ঠাসাঠাসি ভিড়, ঝগড়া ও বন্ধুত্বের ১০০ বছর, সেঞ্চুরি লোকাল ট্রেনের! জন্মদিনে হাওড়ার যাত্রীদের ‘উপহার’

ঠাসাঠাসি ভিড়। মাঝে মাঝেই মনোমালিন্য। তবে তার মধ্যেও সহযাত্রীদের মধ্যে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। একই সময়ে নির্দিষ্ট স্টেশনে কোনও যাত্রী ওঠামাত্র হাসি খেলে যায় সহযাত্রীর মুখে। গল্প জমে, ঝগড়া হয়। এ ভাবেই শহরের সঙ্গে শহরতলি, মফস্‌সল এবং গ্রামের যোগাযোগ তৈরি হয়। প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ মানুষ রুটিরুজির তাগিদে লোকাল ট্রেন চেপে শহরে আসেন এবং যান। সৌজন্যে লোকাল ট্রেন। যার যাত্রার ১০০ বছর পূর্ণ হল ৩ ফেব্রুয়ারি। সেই উপলক্ষে হাওড়া স্টেশনে একটি অত্যাধুনিক লোকাল ট্রেনের উদ্বোধন করলেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার মিলিন্দ দেওসকর।

অফিসযাত্রীদের সুবিধার জন্য দেশে প্রথম লোকাল ট্রেন চলে মুম্বইয়ে। ১৯২৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বম্বের ভিক্টোরিয়া টার্মিনাস থেকে কুরলা পর্যন্ত লোকাল ট্রেন চালানো হয়। পরে পূর্ব, পশ্চিম এবং উত্তর রেলওয়ে জ়োনেও ইএমইউ পরিষেবা শুরু হয়েছে। আর পাঁচের দশকের শেষ দিকে শুরু হয় পূর্ব রেলের লোকাল ট্রেন চলাচল। প্রথম লোকাল ট্রেন পরিষেবা শুরু হয় হাওড়া এবং শেওড়াফুলি জংশনের মধ্যে। এখন শুধু পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনেই ৯ লক্ষ নিত্যযাত্রী যাতায়াত করেন। লোকাল ট্রেনের ১০০ বছর পূর্তিতে মঙ্গলবার হাওড়া স্টেশনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার মিলিন্দ দেওসকর। তিনি বলেন, ‘‘গত ১০০ বছরে লোকাল ট্রেনের পরিষেবার বিস্তর উন্নতি হয়েছে। যাত্রীবহন ক্ষমতা বেড়েছে। প্রায় একশো শতাংশ বৈদ্যুতিক লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

তবে এখনও যে আরও অনেক দূর যেতে হবে লোকাল ট্রেনকে, সে কথাও জানান পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার। তাঁর কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন চলাচলের জন্য ট্র্যাক এবং সিগন্যাল সিস্টেমের উন্নতির প্রয়োজন। ইতিমধ্যে সেই কাজে হাত দিয়েছি আমরা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কল্যাণী-রানাঘাট রুটে তৃতীয় লাইনের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে ট্রেনের গতি আরও বাড়বে।’’ বস্তুত, পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনে লোকাল ট্রেন দেরিতে চলে বলে নিত্যযাত্রীদের ক্ষোভ রয়েছে। ‘অফিস টাইম’-এ ট্রেনের দেরি নিয়ে বিক্ষোভ পর্যন্ত হয়েছে। সেই সমস্যা কাটাতে কতটা উদ্যোগী রেল? পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার বলেন, ‘‘বেনারস রোড রেলব্রিজ় এবং চাঁদমারি রেলব্রিজ তৈরি হওয়ার কারণে প্রচুর লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ট্রেন লেভেল ক্রসিং পার করার সময় একটু বেশি সময় নিচ্ছে। তবে এই সমস্যা বেশি দিন পোহাতে হবে না। যাত্রীদের সুবিধার্থেই তো ট্রেনের পরিকাঠামোর উন্নতি হচ্ছে। নতুন লাইন এবং সিগন্যাল সিস্টেমের কাজ চলছে। অত্যাধুনিক ‘থ্রি ফেজ়’ ইএমইউ লোকাল ট্রেন আনা হচ্ছে, যাতে বন্দে ভারত ট্রেনের মতো দ্রুত গতির ট্রেন চালানো সহজতর হয়।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.