বয়স ছোঁবে ১০০, তিনি ছোঁবেন হিমালয়! ৩০-তম ট্রেকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ‘শতায়ু যুবক’

 খুব ছোটোবেলা থেকেই তাঁর নেশা ধরেছিল পাহাড়ে পাহাড়ে পায়ে হেঁটে ঘোরার। ভাল কথায় যাকে বলে ট্রেকিং। কিন্তু সে নেশার সামনে যে বয়সও হার মানবে, তা ভাবতে পারেননি কেউ-ই। তিনি নিজেও বোধ হয় ভাবেননি, শতবর্ষের দোরগোড়ায় পৌঁছেও হাতে লাঠি তুলে নেওয়ার বদলে পিঠে রুকস্যাক তুলে নেবেন তিনি।

তিনি চিত্রণ নাম্বুদ্রিপাদ। ৯৯ বছর বয়সি কেরালার এই বৃদ্ধ ইতিমধ্যেই ২৯ বার ট্রেক করে এসেছেন বিভিন্ন পাহাড়ে। এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন ৩০-তম ট্রেকের। বয়স তুচ্ছ, শারীরিক অসুস্থতা তুচ্ছ, তুচ্ছ পরিবারের দুশ্চিন্তা। সব কিছুর উপরে অমোঘ টানে তাঁকে ডাকছে কেবল হিমালয়। যেখানে এত বছর ধরে জীবনের মানে খুঁজে পেয়েছেন এই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, খুঁজে পেয়েছেন আত্মার শান্তি। প্রাণের আরাম।

চিত্রণ নাম্বুদ্রিপাদের বয়স তখন ন’-দশ বছর। তখনই এক প্রতিবেশীর কাছে বিভোর হয়ে শুনতেন হিমালয়ের গল্প। সেই প্রতিবেশী নিয়মিত চষে বেড়াতেন পাহাড়ের আনাচকানাচ। তখন থেকে ভালো লাগা শুরু চিত্রণের। তবে নানা কারণে বেরিয়ে পড়া হয়নি যুবক বয়সে। সংসার-চাকরির প্রাত্যহিক চাপ বেঁধে ফেলে তাঁকে। তবে পাহাড়ের প্রতি টান এতটুকু কমেনি, যেতে না পারলেও।

ত্রিশূরের বাসিন্দা, বৃদ্ধ চিত্রণ জানালেন, ১৯৫২ সালে বন্ধুর সঙ্গে হিমালয়ে পাড়ি দিলেও ভাগ্য সদয় হয়নি। অসুস্থ হওয়ায় তাঁদের ফিরতে হয়েছিল। শেষমেশ ১৯৯০ সালে প্রথম সুযোগ আসে হিমালয়ে যাওয়ার। “ওই বছরেই কেদারনাথ, বদ্রিনাথ ঘুরে দেখি আমি। তার পরে থেকে প্রতি বছরেই যাই হিমালয়ে। কোনও বছর বাদ যায়নি। এই নিয়ে ২৯ বার হল।” ২০১৯ সালের অক্টোবরে ১০০ বছর পূর্ণ হবে তাঁর। সেই মাসেই নিজের ৩০তম হিমালয় যাত্রা করতে চান বৃদ্ধ।

কিন্তু কীসের এত টান? এই বয়সেও কেন ছুঁতে চলেছেন হিমালয়ের দুর্গম পথ! প্রাক্তন মাস্টারমশাই বলেন, “দেশের সব বড় নদীর জন্ম ওই পর্বত থেকে। এটা ভাবলেই আমার দারুণ লাগে। যে কোনও সময়ে, হিমালয়ের যে কোনও প্রান্তে যেতে আমি রাজি।” তবে অন্য সব জায়গার তুলনায় গঙ্গা নদীর জন্মস্থলে, গঙ্গোত্রীতে যেতে বেশি ভাল লাগে তাঁর। বৃদ্ধের কথায়, “বিভিন্ন দেশের থেকে ভারতকে দেওয়ালের মতো রক্ষা করে হিমালয়। সে হিমালয়কে ছুঁয়ে আসতে পারা এক অনন্য অনুভূতি।”

পুরনো ট্রেকের কথা বলতে গিয়ে নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েন চিত্রণ। বলেন, “খাড়া পাহাড় দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেক করেছি এক সময়ে। প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও, পরে সেটা সহজ হয়ে যায়। এখন অবশ্য অত বেশি হাঁটতে পারি না। তাই মাঝে মাঝে ঘোড়ার পিঠে চাপতে হয়েছে। প্রতি বছর ট্রেনেই দিল্লি যাই। এ বার হয়তো প্লেনে যাব।”

তবে শুধু পাহাড় নয়, নিজের পেশার প্রতিও আবেগ কম নেই চিত্রণ নাম্বুদ্রিপাদের। জাতীয় পুরস্কারজয়ী শিক্ষাবিদ তিনি। নিজের গ্রামে প্রথম হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনিই।

চিত্রণ বললেন, “আমার পরিবার চাইত আমি আইনজীবী হই। কিন্তু আমি শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম। প্রায় এক দশক হেডমাস্টার ছিলাম আমি।” পরে অবশ্য তিনি স্কুলটি সরকারকে দান করে দেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.