সদ্য প্রমোশন পাওয়া সি পি সাহেবের পুলিশ কিম্বা এডভোকেট জেনারেল কেউতো মিথ্যে বলছেন । কে ঠিক বলছেন বলুন ?

কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র প্রমোশন পেলেন । কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে কাজ করার জন্য । পুলিশ কমিশনার পদে থাকলেন কিন্তু পদ মর্যাদায় এ ডি জি থেকে ডি জি হলেন ১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২১ থেকে । পদমর্যাদা বাড়ল, মাইনেও যথেষ্ট বাড়ল । ( নীচে সেই বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপি দিলাম) ।

অভিনন্দন সি পি সাহেব ।

সি পির এই উন্নতি ভালো লাগলো আরও এই কারণে বাংলায় যখন সরকারি চাকরি নেই বললেই চলে, ডি এ পেতে আদালতে মাথা খুঁড়তে হচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের, এক লক্ষ ৩০ হাজার চুক্তি ভিত্তিক শিক্ষক নাম মাত্র দক্ষিনায় দিন কাটাচ্ছেন, কেউবা বিকাশ ভবনের সামনে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন ঠিক সেই সময় একজন মানুষের মাইনেতো অন্তত যথেষ্ট বাড়লো । তাই অনেক দুঃখের মধ্যেও এই ভালো লাগা । বুঝলেন সি পি সাহেব ।

সি পি সাহেবের পদ মর্যাদা বাড়ার আনন্দদায়ক এই খবরটা যখন বিশেষ সূত্রে পেলাম ঠিক তার আগের রাতে তাঁর অধীনস্থ বেলেঘাটা থানার অমর কীর্তিটাও চাক্ষুষ করলাম । শিক্ষক নেতা মহিদুল ইসলামের শ্বশুর বাড়িতে বেলেঘাটা থানা ও বিধাননগর থানার প্রায় ২০০ জনের বাহিনী রাত ১২ টায় হানা দিল । জঙ্গী ধরার কায়দায় সারা বাড়ি ঘিরে রাইফেল আর রিভলবারের শাসানি হল ।……. নেমে আয় । এখনই নেমে আয় তুই । তোর নামে ওয়ারেন্ট আছে । তোকে এখনই এরেস্ট করব ।

এই যখন চলছে মইদুল সঙ্গে সঙ্গেই বুদ্ধি করে ঘটনাটা লাইভ করতে শুরু করলেন । সঙ্গে সঙ্গেই নিমেষে পুলিশের ভাষাটাও বদলে গেল – আপনি এখনই নেমে আসুন । না হলে দরজা ভাঙব ।
রাত তখন প্রায় ১ টা বেজে গেছে । মইদুল বলল আমি জঙ্গী নই, তালিবানও নই । আমি আপনাদের সঙ্গেই থানায় যাব, তবে এখন নয় সকালে । আপনারা আসবেন । যাব ।

তীব্র বাদানুবাদ চলল এভাবেই, শেষে শাসানি শুরু হল । সৌমেন মিত্রর পুলিশের । পুলিশের চিৎকার – আপনি সরকারি কাজে বাধা দিচ্ছেন । কিসের বাধা ? না এক ডাকে দরজা খুলে থানায় যাচ্ছেন না সেটাই বাধা । মইদুল বললেন আপনারা যা বলছেন তাই করুন । দরজা ভেঙে নিয়ে যান । আমি উগ্রপন্থী নই, আমি মাস্টার ।

শেষ পর্যন্ত পুলিশ আর সে কাজ করেনি । সজল ঘোষের দরজা ভেঙে হাত পড়ানো কলকাতা পুলিশ সারাটা রাত দাঁড়িয়ে কাটল বেলেঘাটার চাউল পট্টির মইদুলের শ্বশুর বাড়ির সেই সরু গলিতে । ডাকাত ধরা আর হল না ।

এদিকে দিনের বেলায় কলকাতা হাইকোর্টে মইদুলের হয়ে মামলা উঠল । সরকারের এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত সততার সঙ্গে মহামান্য বিচারপতিকে বললেন মইদুল ইসলামকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ যায়নি । গিয়েছিল শুধু জিজ্ঞাসাবাদের নোটিশ ধরাতে । আর তাছাড়া মইদুলের বেলেঘাটার বাড়ির সামনে কোন পুলিশ এখন আর নেই ।

কলকাতা হাইকোর্ট থেকে বাড়ি ফিরে মইদুল ইসলামের স্ত্রী ও শিক্ষক আন্দোলনের কয়েকজন নেত্রী আবিষ্কার করলেন বাড়ির পাশের নির্মীয়মান ফ্ল্যাটের তলায় ঘাপটি মেরে বসে রয়েছেন কলকাতা পুলিশের গুন্ডা দমন শাখার প্লেন ড্রেসের সব পুলিশ । সেই দৃশ্য দেখে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা উত্তেজিত হন । সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার এবং ফেসবুক লাইভ করায় তাঁরা কিছুটা দূরে পিছ টান দেন । কিন্তু এলাকা ছাড়েননি ।

