“মাগো ছেলেরা তোর ঘর ছেড়েছে
শহীদ হবে বেশ,
ছাড়বে দেখে শেষ।
বারুদ ভরা স্বপ্ন বুকে স্বাধীন হবে দেশ |’

আটই ডিসেম্বর ১৯৩০, সকাল নটা।
সকাল থেকেই সেদিন সাজ সাজ রব পড়ে গেছিল নিউ পার্ক স্ট্রীটের এক গুপ্তকেন্দ্রে | প্রথমেই শুরু হল দীনেশ ও বাদলের সেই ফিস্ট | সে এক দেখার মতো জিনিস | যেমন দীনেশ, তেমনি বাদল | এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায় দেখ | দুজনেই সমান | কেউ হার মানতে রাজী নয় |

আর মাংস দেব দীনেশ ? প্রশ্ন করেন নিকুঞ্জ বাবু |
মানেটা কি ? দীনেশ অবাক, এখনো তো শুরুই করিনি !
……..তোমাকে দেব বাদল ?
আপনি দিতে থাকুন, তারপর সময় হলে আমিই মানা করবো।
পারবিনে বাদল, পারবিনে | তেড়ে ওঠেন দীনেশ, আমার সঙ্গে টেক্কা দিয়ে কোন লাভ নেই | হেরে ভূত হয়ে যাবি |
দেখাই যাক না | বাদল নাছোড়বান্দা |

নিজের মধ্যেই একটা দীর্ঘনিশ্বাস গোপন করলেন নিকুঞ্জ বাবু | স্বাধীনতার বেদীমূলে আজ ওদের চরম আত্মোৎসর্গের দিন | কেউ ফিরবে না | কেউ কোনোদিন পৃথিবীর মুখ দেখবে না | কিন্তু দেখে কে বলবে যে, তার জন্যে ওদের মনে একটুও দুর্ভাবনা আছে | মৃত্যু যেন ওদের কাছে একটা খেলা মাত্র |
অথচ, কতোই বা বয়েস ওদের .. বিনয়ের বাইশ, দীনেশের কুড়ি, বাদল সবে আঠারোয় পা দিয়েছে মাত্র | ভাবতেও কেমন অবাক লাগে |‌????

খাওয়া শেষ, কিছুই পড়ে নেই | কিছুই অবশিষ্ট নেই ! সব শেষ| জামা কাপড় পরাও শেষ | এখন শুধু অপেক্ষা মাত্র| দেখে আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেলেন নিকুঞ্জ বাবু ট্যাক্সি ডাকতে। |খানিক বাদেই ট্যাক্সি নিয়ে ফিরে এলেন, আর দেরী নয় এবার ওদের ডেকে আনলেই হবে।

ডাকতে গিয়েও ডাকা হলো না নিকুঞ্জবাবুর | তার আগেই সহসা কি শুনে থমকে গেল তাঁর গতি। দীনেশ তখন তন্ময় হয়ে আবৃত্তি করে চলেছেন তাঁর প্রিয় কবিতা, এবার ফিরাও মোরে থেকে কয়েকটি লাইন ..়

‘ যে শুনেছে কানে
তাহার আহ্বান গীত, ছুটেছে সে নির্ভীক পরাণে
সঙ্কট আবর্ত মাঝে, দিয়েছে সে বিশ্ব বিসর্জন,
নির্যাতন লয়েছে সে বক্ষ পাতি, মৃত্যুর গর্জন
শুনেছে সে সংগীতের মত |’‌????

নিদারুণ শূণ্যতায় নিকুঞ্জ বাবুর বুকটা হাহাকার করে ওঠে| লগ্ন আসন্ন .. মন না চাইলেও এবার তাকে বিদায় দিতে হবে। চিরবিদায়…..!

সবাই এসে মিলিত হলেন খিদিরপুর পাইপ রোডের মোড়ে | নিউ পার্কস্ট্রীট থেকে এলেন দীনেশ, বাদল আর নিকুঞ্জ সেন | রাজেন গুহের বাড়ি থেকে রসময় শূর আর বিনয় | সাবধানতা হিসেবে আগের দুটো ট্যাক্সিই ছেড়ে দেওয়া হলো পরিবর্তে নেওয়া হলো একটা নূতন ট্যাক্সি… এবার যাত্রা শুরু | ঈঙ্গিত করতেই ট্যাক্সিটা এগিয়ে চললো ডালহৌসী স্কোয়ারের দিকে |

স্থির অপলক দৃষ্টিতে রসময় শূর ও নিকুঞ্জ সেন তাকিয়ে রইলেন শেষ পর্যন্ত… বিপ্লবী জীবন অতি কঠিন, কঠোর | আবেগে ভাসলে চলে না তবুও তাকিয়ে থাকতে থাকতেই অজ্ঞাতেই চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে যেতে লাগলো বারবার…। তারপর?

অকুতোভয় তিন কিশোর সেদিন স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে রচনা করলেন এক নয়া অধ্যায়। বিপ্লবী দীনেশচন্দ্র গুপ্তর জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি ????????
কলমে ✍????©️ স্বপন সেন ????
সৌজন্যে: আমি সুভাষ বলছি, শৈলেশ দে
ভারতে সশস্ত্র বিপ্লব, ভূপেন্দ্র কিশোর রক্ষিত রায়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.