কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা এই মরাঠী ব্রাহ্মণের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগও অবিচ্ছেদ্য। নাগপুরে ১৮৮৯ সালে জন্ম কেশবের। বাবা বলিরাম ছিলেন গোঁড়া ব্রাহ্মণ, পেশায় পুরোহিত। তাই পরিবার সূত্রেই হিন্দুধর্মের প্রতি তৈরি হয়েছিল আলাদা টান। কিন্তু মাত্র ১৩ বছর বয়সেই বাবা-মা দু’জনকেই হারান তিনি। মহামারীতে মৃত্যু হয় দু’জনেরই।
খুব ছোটবেলাতেই স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাঁকে, বন্দে মাতরম গাওয়ার জন্য। তারপর সেই নিল সিটি হাইস্কুল ছেড়ে পড়াশোনা শুরু পুণের রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়ে। তখনই হিন্দু মহাসভার সংস্পর্শে আসেন কিশোর কেশব। হিন্দু মহাসভার বি এস মুঞ্জের উদ্যোগে ম্যাট্রিকের পর পরই কলকাতায় পাড়ি দেন। ১৯১০ সালে ভর্তি হন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়তে।
ডাক্তারি পাশ করে হেডগেওয়ার ফিরে আসেন জন্মস্থান নাগপুরে। জাতীয় কংগ্রেসে যোগও দিয়েছিলেন, কিন্তু রাজনৈতিক পথ আলাদা হয়ে যায় ১৯২৩ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর। তিনি জাতীয় কংগ্রেসের ভূমিকা মেনে নিতে পারেননি। রাজনৈতিক ভাবে তিনি অনেক বেশি প্রভাবিত হন বীর সাভারকর এবং বাল গঙ্গাধর তিলকের আদর্শে।
দু’বছর পরেই ১৯২৫ সালের বিজয়া দশমীর দিন গঠন করেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। উদ্দেশ্য একটাই। গোটা দেশের হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করে ভারতকে ব্রিটিশের হাত থেকে মুক্ত করা। যদিও মহাত্মা গাঁধীর সত্যাগ্রহে স্বয়ংসেবকদের যোগ দিতে মানা করেছিলেন তিনি। ব্যক্তি হিসেবে যোগ দিলেও হেডগেওয়ারের সংগঠন এই আন্দোলনের বাইরে থাকে। ইতিমধ্যে সঙ্ঘর শাখা ছড়িয়ে পড়ে ভারতের অন্যান্য প্রান্তেও। ১৯৩৬ সালে গঠিত হয় সঙ্ঘের মহিলা শাখা।
এর পর থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে তাঁর। সঙ্ঘের কাজকর্মের দায়িত্ব নেন ‘ডক্টরজি’-র সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ শিষ্য এম এস গোলওয়াকার। ১৯৪০ সালে হেডগেওয়ারের মৃত্যুর পর সংগঠনের দায়িত্ব নেন গোলওয়াকার। বৃহস্পতিবার যে রেশমিবাগে সঙ্ঘের সমারোহ, সেই রেশমিবাগেই শেষকৃত্য হয়েছিল সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠাতার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.