পরমাণু অস্ত্রভান্ডারকে আধুনিক করছে পাকিস্তান! একটি গোয়েন্দা রিপোর্টে এমনটাই দাবি করেছে আমেরিকা। আমেরিকার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা (ডিআইএ)-র ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, পাকিস্তান নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের আধুনিকীকরণ করছে। পাশাপাশি নিজেদের পারমাণবিক সামগ্রী এবং পারমাণবিক কমান্ডের নিরাপত্তার দিকেও নজর দিয়েছে পাকিস্তান। যদিও পারমাণবিক সামগ্রী বলে কী বোঝানো হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করা হয়নি ওই রিপোর্টে।
আমেরিকার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার ওই রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে ১১ মে পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে। অর্থাৎ, পহেলগাঁও কাণ্ড, অপারেশন সিঁদুর এবং ভারত-পাক সংঘর্ষ এবং দু’পক্ষের সংঘর্ষবিরতির পরে ওই রিপোর্টটি তৈরি হয়েছে। আগামী এক বছর পাকিস্তানি সেনা কোন কোন ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে পারে, তার একটি আভাস দেওয়া হয়েছে আমেরিকার রিপোর্টে। আমেরিকার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার অনুমান, পড়শি দেশগুলির সঙ্গে সীমান্ত পরিস্থিতিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করতে পারে পাক ফৌজ়।
রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ভারতকে নিয়েও ভয়ে রয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তান ভারতকে নিজেদের ‘অস্তিত্বের জন্য ভয়ের’ কারণ হিসাবে দেখে বলে দাবি করছে আমেরিকার রিপোর্ট। আমেরিকার সামরিক গোয়েন্দাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রচলিত অস্ত্রভান্ডারের দিক থেকে ভারত এগিয়ে রয়েছে। সেটিকে টেক্কা দিতে নিজেদের সামরিক ব্যবস্থাকে আধুনিক করার পাশাপাশি পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারকে উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের ঘরোয়া বিদ্রোহের কথাও উঠে এসেছে আমেরিকার গোয়েন্দা রিপোর্টে। ওই রিপোর্ট অনুসারে, গত বছরে পাকিস্তানে বিদ্রোহীদের হামলায় আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তেহরিক-এ-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং বালোচ বিদ্রোহীদের হামলা প্রতিহত করার দিকেও জোর দিতে পারে পাকিস্তানি সেনা। এ ছাড়া সন্ত্রাসবাদ দমনেও পাকিস্তানি সেনা গুরুত্ব দিতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে আমেরিকার রিপোর্টে।
পাকিস্তান যে মূলত চিন থেকে অর্থনৈতিক এবং সামরিক সুবিধা পায়, তা-ও বলা হয়েছে রিপোর্টে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রতি বছরে চিনা ফৌজের সঙ্গে একটি যৌথ সামরিক মহড়া করে পাকিস্তানি সেনা। গত বছরের নভেম্বরে পাকিস্তান এবং চিনের বায়ুসেনারও একটি যৌথ মহড়া হয়েছিল। তবে গত বছরে পাকিস্তানে সাত জন চিনা নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। পাকিস্তানের মাটিতে চিনা নাগরিকদের উপর সন্ত্রাসবাদী হামলার ফলে দু’দেশের মধ্যে ‘দ্বন্দ্বের’ সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ওই রিপোর্টে।
বস্তুত, আমেরিকার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার ওই রিপোর্টে শুধু পাকিস্তান নয়, রাশিয়া, চিন, ভারত-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জমানায় ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্বের অন্যতম উৎকর্ষ সামরিক ব্যবস্থা হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা হতে পারে বলে মনে করছেন আমেরিকার গোয়েন্দারা। পাশাপাশি চিনকে প্রতিহত করাকেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে বিবেচনা করতে পারে ভারত। ওই গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ভারত সামরিক ভাবে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দেখে চিনকে। মে মাসে ভারত-পাক সংঘর্ষ হলেও পাকিস্তানকে একটি ‘আনুষাঙ্গিক নিরাপত্তা সমস্যা’ হিসাবে ভারত বিবেচনা করে বলে মনে করছে আমেরিকা। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতে তৈরি সমরাস্ত্রের উপরে আগামী দিনে নয়াদিল্লি আরও জোর দিতে পারে বলে মনে করছে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা।