ব্যাটিংয়ে দলের অন্যতম ভরসা তিনি। সেই ঋষভ পন্ত আবারও চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞান শট খেলে আউট হলেন। তারপর ক্রিজের অপর প্রান্তে থাকা বিরাট কোহলি এমনভাবে পন্তের দিকে তাকান, তাতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে সেই শট একেবারেই ক্ষমার অযোগ্য। কটমট করে তাকিয়ে থাকেন।
রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তৃতীয় একদিনের ম্যাচে ২৮৮ রান তাড়া করতে নেমেছিল ভারত। শুরুতে কেএল রাহুল আউট হয়ে গেলেও ভারতের ইনিংসের হাল ধরেন বিরাট এবং শিখর ধাওয়ান। কিন্তু ২৩ তম ওভারে দু’জনের ৯৮ রানের জুটি ভেঙে যায়। ৬১ রানে আউট হয়ে যান ধাওয়ান। তখন ভারতের স্কোর ছিল ২২.২ ওভারে ১১৬ রান। জয়ের জন্য ২৭.৪ ওভারে ১৭২ রানের প্রয়োজন ছিল। ফলে রানরেট যে লাগামছাড়া হয়ে গিয়েছে, তা মোটেও নয়। অথচ সেই ওভারের শেষ বলে চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলে আউট হয়ে যান পন্ত।
নিজের ইনিংসের প্রথম বলেই স্টেপ-আউট করেন ভারতীয় তারকা। অফসাইডের বাইরের ফুল বলের কাছে পৌঁছাতে পারেননি। কোনওক্রমে শট মারেন তিনি। স্বভাবতই যতটা শক্তি প্রয়োগ করতে চেয়েছিলেন, তা হয়নি। বলও মাঠের বাইরে যায়নি। বরং সুইপার কভারের হাতে বল জমা পড়ে যায়। সেই শটের পর পন্ত যখন ড্রেসিংরুমের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন চোখ বড় বড় করে ভারতীয় তরুণের দিকে তাকিয়ে থাকেন বিরাট। তাঁর চোখের ভাষাই বুঝিয়ে দিচ্ছিল, সেই দায়িত্বজ্ঞানহীন শটের জন্য কতটা বিরক্ত হয়েছেন।
অথচ এই বিরাটই সপ্তাহকয়েক আগে দায়িত্বজ্ঞানহীন শট সত্ত্বেও পন্তের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। পন্তের উপর আস্থা রেখেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তৃতীয় টেস্টে আগে সাংবাদিক বৈঠকে ঋষভের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ শট নিয়ে বিরাট জানিয়েছিলেন, প্রত্যেকেই ভুল করেন। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, নিজের ভুল বুঝতে শেখা। নিজের ভুল স্বীকার করে নেওয়ার বিষয়টি ভালো। ভারতের টেস্ট দলের অধিনায়কের বলেছিলেন, ‘অনুশীলনের সময় ঋষভের সঙ্গে কথা হয়েছে। ব্যাটার নিজেই ভালোভাবে জানেন যে পরিস্থিতি অনুযায়ী, সঠিক শট খেলেছেন কিনা। যতক্ষণ সেই ব্যক্তি নিজের দায়িত্ব বুঝতে পারে, (ততক্ষণ বিষয়টা ঠিক আছে)। আমার মতে, নিজেদের কেরিয়ারে সকলেই ভুল করেন। কেরিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ সময় আমরা সকলে ভুল করেছি। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আউট হয়ে গিয়েছে। কখনও ভুল শট খেলে আউট হয়েছি। কখনও চাপের মুখে আউট হয়ে গিয়েছি। কখনও বোলার ভালো বল করেছে।’ সঙ্গে বলেছিলেন, ‘আমার কেরিয়ারের শুরুতে মহেন্দ্র সিং ধোনি একবার বলেছিলেন যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যদি দীর্ঘদিন খেলে যেতে চাও, তাহলে দুটি ভুলের মধ্যে কমপক্ষে সাত-আট মাসের ফারাক থাকতে হবে। তা আমার মধ্যে গেঁথে নিয়েছি যে আমি একই ভুল বারবার করব না। এটা তখনই হয়, যখন আপনি আপনার ভুল নিয়ে কাটাছেঁড়া করেন।’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তৃতীয় টেস্টেই বিরাটের সেই আস্থার মর্যাদা রেখেছিলেন পন্ত। দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত শতরান করেছিলেন। একদিনের সিরিজেও দ্বিতীয় ম্যাচে পরিণত মনোভাবের পরিচয় দিয়ে ৮৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে রানরেটের প্রবল চাপ না থাকলেও চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলেন পন্ত। সেজন্য প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়কেরও রোষের মুখে পড়েছেন।