শাড়ি জুড়ে রাম- সীতার কাহিনি! তাও আবার সূক্ষ্ম সুতোর কাজে ফুটিয়ে তুলেছেন বাংলার তাঁতশিল্পী। বইয়ের পাতা থেকে একটা গোটা মহাকাব্য শাড়িতে ফুটিয়ে তোলা আর যাই হোক চারটিখানি কথা নয়! কিন্তু বাঙালি শিল্পীর হাতের জাদুতে এও সম্ভব হয়েছে। আর তার বাজারজাত দাম শুনলে আপনার চোখ কপালে উঠবে বইকী!
দাম আড়াই লক্ষ টাকা। শুনে অবাক হচ্ছেন তো? তা অত দাম হবে নাই বা কেন? এই শাড়ি বুনতে সময় লেগেছে ১ বছরেরও বেশি। রংবেরঙের সুতো দিয়ে কৃত্তিবাসী রামায়ণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন শাড়িতে। শাড়ি বুননের জন্য মজুরি ধরা হয়েছে এক লক্ষ আশি হাজার টাকা। আর এই মহামূল্য শাড়ি যখন বাজারজাত করা হবে, তখন তার দাম যে খানিক হলেও বাড়বে, তা বলাই যায়।
এই মূল্যবাণ শাড়ির শ্রষ্টা রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত তাঁত শিল্পী বীরেন কুমার বসাক। নদীয়া, ফুলিয়ার খ্যাতনামা তাঁতশিল্পীরা এই শাড়ি বুনেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বস্ত্রশিল্পের ইতিহাসে বাংলার শাড়ির স্থান যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা বোধহয় আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীদের রুচি আর চাহিদার সমন্বয়ে তৈরি হচ্ছে বালুচুরি, বেনারসি, বুটিক থেকে জামদানি শাড়ি। সেই দৌড়ে বাংলার ফুলিয়াও কম যায় না। বহু বছর ধরেই টেক্কা দিয়ে আসছে।
বাংলার তাঁতের শাড়ির আঁতুরঘর মানেই গঙ্গার ধারের ফুলিয়ার কথা বলতে হয়। কৃত্তিবাস ওঝার জন্মস্থানও বটে এই ফুলিয়া। ফুলিয়ার বয়রা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলা রামায়ণের স্রষ্টা কৃত্তিবাস। কৃত্তিবাসের জন্মভিটেতে রয়েছে কৃত্তিবাস স্মৃতি গ্রন্থাগার ও সংগ্রহশালা। তার পাশেই রয়েছে একটি বটগাছ। যে বৃক্ষের শীতল ছায়ায় বসে কৃত্তিবাস বাংলায় রামায়ণ অনুবাদ করেছিলেন। সেই মহাকবির জন্মস্থানের তাঁতশিল্পীই শাড়িতে রামায়ণের কাহিনি ফুটিয়ে তুলেছেন…