।।রামনবমী দেখি রামের দৃষ্টিকোণ থেকে।।

আজ প্রভুর জন্মদিনে, 500 বছরের প্রতীক্ষার পর শ্রীরামচন্দ্র নিজের প্রাচীন সেই গর্ভগৃহে দর্শন দিচ্ছেন “রাম লালা” রূপে। অগণিত ভক্তের অশ্রুসিক্ত নয়ন নবনির্মিত ভব্য মন্দিরে প্রভুকে দেখছে কালো মূর্তিতে জীবন্ত রাম রূপে। গোটা অযোধ্যা / সাকেত পুরি এই দিব্য দিবসের দিবালোকে রোদ ঝলকানো হীরের মত চমকাচ্ছে আর রাতের কৃষ্ণপ্রভায় প্রদীপ ঘেরা নববধূর ন্যায় সুসজ্জিত হ’য়ে উঠছে। সহস্র ভাস্কর্য অলংকৃত শুভ্র পাষাণের সোপান বেয়ে কাতারে কাতারে আছড়ে পড়ছে ভক্তের ঢল। ধর্ম মার্গ থেকে লতা মঙ্গেশকর চক, রাম কি পেরি থেকে জন্মভুমি মন্দিরের মুখ্য দুয়ার সর্বত্র “জয় শ্রী রাম” ধ্বনিতে গগন কম্পমান। জয়ধ্বনি দিতে দিতে ধরা কম্পিত করে এগিয়ে চলা ভক্তরা মূল মন্দিরে ঢুকে যেন আরো গর্জে উঠছে উচ্ছ্বাসে, প্রভুর উপস্থিতি আর রাম ভক্তের কষ্টের, অর্জিত রামমন্দির দেখে তারা আবেগে উৎফুল্লিত হ’চ্ছে হর্ষিত হচ্ছে। তাদের জয়ধ্বনিতে যেন মন্দিরের প্রতি পাষাণস্তম্ভে খচিত দেবদেবীগণ বারে বারে আবাহন পেয়ে চোখ মেলে তাকাচ্ছেন। ভিড় আরো এগিয়ে এবার যখন স্বর্ণদুয়ার পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, দূরে ওই দেখা যাচ্ছে রামলালার বিগ্রহ, কারোর আর আগ্রহ নেই সোনার দরজা দেখার। ভক্তের সর্ব ইন্দ্রিয় তখন এক মুখী, তার গলা এবার ভ’রে আসছে, চোখ ভিজে আসছে। জয় শ্রীরাম ধ্বনির তীব্রতা এবার কমে এসে তাতে মিশে যাচ্ছে আবেগের ভাব, জয়ধ্বনি দিয়ে অস্রু সজল ভক্ত তখন রামকে একটু জড়িয়ে ধরতে চাইছে। তার মন প্রাণ চোখ শরীর হৃদয় সবটুকু তখন এক ঝলক রামকে দেখার চেষ্টায়।
আর এই একই সময় এই আবেগের বশে
রামলালার বিগ্রহে স্পন্দিত হচ্ছে হৃদয়, রামলালা অপলকভাবে ভক্তের দিকে তাকিয়ে অন্তরে অশ্রুস্নাত হচ্ছেন,
????ভক্তের চোখের জলে প্রতি মুহূর্তে হ’চ্ছে প্রভুর অভিষেক। ????
রাম সূক্ষ্ম চেতনা রূপে মিশে যাচ্ছেন হাহাকার ক’রে ডাকতে থাকা ভক্তের বুকের মাঝে।
ভক্তের ভগবানের মধ্যে এই দিব্য প্রেম লীলার মাঝে ছোট্ট রামলালা আনমনে হারিয়ে যাচ্ছেন নিজের ছোটবেলার সেই দিনগুলিতে, ভগবৎ শরীরে লুকিয়ে থাকা মানবরূপী সেই বালকের, বাল্য রামের মনে পড়ছে ছোটবেলার দিনগুলো। এই একই গর্ভগৃহে ত্রেতাযুগে তিনি এভাবেই এসে দাঁড়াতেন স্নান সেরে॥ মায়েরা তাকে এভাবেই তো সাজিয়ে দিতেন মানিক্যখচিত আভূষণ, রেশমী বস্ত্র, চন্দন, গন্ধ এসব দিয়ে॥ ভাইয়েরা ছুটে বেড়াতেন গোটা ঘর জুড়ে। শান্ত রাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার আনন্দ নিতেন। অদূরে বসে পুরুষোত্তমের এই দিব্যলীলার দর্শনে আনন্দ নিতেন পিতা দশরথ ঠিক এভাবেই তো। বাল্য রামের মনে পড়ে যাচ্ছে, ঠিক এভাবেই তো এই ঘরেই করেছে তার শৈশবের স্মৃতিমধুর দিনগুলো। আজ তার মায়েরা নেই, তার পিতা নেই কিন্তু তার পিতার মতই আজ তার দর্শনে অশ্রু সিক্ত হ’চ্ছে হাজার হাজার ভক্ত। মায়ের মত সাজিয়ে দিচ্ছে মন্দিরের পূজারীরা, আর ভাইয়েরা বাল্যরূপে তার পাশে আনন্দে বসে আছেন॥ ইতিহাস আর বর্তমান কেমন যেন মিশে যাচ্ছে রামের চোখের সামনে। মনুষ্য স্নেহ আস্বাদন মানব কুলে অবতার নেওয়া শ্রী নারায়ণ এবার আবদ্ধ হ’চ্ছে অগণিত রাম ভক্তের আবেগের টানে। যেমনটা তিনি আবদ্ধ হয়েছিলেন ত্রেতা যুগে মা কৌশল্যার কাছে॥
কৌশল্যানন্দন রামলালা কী জয়॥

শীর্ষ আচার্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.