বাবার মুখাগ্নি করে মাঠে ফিরেই সেঞ্চুরি, জেটলি বারবার বলতেন, ‘একদিন বিশ্ব কাঁপাবে বিরাট’

সালটা ২০০৬। রাজধানীর ক্রিকেটের আঙিনায় সবে ফুটতে শুরু করেছে একটা কুঁড়ি। মাত্র ১৭ বছর বয়সে রঞ্জি ম্যাচ খেলতে নামার আগে খবর পেলেন, বাবা মারা গিয়েছে। শেষকৃত্য সেরে ফিরে এসে সে দিনই তাঁর ব্যাট থেকে বেরিয়েছিল একটা ঝকঝকে সেঞ্চুরি। আর এই সেঞ্চুরি দেখেই সেই ক্রিকেটারের ভবিষ্যৎ বুঝে গিয়েছিলেন তৎকালীন দিল্লি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অরুণ জেটলি। তারপর থেকে প্রতিটা মুহূর্তে পাশে থেকেছেন, সাহস জুগিয়েছেন। আর আজ যখন জেটলি মারা গেলেন, তখন দেশ থেকে প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার দূরে খেলতে ব্যস্ত সেই ক্রিকেটার, বিরাট কোহলি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনে ঘুম থেকে উঠেই জেটলির খবর শুনেছেন বিরাট। তারপরেই টুইট করেছেন পরম শ্রদ্ধায়। টুইটে তিনি লিখেছেন, “অরুণ জেটলিজির মৃত্যুর খবর শোকস্তব্ধ। তিনি সত্যিই খুব ভালো মানুষ ছিলেন। সবসময় সবাইকে সাহায্য করতেন। ২০০৬ সালে আমার বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি সময় বের করে আমাদের বাড়িতেও এসেছিলেন। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।”

শুধু টুইট করা নয়, জেটলিকে শ্রদ্ধা জানাতে শনিবার ভারতীয় ক্রিকেটাররা কালো আর্মব্যান্ড পরে নামবেন। ভারতীয় ক্রিকেটে প্রশাসক হিসেবে অরুণ জেটলির অবদানকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিসিআই। ক্রিকেটারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সে কথা।

জেটলি ও কোহলির সম্পর্ক কিন্তু প্রফেশনাল ছিল না, বরং ছিল পার্সোন্যাল। আসলে দিল্লি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টের পদে জেটলি ছিলেন ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত। এই সময়েই ভারতীয় ক্রিকেটে সেহওয়াগ, গম্ভীরের মতো বিরাটেরও উত্থান দেখেছেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পরেও খেলার প্রতি বিরাটের কমিটমেন্ট মুগ্ধ করেছিল জেটলিকে। ঘনিষ্ঠ মহলে বহুবার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘দিল্লি ক্রিকেটে একটা ছেলে উঠছে। এ অনেক দূর যাবে।’

২০০৭ সালে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জেতেন কোহলি। তারপর ২০০৮ সালে ভারতীয় দলে সুযোগ। টানা ১১ বছর খেলছেন। দলের অধিনায়ক, বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান হয়েছেন। একের পর এক রেকর্ড ভেঙেছেন। অন্যদিকে ক্রিকেট প্রশাসন, রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর আজ চলেই গেলেন জেটলি। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেও তাঁদের সম্পর্কে ঘাটতি হয়নি।

২০১৪ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেই বছরই অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্টে অধিনায়কত্বও পান বিরাট। আর তারপরেই জেটলি এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদী ও বিরাট কোহলিকে কেউ হারাতে পারবে না। অন্যদিকে আবার ২০১৫ সালে যখন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ সরকার ডিডিসিএ-তে দূর্নীতির অভিযোগ তুলে জেটলির ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন, তখন প্রকাশ্যে তাঁর সমর্থনে দাঁড়িয়েছিলেন বিরাট। নিজের মেন্টর, পথপ্রদর্শক, বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে কোহলি বলেছিলেন, “আমরা গর্বিত জেটলিজিকে দিল্লি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পেয়ে। তাঁর সময়ে দিল্লি ক্রিকেটের শুধুই উন্নতি হয়েছে।”

সত্যিই হিরে খুঁজে পেয়েছিলেন অরুণ জেটলি। সত্যিই জহুরির চোখ বটে তাঁর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.