রাষ্ট্রগুরুর প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা — ভারতীয় ডাকটিকিটে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপা

রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (১০ ই নভেম্বর, ১৮৪৮ — ৬ ই আগষ্ট, ১৯২৫) ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অন্যতম উদগাতা। সুরেন্দ্রনাথ কলকাতার তারাতলায় জন্মগ্রহণ করলেও ১৮৮০ খ্রীস্টাব্দ নাগাদ পৈতৃকবাড়ি বারাকপুরের মণিরামপুরে বসবাস শুরু করেন। সুরেন্দ্রনাথ মনিরামপুরের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯২৫ সালে মহাত্মা গান্ধী দুইবার মণিরামপুরের বাড়িতে আসেন, ৬ ই মে এবং পরে সুরেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরদিন অর্থাৎ ৭ ই আগষ্ট। মহাত্মা গান্ধী তাঁকে ‘বারাকপুরের ঋষি’, ‘বাংলার সিংহ’ নামে আখ্যায়িত করেন। রবীন্দ্রনাথ সুরেন্দ্রনাথের নেতৃত্বের উচ্চ প্রশংসা করেছিলেন। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মিস্টার নরিস একটি মামলায় আদালতে গৃহদেবতাকে আনার নির্দেশ দেন। হিন্দু ধর্মের দেবতার প্রতি খ্রিস্টান সাহেবের এমন নির্দেশে প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁর সম্পাদিত ‘বেঙ্গলী’ পত্রিকায় লেখেন ১৮৮৩ সালের ২ রা মে। ফলে আদালত অবমাননার দায়ে তাঁকে কারণ দর্শাতে বলা হয়। পক্ষপাতদুষ্ট আদালতের নির্দেশে সুরেন্দ্রনাথকে দুই মাসের জেল খাটতে হয় (৫ ই মে থেকে ৪ ঠা জুলাই, ১৮৮৩)। মুক্তিলাভের পর ফ্রী চার্চ কলেজ প্রাঙ্গনে একটি সংবর্ধনা সভার আয়োজন হয়, সেখানে রবীন্দ্রনাথ তাঁর সম্মানে গান গেয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ একটি প্রবন্ধে তাঁকে ‘দেশনায়ক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন৷
রাজনীতিবিদ ও দেশনেতা রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বহু দিন ব্যারাকপুরে ছিলেন। তাঁর ছিল অদম্য দেশপ্রেম এবং সংগ্রাম, তাই নামের সঙ্গে মিলিয়ে ডাকা হত, ‘Surrender-not — Surendranath’. ভারতীয়দের স্বার্থরক্ষা ও নানান অভিযোগের প্রতিকারের জন্য তিনি ১৮৭৬ সালের ২৬ শে জুলাই কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করলেন Indian Association. সুরেন্দ্রনাথ ও আনন্দমোহন বসুর নেতৃত্বে ১৮৮৩ সালের ২৮-৩০ শে ডিসেম্বর ভারতসভা একটি সর্বভারতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে। এটাই ছিল আধুনিক ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথম জাতীয় সম্মেলন।
ভারতীয় ডাকবিভাগ ১৯৮৩ সালের ২৮ শে ডিসেম্বর ৫০ পয়সা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে শ্রদ্ধা জানায়।

ড. কল্যাণ চক্রবর্তী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.