BJP: রাজ্য কমিটিতে বড়সড় বদলের অপেক্ষায় বিজেপি, দিল্লির সিলমোহর মিললেই ঘোষণার সম্ভাবনা

সুকান্ত মজুমদার রাজ্য বিজেপি সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন ২০ সেপ্টেম্বর। তার পর দু’মাস পার হয়ে গেলেও নতুন রাজ্য কমিটি ঘোষণা হয়নি। নতুন কমিটিতে কারা জায়গা পেতে পারেন তা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই জল্পনা চলছে। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, কিছু দিনের মধ্যেই সব জল্পনার ইতি হতে পারে। এখন দিল্লি সফরে রয়েছেন সুকান্ত। গিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীও। মূলত নতুন রাজ্য কমিটি চূড়ান্ত করার কাজেই সুকান্ত, অমিতাভদের রাজধানী সফর বলে জানা গিয়েছে। রাজ্য বিজেপি সূত্রে এমনটাও জানা গিয়েছে, দু’এক দিনের মধ্যেই পদ্মের সাংগঠনিক প্রধান তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষের সঙ্গে বৈঠক করবেন সুকান্ত। সেই বৈঠকে অমিতাভেরও থাকার কথা। সেখানে নতুন তালিকা নিয়ে আলোচনার পরে তা নিয়ে কথা হবে সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার সঙ্গে। আগামী শনি-রবিরার সেই বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা। সেটা হয়ে গেলেই ঘোষণা হতে পারে নতুন রাজ্য কমিটি।

তৃণমূল থেকে যাঁরা বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি-তে এসেছিলেন তাঁদের অনেকেই পুরনো দলে ফিরে গিয়েছেন। দলের টিকিটে জয়ী মুকুল রায়-সহ পাঁচ জন বিধায়ক চলে গিয়েছেন শাসক শিবিরে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য বিজেপি-র কাছে বড় চ্যালেঞ্জ নতুন কমিটি গড়া। কারণ, গেরুয়া শিবির এমন কাউকে রাজ্য কমিটিতে আনতে চাইছে না যাঁরা দলবদল করে বিজেপি-র মুখ পোড়াতে পারেন। তাই বেশি করে আরএসএস অনুগামীদের নতুন কমিটিতে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকে।

বিজেপি-র সংবিধান অনুযায়ী, দলের রাজ্য সভাপতির পদ নির্বাচনভিত্তিক এবং তার মেয়াদ তিন বছরের। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক জন একটানা দু’দফায় মোট ছ’বছর সভাপতি থাকতে পারেন। সেই কারণেই দিলীপকে সরিয়ে সুকান্তকে আনা হয়। তবে অনেক সময় নির্বাচন ছাড়াও সভাপতি বদলের সংস্থান রয়েছে বিজেপি-র সংবিধানে। তেমন করেই এসেছিলেন দিলীপ। পরে সাংগঠনিক নির্বাচনে জিতেও তিনি সভাপতি থেকে যান। একই পদ্ধতিতে সুকান্তকে মনোনীত করেছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্য সভাপতি বদল হলে তিনি নিজের মতো করে রাজ্য কমিটির বিভিন্ন পদাধিকারীদের বেছে নিতে পারেন। বদল করতে পারেন জেলা কমিটিও। এখন সেটাই হতে চলেছে বলে খবর।

২০২১ সালের নির্বাচনে নবান্ন দখলের লক্ষ্যে দল সাজিয়েছিল বিজেপি। ভোটের আগে আগেই সংগঠনে অনেক রদবদল দেখা গিয়েছিল। তবে সেই দল আশানুরূপ ফল দিতে পারেনি। বিজেপি সূত্রে খবর, এ বার প্রস্তুতি ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে। শিয়রে কলকাতা ও হাওড়ার পুরভোট। তার পরে রাজ্যের অন্যান্য পুরসভা ও পঞ্চায়েতেও নির্বাচন রয়েছে। তাই সময় থাকতেই নতুনদের হাতে দায়িত্ব দিতে চান কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

বিজেপি-র রাজ্য সংগঠনে সভাপতির পরেই গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদক। এখন ওই পদে রয়েছেন পাঁচ জন— কলকাতার সায়ন্তন বসু, হাওড়ার সঞ্জয় সিংহ, হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো এবং উত্তরবঙ্গের নেতা রথীন্দ্রনাথ বসু। এর মধ্যে অন্তত তিন জনকে তুলনায় কম গুরুত্বের পদে সরানো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ থেকে একাধিক নেতাকে ওই পদে আনা হতে পারে। বিজেপি-র অন্দরের আলোচনা অনুযায়ী, সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন উত্তরবঙ্গের নিখিলরঞ্জন দে ও অজিত দাস। প্রথম জন কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক এবং দ্বিতীয় জন এখন বিজেপি তফসিলি মোর্চার রাজ্য সভাপতি। উল্লেখ্য, এঁরা দু’জনেই আরএসএস এবং বিদ্যার্থী পরিষদ থেকে বিজেপি-তে আসেন। বড় দায়িত্ব পাওয়ার দৌড়ে আছেন বিদ্যার্থী পরিষদের আর এক প্রাক্তনী দেবজিৎ সরকার। তিনি অতীতে যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ছিলেন। বড় পদ পেতে পারেন জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়। রাজ্য সংগঠনে গুরুত্ব বাড়তে পারে সহ-সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়েরও।

রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদে মহিলা মুখ হিসেবে লকেট থাকবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি এটাও আলোচনা চলছে যে, পরবর্তী কমিটিতে কে আসবেন? মহিলা মুখ হিসাবে অনেকেই এগিয়ে রাখছেন মালদহের ইংরেজবাজারের বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীকে। তবে সম্প্রতি তিনি মহিলা মোর্চার সর্বভারতীয় কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। সে ক্ষেত্রে আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল জায়গা পেতে পারেন। যে ভাবে লকেট মহিলা মোর্চার সভানেত্রী পদ থেকে বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। এই তালিকায় রয়েছেন দলের কোচবিহার জেলার সভাপতি তথা তুফানগঞ্জের বিধায়ক মালতি রাভা রায়ও। তবে অগ্নিমিত্রাকে সাধারণ সম্পাদক করা হলে মহিলা মোর্চার সভানেত্রী বাছতে হবে। শোনা যাচ্ছে, এই পর্বে যুব শাখার সভাপতি পদ থেকে সরতে হতে পারে বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁকে। তাঁকে রাজ্যে সহ-সভাপতি করে সেই জায়গায় নতুন মুখ হিসেবে জায়গা পেতে পারেন হুগলির পুড়শুরার বিধায়ক বিমান ঘোষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.