এখন যখন এই প্রতিবেদন লিখছি এখন রাত প্রায় ১ টা ২০ । ২৪ ঘণ্টা অতিক্রান্ত । ফোন করলাম মইদুলকে । জানলাম এখনও বেলেঘাটা থানার পুলিশ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে গলির মুখে । কলকাতা পুলিশের লোকজনের ভিড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে এলাকায় । মইদুল কে তাঁদের চাই ।

এই চাওয়ার পেছনের কলকাতা পুলিশের খিদেটা আসলে কেন ? প্রশ্নটা উঠতেই পারে । মইদুল কি জঙ্গী ? তালিবান ? আল কায়দা ? জামাতী ? যে রাত বারোটায় তাঁর বাড়িতে প্রায় ২০০ পুলিশের দল বল নিয়ে ঝাঁপাতে হবে ?

উত্তরটা খুব পরিষ্কার । মইদুল আসলে এই সরকারের শিক্ষা নীতিটাকে এক্সপোজ করে দিচ্ছেন বেশ কিছু দিন ধরে বুদ্ধি করে । এক লক্ষ ৩০ হাজার চুক্তি ভিত্তিক শিক্ষকদের নবান্ন যে প্রতারিত করছেন সেটা নানান অভিনব উপায়ে ফোকাস করছেন । এক কথায় ঘোল খাইয়ে দিচ্ছেন একাই মইদুল । এখানেই রাগ মমতার । আমাকে চ্যালেঞ্জ ? এত সাহস ?

তাই পুলিশ লেলিয়ে দাও । পাকড়ে আন । নির্দেশ অনুযায়ী সেভাবেই কাজ করছেন সৌমেন মিত্রর বাহিনী । সব কাজ ছেড়ে, চোর ডাকাত না ধরে মইদুলটাকে ধর । চোর ডাকাত তো মধ্যবিত্তের ঘরের সিঁদ কাটে, মইদুল তো সরকারের শিক্ষা নীতিকে ল্যাংটো করে । সয় কারুর ? সয়নি, তাই এই রাত দুটো তেও আবারও খবর এল আজ বেলেঘাটার চাউল পট্টির গলির মুখে কলকাতা পুলিশের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে ।

কি হবে, মইদুলও এখনও জানে না । আজও রাত জাগছে সে পুলিশ যে কোন মুহুর্তে ঝাঁপাবে জেনে । কাল রবিবার আদালত বন্ধ । এই অঙ্কে খেলছে হয়তো পুলিশ, সৌমেন মিত্রর বাহিনী । আজ্ঞা পালন করে ।

এই যখন পরিস্থিতি তখন জানলাম কি অনায়াসে কলকাতা হাইকোর্টে এডভোকেট জেনারেল বিচারপতি রাজকুমার মান্থাকে জানিয়েছেন বেলেঘাটা পুলিশ নাকি মইদুলকে এরেস্ট করতে যায়নি । গিয়েছিল শুধু নোটিশ সার্ভ করতে ।

ভাবুন রাত ১২ টায় ২০০ জনের বিশাল বাহিনী নিয়ে নোটিশ সার্ভ করতে যায় কলকাতা পুলিশ । (এডভোকেট জেনারেলের বক্তব্য যদি সঠিক হয়) ।

সরকারের তরফ থেকে আদালতকে এও জানানো হয়েছে, মইদুলের বাড়ির সামনে নাকি কোন পুলিশ নেই । প্রশ্ন – বিকেলে শিক্ষিকারা তাহলে তাড়া করে তাড়ালেন কাদের ? ২৪ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরও বেলেঘাটা চাউল পট্টির গলির মুখে আজ এই গভীর রাতেও নীল সাদা স্করপিওগুলো তাহলে কাদের ? গলিতে যে লোকগুলো জমাট বেঁধে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে তাঁরা তাহলে কারা ?

কে উত্তর দেবে এত সব প্রশ্নের ? সদ্য প্রমোশন পাওয়া সি পি সাহেবের পুলিশ কিম্বা এডভোকেট জেনারেল কেউতো মিথ্যে বলছেন । কে ঠিক বলছেন বলুন ?

লন্ডন হতে চাওয়া এই কলকাতা শহরে গরু পাচার, কয়লা পাচার, সোনা পাচারে বড় হওয়া ভাইপোরা পুলিশি নিরাপত্তায় ঘুমোবে । আর আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে মইদুলদের মত শিক্ষকদের রাত জাগতে হবে দুয়ারে পুলিশ দাঁড়িয়ে দরজা ভাঙবে বলে ।

এই ব্যবস্থা বলবতের জন্যইতো বড় কর্তাদের প্রমোশন হয়, মাইনে বাড়ে, আর শিক্ষকদের বিষ খেয়ে আই সি সি ইউতে যেতে হয় ।

বোঝা গেল ? নীচের বিজ্ঞপ্তিতে চোখ রাখুন, বুঝবেন ।।

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.