রুটের টিকিট ছিল, তবে সেটা তারও দিন চারেক পরের টিকিট।” তাঁর অভিযোগ, অনেকটা বাধ্য হয়েই মাঝখানের ওই চার দিন মরিশাস শহরে থেকে যেতে বাধ্য হন তিনি। মরিশাস বিমানবন্দরে অবশ্য তাঁর পাসপোর্ট নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি।

উত্তর কলকাতার ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, “বন্ধুবান্ধবহীন হয়েএকা একা আমি চার দিন মরিশাসের রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছি। সে একদুঃসহ অবস্থা। পকেটে বেশি টাকা ছিল না। টাকার বেশির ভাগই জোহানেসবার্গে হোটেল ও অন্যান্য ভ্রমণের জন্য অগ্রিম দিয়েদিয়েছিলাম। কোনও রকমে মরিশাসের একটি সস্তার হোটেলে পড়ে ছিলাম চার দিন।” বন্ধুরাফিরতি পথে মরিশাসে এলে তাঁদের সঙ্গে একই উড়ানে মুম্বই হয়ে কলকাতায় ফিরে আসেনসন্দীপবাবু।

ওই ব্যবসায়ী বলেন, “আমি মরিয়া। এর শেষ দেখে ছাড়ব। কোনও দোষ না-করেই আমার যে-হয়রানি হল, তার প্রতিকার চাই। যাঁরা বিদেশে যাচ্ছেন, তাঁদেরও বলব, যাওয়ার আগে নিজের পাসপোর্ট ভাল করে পরীক্ষা করে নিন। দেখে নিন, সেখানে প্রথম পাতার একেবারে নীচে যে-দু’টি লাইন আছে, তা পরিষ্কার কি না।”

পাসপোর্ট অফিসার আশিসবাবু জানান, সাধারণত পাসপোর্ট প্রিন্ট হওয়ার পরে তার গুণমান দেখে নেওয়া হয়। সেখানে এই ধরনের কোনও সমস্যা থাকলে নতুন করে প্রিন্ট করা হয়। লক্ষ পাসপোর্টের মধ্যে একটিতে হয়তো কখনও এই ধরনের ভুল থেকে যায়। তবু সেটাকে অবৈধ বলার আগে জোহানেসবার্গের অভিবাসন অফিসারদের আরও খতিয়ে দেখা উচিত ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.