হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় কিডনি স্টোন থেকে মুক্তি

মূত্রগ্রন্থি বা কিডনিতে পাথর হওয়ার কথা বর্তমানে শুনলে আঁতকে ওঠার কিছু নেই বা নতুন কিছু নেই বা নতুন কিছু মনে করারও নয়। কিডনির মধ্যে শক্তদানা কঠিন পদার্থ বা স্টোনের মতো জমা হলে তাকে রেনাল স্টোন বা কিডনির পাথর বলে। এই পাথর কখনো মূত্রগ্রন্থি বা কিডনি, মূত্রনালী, আবার কখনো মূত্রথলিতে এসে জমা হয়। এর ফলে বিভিন্ন সমস্যা সহ প্রস্রাব অবরোধ হতে পারে।
কেন হয় কিডনিতে পাথর?
কিডনির কাজ শরীরের রক্ত থেকে ময়লা আবর্জনা ও জল শোধন করে প্রস্রাব আকারে বের করে দেওয়া। দুটি ইউরেটারের মাধ্যমে প্রস্রাব মূত্রথলিতে এসে জমা হয়। তারপর প্রয়োজন মতো বেরিয়ে আসে। আমরা সারাদিনে যা পানাহার করি তা থেকে শরীরের দরকারি অংশ কোষ নিজে রাখে। বাকি অংশ বর্জ্য পদার্থ রক্তের সঙ্গে মিশে কিডনি এই বর্জ্য রক্ত থেকে বের করে নিয়ে প্রস্রাব আকারে নিঃসরণ করে। তাছাড়া আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কিডনি।
কীভাবে বুঝবেন কিডনিতে পাথর আছে?
যে কোনো বয়সে নারী পুরুষ, সবারই কিডনিতে পাথর জমতে পারে। বারবার প্রস্রাবের বেগ, কিডনি বরাবর হয়ে নিম্ন কুচকির দিকে ব্যথা, বুকে প্রসারিত হতে পারে। কুচকি, অণ্ডকোষ প্রভৃতি স্থানে মারাত্মক যন্ত্রণা হতে পারে। যে কোনও ভারী জিনিস তুলতে গেলে বা রাতে ঘুমের ঘোরে হঠাৎ ব্যথার উদ্রেক হতে পারে। অণ্ডকোষ ওপর দিকে টেনে ধরার মতো অনুভব হতে পারে। ব্যথা ও যন্ত্রণা কখনো কখনো বা সব সময় থাকতে পারে। বমি বমি ভাব হতে পারে। হিক্কা, কপালে ঘাম, মূচ্ছা যেতে পারে। নাড়ি দ্রুত ক্ষীণ হতে পারে। দেহের তাপ মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। সর্বদাই প্রস্রাব করার ইচ্ছা থাকে কিন্তু প্রস্রাব হয় না। প্রস্রাব ফোটা ফোটা বের হয়। তলপেটে ব্যথা হয়। প্রস্রাবে পুঁজ ও রক্ত মিশ্রিত থাকতে পারে। কোনো কোনো অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রোগী বোধ করে পাথর যেন নড়াচড়া করে। ছোটো শিশুরা প্রস্রাব করতে গিয়ে কান্না করতে থাকে।
এ বিষয়ে একটি কথা উল্লেখ করছি, দেখা গেল যে চার বছরের একটা শিশু এসেছিল। তার কিডনিতে বেশ কয়েকটি স্টোন হয়েছিল। সে আমাকে জানালো শেষ দিন আমার অনেক কষ্ট হয়েছে, অনেকক্ষণ কেঁদেছি, সহ্য করতে না পেরে একটা কাঠি দিয়ে খুটে ও টিপে বের করেছি। পরে অনেকক্ষণ রক্ত আসছে। তাই বলি এখন ছোটোদের দেখা যায়।
আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা :
প্রথমত হিস্ট্রি নিয়ে বোঝা যায় এক্স-রে করে, আন্ট্রাসোনোগ্রাফ করে, আইভিও করে প্রস্রাব পরীক্ষা করে জানতে পারে কিডনির স্টোনের অবস্থা।
রোগ মারাত্মকের কারণে প্রয়োজন চিকিৎসা :
এর জটিলতা স্বরূপ সংক্রমণ, শরীর হাত পা ফুলে যেতে পারে, কক্সিমিয়া, মূত্র অবরোধ হয়ে যন্ত্রণায় অস্থির ও অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
চিকিৎসা :
হোমিওপ্যাথিতে কিডনির স্টোনের জন্য অনেক ওষুধ আছে। তবে এই ওষুধগুলো অ্যালেপ্যাথির মতো ধারাবাহিক ভাবে প্রয়োগ করা চলে না। প্রতিটি ওষুধই আলাদা লক্ষণ সদৃশে ব্যবহার করে থাকে। যেমন, লাইকোপোডিয়াম, লিথিয়াম কার্ব, সার্সপেরিলা, থ্যালপসি-বার্সা, বারবারিস, ক্যান্থারিস ও ক্যালকেরিয়া প্রভৃতি যা একজন আদর্শ চিকিৎসকের পক্ষে সঠিক মাত্রা শক্তি নির্বাচন সম্ভব।
পাথর যদি বেশি বড়ো হয়ে যায় বা দীর্ঘদিনের হয় তখন তা অনায়াসে বেরিয়ে আসতে পারে না। অর্থাৎ ৫ মিলিমিটারে ছোটো হলে সহজে বেরিয়ে আসে। আমার এক রোগীর কয়েকটি পাথর এসে আর আসছিল না। কিন্তু তার ব্যথা-বেদনা এমনকী যন্ত্রণার লাঘব হচ্ছিল না। তারপর আমি তাকে নিয়মিত ওষুধ সেবনে পরামর্শ দেই। সে তাই করে এবং সাতটি পাথর খণ্ডের সন্ধান পাওয়া যায়। তারপরও তাকে বলি এক বছর চিকিৎসা দিতে। সে ৬ মাস চিকিৎসা নেয়। এখনো দেখা করতে আসে, ৫ বছর হলো ভালো আছে। তাই আমি বলি যাদের একবার কোথাও পাথর হয় তা অপসারিত হলে বারবার হতে পারে। এজন্য মাঝেমধ্যে পরীক্ষা করতে হবে। ওষুধ খেতে হবে।
যা করতে হবে আপনাকে : বেশি জল পানের অভ্যাস রাখতে হবে। বেশি ঠাণ্ডা না লাগানোই ভালো, বেদনা উপশমের জন্য হলকা গরম সেক দেওয়া যেতে পারে। দুধ সাগু, বার্লি দধি সুপথ্য ফলমূল, লেবুর শরবত বিশুদ্ধ জল, বিশুদ্ধ বায়ু।
কিডনি রোগে সতর্কতা : রোগ নিয়ে অবহেলা, চুন-সুপারি খাবেন না, অম্ল বর্জনকর দ্রব্য, মদ্যমান, ধূমপান, মাংস, গুরপাক খাদ্য নেবেন না। পেইনকিলার দীর্ঘদিন নেবেন না।
ডাঃ প্রকাশ মল্লিক
ফোন : ৯৮৩০০২৩৪৮৭ / ৯৮৩০৫০২৫৪৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.