পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় নিহত কানপুরের ব্যবসায়ী শুভম দ্বিবেদীর জন্য ‘শহিদ’ তকমা চাইছেন তাঁর স্ত্রী অশন্যা। তিনি জানিয়েছেন, পহেলগাঁওয়ে তাঁর স্বামী মৃত্যুর সময়ে অনেককে বাঁচার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তাই তাঁকে শহিদের মর্যাদা দেওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, অশন্যা বলেছেন, ‘‘আমার স্বামী নিজের জীবন বিপন্ন করে অনেকের প্রাণ বাঁচিয়ে দিয়েছেন। তিনি ধর্মপরিচয় বলতে সময় নিয়েছিলেন। জঙ্গিদের প্রথম বুলেটটা আমার স্বামীর গায়েই লেগেছিল। আমি সরকারের কাছে আর কিছু চাই না। শুধু শুভমকে শহিদের স্বীকৃতি দিতে হবে। সরকার যদি আমার এই কথাটুকু রাখে, আমি বাঁচার কারণ খুঁজে পাব।’’
৩১ বছরের শুভম সদ্য বিয়ে করেছিলেন। অশন্যার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় গত ১২ ফেব্রুয়ারি। পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় সস্ত্রীক ঘুরতে গিয়েছিলেন তিনি। জঙ্গিদের গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁর। অশন্যা জানিয়েছেন, জঙ্গিরা এসে তাঁদের ধর্মপরিচয় জিজ্ঞাসা করেছিল। প্রথমে তিনি বুঝতেই পারেননি, তাদের উদ্দেশ্য কী। ভেবেছিলেন, কেউ মনে হয় মজা করছেন। তাঁরাও তাই ঘুরিয়ে উত্তর দিচ্ছিলেন। এতে বেশ কিছুটা সময় যায়। অনেকে সতর্ক হয়ে তখনই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
সে দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে গলা ধরে আসে অশন্যার। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ধর্মপরিচয় জানতে কিছুটা সময় নিয়েছিল জঙ্গিরা। ধর্মপরিচয় জিজ্ঞাসা করেছিল। আমি ভেবেছি, কেউ মনে হয় মজা করছে। আমি পিছন ঘুরে হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করি, কী চলছে? কিন্তু ওরা আবার একই প্রশ্ন করে। আমি যেই মাত্র ধর্মপরিচয় বলেছি, ওরা সঙ্গে সঙ্গে গুলি চালিয়ে দিল। আমার সব শেষ হয়ে গেল। শুভমের পুরো মুখটা রক্তে ভরে উঠল আমার চোখের সামনে। আমি বুঝতেই পারিনি কী হল!’’
অশন্যা জানিয়েছেন, জঙ্গিদের কাছে গিয়ে তিনি অনুরোধ করেছিলেন, তাঁকেও যেন মেরে ফেলা হয়। কারণ স্বামীকে ছাড়া তিনিও বেঁচে থাকতে চাননি। তবে জঙ্গিরা সেই আবেদন ফিরিয়ে দেয় এবং জানায়, তারা কী করেছে তা সরকারকে গিয়ে বলতে। অশন্যার কথায়, ‘‘ধর্মপরিচয় জিজ্ঞাসা করে যারা গুলি চালায়, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। আমার স্বামী প্রাণ দিয়ে অনেকের বাঁচার সুযোগ করে দিয়েছেন। ওঁকে শহিদের মর্যাদা দেওয়া উচিত।’’
গত বৃহস্পতিবার পহেলগাঁও থেকে কানপুরে ফেরে শুভমের দেহ। সেখানেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। পহেলগাঁওয়ে মোট ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে জঙ্গিদের গুলিতে। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং এক জন নেপালি নাগরিক।