আরজি কর মামলায় নির্যাতিতার পরিবারের হলফনামা চাইল হাই কোর্ট, রিপোর্ট তলব সিবিআইকে

আরজি করের পড়ুয়া-চিকিৎসককে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার ময়নাতদন্ত রিপোর্টে নয়া মোড়। নিহতের পরিবার এ বার ১৩ চিকিৎসকের মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টে সরাসরি কলকাতা হাই কোর্টে অনাস্থা প্রকাশ করল। পরিবারের দাবি, বিশেষজ্ঞেরা ওই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে একাধিক ‘ত্রুটি’ চিহ্নিত করেছেন।

পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার সিবিআইয়ের জবাব তলব করেছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। পাশাপাশি, নিহত পড়ুয়া-চিকিৎসকের পরিবারের সেই ‘অনাস্থা এবং ত্রুটি’গুলি হলফনামা আকারে হাই কোর্টকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৬ মে মধ্যে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ঘোষ। ওই দিনই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

আরজি কর মামলায় সিবিআইয়ের তদন্তে সন্তুষ্ট নন নির্যাতিতার পরিবার। আরও তদন্ত চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা। সুপ্রিম কোর্টের অনুমতিসাপেক্ষে মার্চ মাসে হাই কোর্টে বিচারপতি ঘোষের বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন নির্যাতিতা পড়ুয়া-চিকিৎসকের বাবা-মা। বস্তুত, গোড়া থেকেই সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের পাশাপাশি একাধিক অভিযুক্তের কথা বলেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সিবিআই তদন্তে শুধু সঞ্জয়কেই আসামি হিসেবে দাবি করা হয়। তখনই সিবিআই চার্জশিটের উপরে অনাস্থা প্রকাশ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় নির্যাতিতার পরিবার। তবে মূল মামলা (স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে যে মামলা শীর্ষ আদালত দায়ের করেছিল) সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন হওয়ায় তদন্তের আর্জি সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি ছাড়া শুনতে চায়নি হাই কোর্ট। তার পরেই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল নির্যাতিতার পরিবার।

বুধবার শুনানিপর্বে বিচারপতি ঘোষ বলেন, ‘‘নিম্ন আদালতে বিচার হয়েছে। এটা অস্বীকার করা যায় না। ট্রায়াল কোর্টে চার্জ ফ্রেম হয়েছে। একজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। চার্জ গঠনের সময় ভাষা কী ছিল তা জানা নেই। পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার জন্য আরও তথ্য প্রয়েজন।’’ নির্যাতিতা চিকিৎসকের পরিবারের আইনজীবী সওয়াল দাবি করেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে অনেকগুলি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘নির্যাতিতার উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ১ ইঞ্চি। সিসিটিভি ফুটেজের সময় অনুযায়ী ঘটনার সময় ছিল ৪টে ৩ মিনিট থেকে ৪টে ৩৮ মিনিট। অর্থাৎ ৩৫ মিনিট। এই সময়ের মধ্যে কি এই আঘাতগুলো করা যায়? তা হলে নির্যাতিতা কি চিৎকার করেননি? কাছেই নার্সিং স্টেশন ছিল কেউ তো চিৎকার শুনতে পেল না! সেমিনার হল থেকে ডাক্তারদের রুমও কাছেই ছিল।’

এর পরেই নির্যাতিতা চিকিৎসকের পরিবারের আইনজীবীর মন্তব্য, ‘‘চার্জশিটে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। যদি হয়েও থাকে তা হলে কী জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল, তা জানি না। সেমিনার রুমের পাশের ঘরের দেওয়াল কেন ভাঙ্গা হয়েছিল, কী তার উদ্দেশ্য ছিল, কার নির্দেশে ভাঙা হয়েছিল তা জানা হয়নি। হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরই তড়িঘড়ি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছিল। কী তার উদ্দেশ্য ছিল? এই ধরনের স্পর্শকাতর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক জন তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পরিকাঠামো উন্নত করায় বেশি নজর দিল?’

পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে সেমিনার রুমের পাশের ঘরের দেওয়াল ভাঙার প্রসঙ্গে আবেদনকারী পক্ষে আইনজীবীর প্রশ্ন, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কি এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল? করিডর এরিয়াতে প্রথম রুমে ভাঙ্গা হয়েছিল সেখানে দু’টি দরজাও ভাঙা ছিল। নিম্ন আদালতের রায়ে প্রসঙ্গটিক উল্লেখ রয়েছে। এক জন ব্যক্তির ভেতরে প্রবেশ করা ও বেরিয়ে যাওয়া কারও নজরে এলো না? প্রিন্সিপাল বা সুপার বা উচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া এই ধরনের ঘটনা হতে পারে না। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত নমুনার রাসায়নির পরীক্ষা (কেমিক্যাল এক্সামিনেশন) হয়েছিল কি? তদন্তকারী সংস্থার হাতে যে তথ্য গিয়েছিল বা যে বিষয়গুলিতে সংশয় ছিল সেগুলি নিয়ে কি তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই) তদন্ত করেছে?’’ এক জনের পক্ষে এতোগুলি কাজ একা করা সম্ভব কি না, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.