প্রায় ৯০ বছর আগে টাটার হাত ধরেই প্রথম উড়েছিল এই সংস্থার বিমান। তখন মাম ছিল টাটা এয়ারলাইন্স। পরে সেটারই নাম বদলে হয়ে যায় এয়ার ইন্ডিয়া। এবার সেই এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা পেতে পারে রতন টাটার সংস্থা। সর্বোচ্চ বিডে বাজিমাত করেছে টাটা সন্স। টাটা সন্সের জমা দেওয়া দরপত্রটি গ্রাহ্য হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন প্যানেল সেই দরপত্র গ্রহণ করেছে বলে সূত্রের খবর। তবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও ঘোষণা করা হয়নি।
টাটা ছাড়াও আর এক বেসরকারি বিমান সংস্থা স্পাইস জেটের কর্ণধার অজয় সিংহ এয়ার ইন্ডিয়ার শেয়ার কেনার জন্য দরপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু টাটাদের বিড সেই দরপত্রকে ছাপিয়ে যায়। তাই শেষ পর্যন্ত রতন টাটার দরপত্রেই ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। সেই মতো দরপত্র জমা নেওয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্রের তরফে কেউ এখনও এই বিষয়ে মুখ খোলেনি। টাটার তরফেও কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
বছরের পর বছর লাভের মুখ দেখেনি এয়ার ইন্ডিয়া। কার্যত ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়েছিল। এ ভাবে সংস্থা আর চালানো সম্ভব হচ্ছিল না সরকারের পক্ষে। এর আগেও অনেক সময় এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, তবে কোনও সরকারই সফল হয়নি। কনও রাজনৈতিক বিরোধিতায় আটকে গিয়েছে বিক্রি, আবার কখনও ক্রেতা পাওয়া যায়নি। তাই ঋণগ্রস্ত সংস্থাকে বাঁচাতে মোদী সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটা তার অন্যতম সাফল্য বলা যেতে পারে।
টাটার পুরনো সম্পদ এয়ার ইন্ডিয়া:
৯০ বছর আগে যে সম্পদ টাটার ছিল, কার্যত সেটাই আবার ফিরে যাচ্ছে তাদের হাতে। ভারতে প্রথম লাইসেন্স প্রাপ্ত পাইলট ছিলেন জেআরডি টাটা। তাঁর হার ধরেই প্রতিষ্ঠা হয় টাটা এয়ারলাইনসের। ১৯৩০-এ প্রথমবার সংস্থা বিমান ওড়ায়। তৎকালীন অবিভক্ত ভারতে মুম্বই থেকে করাচি উড়েছিল সেই বিমান। পরে বাণিজ্যিক সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। পরে সেই সংস্থার নাম বদলে হয় এয়ার ইন্ডিয়া। যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই উড়ান সংস্থা।
পরে বেসরকারি উড়ান সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়া। দেশে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা হারায় এই সংস্থা। কারণ তুলনামূলকভাবে সস্তায় ওড়ার সুযোগ করে দেয় আরও অনেক সংস্থা।
২০০৭-এর ‘ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনস লিমিটেড’-এর সঙ্গে যুক্ত হয় এয়ার ইন্ডিয়া। কিন্তু কোনওভাবেই লাভের মুখ দেখানো সম্ভব হচ্ছিল না এই সংস্থাকে। ২০২৩-তে ইউপিএ সরকারের আমলেও এই সংস্থার বেসরকারিকরণের কথা ভাবা হয়। টাটা গ্রুপের হাতে বর্তমানে রয়েছে দুটি উড়ান সংস্থা- এয়ার এশিয়া ও ভিস্তারা। তবে এয়ার ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রে পুরনো আবেগ রয়েছে টাটার। তাই তারা যে কোনও মূল্যেই মালিকানা পেতে চাইবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।