সোমবার, ২৩ জুন, স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে রাজ্যে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়ার সপ্তম দিনে পড়ল। কিন্তু প্রযুক্তিগত বিভ্রাটের কারণে সোমবার আবেদন জমা দিতে পারলেন না বহু চাকরিপ্রার্থী। অন্য দিকে, অনশনকারী শিক্ষকদের মধ্যে আরও একজন অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে ভর্তি করানো হল হাসপাতালে। পাশাপাশি, আরও ‘যোগ্য’দের আরও দু’টি দল আলাদা ভাবে যথাক্রমে রাজ্যের শিক্ষা দফতরের মুখ্য সচিব এবং নবান্নে তাঁদের অভিযোগ জানাতে চিঠি জমা দিয়েছেন।
গত ১৬ জুন রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগের আবেদন গ্রহণ পর্ব শুরু হয়। তৃতীয় দিন পর্যন্ত আগ্রহীদের থেকে প্রায় ১৬ হাজার আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়। কিন্তু সপ্তম দিনের মাথায় হঠাৎই প্রযুক্তিগত কারণে স্থগিত হয়ে যায় আবেদন প্রক্রিয়া। ফলে জানা গেল না, এখনও পর্যন্ত মোট আবেদনকারীর সংখ্যা। এসএসসি-র তরফে জানানো হয়েছে, সোমবার এই সমস্যার সম্মুখীন হলেও মঙ্গলবার থেকেই আবার আবেদন করতে পারবেন চাকরিপ্রার্থীরা।
সোমবার সেন্ট্রাল পার্কে অনশনরত ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন আরও একজন। তাঁকে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। গত ১২ জুন থেকে লাগাতার অনশনে বসেছেন মোট ২০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাঁদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন একের পর এক অনশনকারী। শেষ পাঁচজন অনশনকারীর মধ্যে অসুস্থ হলেন আরও একজন।
শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের আরও একটি দল ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ঐক্য মঞ্চ’ শিক্ষাদফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়। তাঁদের অভিযোগ, শারীরিক অসুস্থতা-সহ অন্যান্য ছুটির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করছেন জেলা পরিদর্শকেরা। যার ফলে তাঁরা কোনও ছুটিই নিতে পারছেন না।
অন্য দিকে, সোমবার ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী অনশন মঞ্চ’-এর তরফে প্রথমে ওয়াই চ্যানেলে অবস্থান বিক্ষোভ দেখানো হয়। সেখান থেকে একটি প্রতিনিধিদলকে নবান্নে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, তাঁরা চিফ সেক্রেটারির সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু শেষমেশ তা সম্ভব হয়নি। শুধু তাঁদের থেকে চিঠি জমা নেওয়া হয়। একই সঙ্গে গ্রহণ করা হয়, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা চিঠিও। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে হবে। এই বিষয়ে বিধানসভায় অধিবেশন ডেকে এই বিষয়ে সদর্থক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। তাঁদের সব দাবি মানতে হবে। মঞ্চের অন্যতম মুখ সুমন বিশ্বাস বলেন, “তাঁদের সমস্ত দাবি না শোনা হলে তাঁরা আন্দোলনের ঝাঁজ আরও বাড়াবেন। এর আগে যেমন বিধানসভা অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন। তেমনই এ বার নবান্ন অভিযানেরও ডাক দেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, যে দাবিতে ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী অনশন মঞ্চ’ দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছেন, সেই দাবিতেই অনড় তাঁরা। তাঁদের দাবি:
১) ২২ লক্ষ পরীক্ষার্থীর ওএমআর মিরর ইমেজ কপি অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে।
২) ওএমআর শিটের তথ্যের ভিত্তিতে সকল ‘যোগ্য’-এর নির্ভুল এবং নিখুঁত তালিকা দ্রুত প্রকাশ করতে হবে।
৩) এসএসসি প্রকাশিত পরীক্ষার নতুন নিয়োগ-বিজ্ঞপ্তি এবং গেজেট অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৪) বিধানসভার জরুরি অধিবেশন ডেকে চাকরিহারাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে।
৫) ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের চাকরি যে কোনও মূল্যে ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে নিতে হবে।
৬) ২০১৬ প্যানেলের সকল ‘যোগ্য’ শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীকে সসম্মানে চাকরিতে বহাল রাখতে এবং চাকরিতে যোগদানের দিন থেকে চাকরির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।