রবিবার সবরমতী হস্টেলে দুষ্কৃতী হামলায় গুরুতর আহত হন জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের নেত্রী ঐশী ঘোষ। তাঁর মাথায় ১৬ টি সেলাই হয়েছে। মঙ্গলবার তাঁর বিরুদ্ধেই মামলা করল দিল্লি পুলিশ।তাঁর সঙ্গে আরও ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অভিযোগ, তাঁরা ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভার রুমে ভাঙচুর করেছিলেন। তার পরদিন, অর্থাৎ ৫ জানুয়ারি লাঠিসোঁটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালায় প্রায় ৫০ জন দুষ্কৃতী। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি সার্ভার রুমে ভাঙচুরের জেরেই সবরমতী হস্টেলে হামলা হয়েছে।

গত ৩ ও ৪ জানুয়ারি জে এন ইউয়ের ছাত্রদের বিরুদ্ধে দু’টি এফআইআর করা হয়। দ্বিতীয় এফআইআরে ঐশীর নাম আছে। অভিযোগ, তিনি আরও আটজন ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীদের আক্রমণ করেন। সার্ভার রুমেও ভাঙচুর করেন। ৩ জানুয়ারির এফআইআরে ক’জনের নাম আছে জানা যায়নি। যদিও সার্ভার রুমে ভাঙচুরের অভিযোগেই ওই এফআইআরটি করা হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, শনিবার ছাত্রছাত্রীরা সার্ভার রুমে ভাঙচুর করার পর শিক্ষায়তনের টেকনিক্যাল স্টাফেরা সেখানে যান। তাঁরা দেখেন, সার্ভারটি অচল করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ফের সার্ভার চালু করেন। তাঁদের অভিযোগ, দুপুর একটায় একদল ‘দুষ্কৃতী’ ফের সার্ভার রুমে ঢোকে। যন্ত্রপাতির ক্ষতি করে। বিকাল চারটেয় ফের সার্ভার চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফি কমানোর যে আন্দোলন চলছে, তার জেরেই সার্ভার রুমের ক্ষতি করা হয়েছে। ঐশী ঘোষ বলেছেন, আমাদের সংগঠন যথাসাধ্য চেষ্টা করছে যাতে ফি বৃদ্ধির ইস্যুটি শান্তিপূর্ণভাবে মেটানো যায়। তাঁর দাবি, “জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি টিচার্স ফেডারেশন আমাদের হুমকি দিয়েছে।”

জেএনইউ-তে রবিবারের হামলায় শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী মিলিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ৩৪ জন। তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রবিবার রাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লি পুলিশের প্রধানের সঙ্গে কথা বলেন। সোমবার দিল্লির লেফটেন্যান্ট জেনারেল অনিল বাইজালের সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, ঘটনাস্থলে পুলিশ ও বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীরা থাকলেও কেউ হামলাকারীদের বাধা দেয়নি। দুষ্কৃতীদের অবাধে হামলা চালিয়ে পালাতে দিয়েছে।

দিল্লি পুলিশ রবিবার থেকে জেএনইউ নিয়ে বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছে। সবগুলি অভিযোগ একসঙ্গে নিয়ে একটিই এফআইআর করা হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রোক্টর এবং রেক্টরকে ডেকে পাঠিয়েছেন।

রবিবার জেএনইউতে হামলার খবর পেয়েই মুম্বইয়ে গেটওয়ে অব ইন্ডিয়ার সামনে জড়ো হইয়েছিলেন কয়েকশ ছাত্রছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। তাঁদের আন্দোলনের নাম ছিল ‘অকুপাই গেটওয়ে’। কয়েক বছর আগে আমেরিকায় ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ নামে আন্দোলন হয়েছিল। অনেকটা তারই প্রভাবে শুরু হয়েছিল মুম্বইয়ের আন্দোলন। পুলিশ সোমবার অবধি কিছু বলেনি। কিন্তু মঙ্গলবার সকালেই টেনে হিঁচড়ে গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া থেকে সরিয়ে দিল বিক্ষোভকারীদের। ছাত্রছাত্রীরা এখন সেখান থেকে দু’কিলোমিটার দূরে আজাদ ময়দানে অবস্থান করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.