সুকান্তসদনের বৈঠকে ‘সমন্বয়’ তৈরির চেষ্টা, সৌমিত্রের প্রশংসা, সৌমেন্দুর ত্রাণ করে সাংসদদের সরব হওয়ার পরামর্শ শুভেন্দুর

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর বাসভবনে না পৌঁছনো পর্যন্ত সোম-সন্ধ্যার বৈঠক শুরুই করলেন না বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ফুলের তোড়া হাতে সুকান্তের বাসভবনে ঢুকলেন শুভেন্দু। বৈঠকে রাজ্য বিজেপির দুই শীর্ষনেতা পাশাপাশি বসলেন। প্রায় কোনও প্রসঙ্গেই একে অপরের বক্তব্যকে খণ্ডন করলেন না। বরং বঙ্গ বিজেপির সাংসদদের ভূমিকা এই মুহূর্তে সংসদে কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে বিশদে পরামর্শ দিলেন। সুকান্তের বাড়ির সামনের লনে ব্যাডমিন্টন খেলা এবং নৈশভোজ— সৌজন্যের আতিশয্যে বঙ্গ বিজেপির দুই শীর্ষনেতার মধ্যে ‘সমন্বয়ের’ ছবি ফুটিয়ে তোলার সব বন্দোবস্ত ছিল দিল্লির বৈঠকে।

বৈঠক শুরুর কথা ছিল সন্ধ্যা ৬টায়। নির্ধারিত সময়ের আশেপাশেই একে একে সাংসদেরা পৌঁছতে শুরু করেন সুকান্তের বাসভবনে। তবে শুভেন্দু তখনও পৌঁছননি। ফলে বৈঠক শুরু হওয়ার প্রশ্ন ছিল না। তাই বাংলোর ভিতরে না ঢুকে সামনের পাঁচিলঘেরা সবুজ চত্বরেই ইতিউতি সময় কাটাচ্ছিলেন বঙ্গ বিজেপির একাধিক সাংসদ। সুকান্ত নিজেও বেরিয়ে আসেন বাংলো থেকে। ব্যাডমিন্টন কোর্টে চলে যান সকলকে নিয়ে। শুরু হয় খেলা। এক পক্ষে সুকান্তর সঙ্গে বঙ্গ বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতো। অন্য দিকে বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ এবং রায়গঞ্জের সাংসদ কার্তিক পাল। দর্শক হিসেবে দু’দিকে দাঁড়িয়ে রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার এবং আলিপুরদুয়ারের সাংসদ মনোজ টিগ্গা।

Bengal BJP’s Coordination effort at Delhi Meeting, Sukanta-Suvendu advices MPs to be more vocal in Parliament

৬টা ৩৫ নাগাদ সুকান্তর বাসভবনে পৌঁছন শুভেন্দু। হাতে সুকান্তর জন্য গেরুয়া ফুলের তোড়া। শুভেন্দু পৌঁছতেই সাংসদরা বাংলোর ভিতরে ঢুকে যান। সুকান্তের বৈঠকখানায় শুরু হয় বৈঠক। ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়দের পাশাপাশি ‘বৈঠকখানা’য় হাজির ছিলেন দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা, জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়, কাঁথির সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারী, উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মু এবং রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। বাংলার সাংগঠনিক পরিস্থিতির পাশাপাশি লোকসভা এবং রাজ্যসভায় বঙ্গ বিজেপির সাংসদদের মধ্যে কে কতটা সরব হচ্ছেন, তা নিয়ে বৈঠকে চর্চা হয়। কে সংসদে কতটুকু বলার সময় পাচ্ছেন, বিজেপি সাংসদদের যদি কম সময় দেওয়া হয়ে থাকে, তা হলে তার কারণ কী— ইত্যাদি বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। রাজ্যসভায় শমীকের তোলা কিছু ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বিষয় নিয়েও কিছু কথা হয়। তবে বঙ্গ বিজেপির সব সাংসদকে আরও বেশি করে সংসদে ‘সরব’ হতে হবে বলে বার্তা দেওয়া হয় বৈঠকে।

Bengal BJP’s Coordination effort at Delhi Meeting, Sukanta-Suvendu advices MPs to be more vocal in Parliament

লোকসভায় সৌমিত্রের ভূমিকা বৈঠকে প্রশংসিত হয়েছে। সৌমিত্র বিভিন্ন বিষয়ে সংসদে সরব হন, তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। সে কারণেই সম্ভবত প্রশংসা। শুভেন্দুই মূলত সৌমিত্রের সেই ‘ভূমিকা’র কথা তোলেন। তিনি জানান, লোকসভায় সৌমিত্রর ‘রোল’ ভাল। অনেক বিষয়ে তিনি ভাল সোচ্চার হন। বলেই পাশে বসা সুকান্তের দিকে তাকান শুভেন্দু। সুকান্তও মাথা নেড়ে সায় দেন। এর পরেই শুভেন্দু অন্য সাংসদদের প্রশ্ন করেন, তাঁরা কেন কিছু বলছেন না? দার্জিলিঙের সাংসদ বিস্তা কিছু বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু শুভেন্দু ততক্ষণে ফের বলতে শুরু করায় বিস্তা থেমে যান। বিস্তার পাশেই বসেছিলেন শুভেন্দুর ছোটভাই তথা কাঁথির সাংসদ সৌমেন্দু। দাদার প্রশ্নের মুখে তাঁকে কিছুটা ‘অপ্রস্তুত’ দেখাচ্ছিল। কিন্তু ভাইকে উদ্ধারও করেন দাদা। শুভেন্দু বলেন, সৌমেন্দু এখন না হয় দেখছেন-বুঝছেন। এক বছর পরে শুরু করবেন। বাকি তো সকলেই সিনিয়র! ফলে তাঁদের আরও বেশি সরব হওয়া উচিত।

বৈঠক শেষে সুকান্ত সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রী হিসেবে দিল্লিতে একটা বড় বাড়ি পেয়েছি। তার সদ্ব্যবহার করছি। দিল্লিতে আপাতত এটাই বঙ্গ বিজেপির দফতর। এ বার থেকে প্রত্যেক অধিবেশনেই এক বার করে এখানে আমরা বাংলার সাংসদরা বৈঠক করে নেব।’’ সংসদে নতুন সাংসদদের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে সোম-সন্ধ্যার বৈঠকে কথা হয়েছে বলে সুকান্ত জানান। যাঁরা অভিজ্ঞ সাংসদ, তাঁদের কাছ থেকে নতুনেরা যাতে শিখতে পারেন, সে বিষয়েও কথা হয়েছে বলে সুকান্ত জানান। তিনি বলেন, ‘‘সাংগঠনিক বিষয় নিয়েও সাংসদদের কাছ থেকে কিছু পরামর্শ উঠে এসেছে। পরবর্তী সাংগঠনিক বৈঠকে সে সব পরামর্শ নিয়ে আলোচনা হবে।’’

তবে বঙ্গ বিজেপির সভাপতিত্বে সুকান্তর দ্বিতীয় মেয়াদ ‘নিশ্চিত’ হয়ে যাওয়ায় তাঁর দিল্লির বাসভবনে এই জমায়েত কি না, সে প্রশ্নের মুখেও সুকান্তকে এ দিন পড়তে হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা যে ভাবে খুশি দেখতে পারেন। যে ভাবে আপনারা ভাবছেন, সে ভাবেও দেখতে পারেন। আবার বিদায় সংবর্ধনা হিসেবেও দেখতে পারেন। আমার কাছে দুটোই সমান।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.