চেনাই যাচ্ছে না, ঝলসে যাওয়া পরিচয়হীন দেহ কার? হতে পারে ডিএনএ পরীক্ষা

এককথায় ভয়াবহ ও মর্মান্তিক। স্ট্র্যান্ড রোডে পূর্ব রেলের কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ের বিধ্বংসী আগুনে ঝলসে, দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হল ৯ জনের। এমনকী ওই বিল্ডিংয়ের তিন তলায় বসা পূর্ব রেলের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) পার্থসারথী মণ্ডল এবং তাঁর রক্ষী সঞ্জয় সাহানির দেহ মিলেছে ১২ তলার লিফটে। আর অপর লিফটে মিলেছে ৪ দমকলকর্মী-সহ ৭ জনের দেহ। দমকলকর্মী গিরিশ দে, গৌরব বেজ, অনিরুদ্ধ জানা, বিমান পুরকায়েত, হেয়ার স্ট্রিট থানার এএসআই অমিত ভাওয়ালের দেহও উদ্ধার হয়েছে। তবে, এখনও একজনের দেহ শনাক্ত করা যায়নি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, দেহটি এমনভাবে ঝলসে গিয়েছে, চেনাই যাচ্ছে না। তবে, ওই দেহ একজন রেলকর্মী বলেই প্রাথমিকভাবে অনুমান। যে রেলকর্মী বলে ওই ব্যক্তিকে মনে করা হচ্ছে, তাঁর পরিবার এসে দেহ শনাক্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু দেহের পরিস্থিতি এমনই, তা সম্ভব হয়নি। ফলে ওই ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা করা হতে পারে। ইতিমধ্যেই ৬ জনের দেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যেই তিনটি পৃথক তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলও। তবে, সোমবারের এই ঘটনা অন্তর্ঘাত নাকি নিছক দুর্ঘটনা, তা তদন্ত করে দেখা হবে। সকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর কথা রয়েছে ফরেন্সিক দলের।

তবে, অফিস ৩ তলায় হওয়া সত্ত্বেও পূর্ব রেলের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) পার্থসারথী মণ্ডল এবং তাঁর রক্ষী সঞ্জয় সাহানির দেহ উদ্ধার হয়েছে ১২ তলায়, লিফটের ভিতরে। কিন্তু তিনি উপরে কী করতে গেলেন, সেই বিষয়টিও ভাবাচ্ছে পরিবার ও পুলিশকে। যদিও মনে করা হচ্ছে, যেহেতু গোটা অফিসজুড়েই যাতায়াত করতে হত পার্থসারথী বাবুকে, তাই আগুন লাগার সময় তিনি সম্ভবত ১২ তলায় গিয়েছিলেন। তবে, আগুনের সামনে ডেপুটি সিসিএম এবং তাঁর রক্ষীর যে বিশেষ কিছুই করার ছিল না, তা নিয়ে নিশ্চিত দমকলকর্মীরা।

অপরদিকে, দমকলকর্মীরা কেন ওই অবস্থাতে লিফট ব্যবহার করতে গেলেন, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিষয়টি নিয়ে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এতজন দমকলকর্মীর মৃত্যু পরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাঁদের কি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল না? কেনই বা তাঁরা এত বড় অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে লিফটে করে ১৩ তলায় ওঠার চেষ্টা করছিলেন? অগ্নিকাণ্ডে রেলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। এত বড় ঘটনায় দমকলকর্মীরা যখন প্রাণপণে বিল্ডিংয়ের ভিতরে ঢুকে আগুনের উৎসের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন, তখন বিল্ডিংয়ের ম্যাপ বা নকশা কেন তাঁদের দেওয়া হয়নি- এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও মাঝরাতে রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল জানিয়েছেন, রেল কর্তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন, তাঁরা রাজ্য সরকারকে সবরকম সাহায্যও করেছেন।

রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছিলেন, ‘দমকলকর্মীরা লিফট দিয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করছিলেন।’ দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর সঙ্গে কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘সেই সময় একটা বিদ্যুতের ঝলকের মতো আগুনের প্রবল হলকা তাঁদের উপর দিয়ে চলে যায়। তাতেই সম্ভবত তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.