অভিষেকের ৬০০০ পাতার নথিপত্র ‘কে লিখেছে জানি’! দাবি শুভেন্দুর, মন্তব্য ছুড়লেন মহুয়াকে নিয়েও

নিয়োগ মামলায় বৃহস্পতিবার ইডির ডাকে সাড়া দিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের হাতে প্রায় ছ’হাজার পাতার নথি তুলে দিয়ে এসেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সকাল ১১টা নাগাদ ইডির দফতরে ঢোকার ঘণ্টাখানেক পরে বাইরে বেরিয়ে এসে তিনি নিজেই সে কথা জানান। তার প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করলেন, অভিষেকের ইডি দফতরে জমা দেওয়া নথি কোথায় বসে কে লিখেছেন, তা তিনি জানেন! সংসদে ‘টাকা নিয়ে প্রশ্ন’ তোলার অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের জেলে যাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অভিষেক সংক্রান্ত মন্তব্যে শুভেন্দুকে পাল্টা বিঁধেছে তৃণমূলও। দলের মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘ইডি, সিবিআই এবং বিজেপির রক্ষাকবচ উঠে গেলে যাঁর এক দিনও শ্রীঘরের বাইরে থাকার কথা নয়, সেই বিকৃত মস্তিষ্কসম্পন্ন ব্যক্তির এমন ধরনের কথা বলা স্বাভাবিক। প্রথমে মনে রাখতে হবে, ওঁর নাম সুদীপ্ত সেন চিঠি দিয়ে সিবিআইকে জানিয়েছে এবং সিবিআইয়ের এফআইআর-এও আছে। সবজান্তা গামছাওয়ালা শুভেন্দুর পরিণতি শুধুমাত্র সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতার অপেক্ষায়।’’

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৫ মিনিটে ইডি দফতরে পৌঁছে গিয়েছিলেন অভিষেক। বেরিয়ে আসেন ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই। বাইরে এসে তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘ওঁরা তথ্য চেয়েছিলেন। আমি ওঁদের ৬০০০ পাতার নথি জমা দিয়ে এসেছি। ওঁরা বলেছেন, এত নথি দেখতে সময় লাগবে। দরকার পড়লে আপনাকে আবার ডেকে পাঠাব।’’ অভিষেকের সংযোজন, ‘‘আমি তদন্তে বরাবর সহযোগিতা করেছি। চাইলে আদালতের নির্দেশ মোতাবেক নথি পাঠিয়ে দিয়ে দায় সারতে পারতাম। কিন্তু আমার লুকোনোর কিছু নেই। ওরা মাত্র দু’দিন আগে আমাকে নোটিস পাঠিয়ে নথি নিয়ে সশরীরে হাজির হতে বলেছিল। তাই আমি আজ নথি নিয়ে এসেছিলাম। ভবিষ্যতেও যত বার ডাকবে, তত বার আসব।’’

এর প্রেক্ষিতে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে দলীয় মঞ্চ থেকে শুভেন্দু বলেন, ‘‘একটি ল ফার্ম ৬৫০০ পাতার ইতিহাস লিখে দিয়েছে আর উনি গিয়ে তা জমা দিয়ে দিয়েছেন। সেখানে রুচিরা নারুলা (অভিষেকের স্ত্রী), মেনকা গম্ভীর (অভিষেকের শ্যালিকা), লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস (অভিষেকের সংস্থা) কোথাও কিছু লুকোনো নেই। সব সাদা। এই ইতিহাস কোথায় বসে এবং কে লিখে দিয়েছে সব আমি জানি।’’

মহুয়া প্রসঙ্গেও শুভেন্দু মন্তব্য, ‘‘দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে ওই সাংসদ যে ধরনের হঠকারী ও দেশ-বিরোধী কাজ করেছেন, তাতে তাঁর সাংসদ পদ যাওয়াটা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।’’ বৃহস্পতিবারই লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে মহুয়াকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে এথিক্স কমিটি। তার প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘সংসদের মেয়াদ আর পাঁচ থেকে ছ’মাস আছে। তাই শুধু সদস্যপদ গেলেই হবে না। রাজ্যের মানুষ চায়, এই ধরনের ফ্রড (প্রতারক) সাংসদ যেন জেলে যায়।’’

বিষ্ণুপুরে দলের বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে সিপিএম-কংগ্রেসকেও আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু। দুর্নীতির প্রশ্নে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একমাত্র লড়াই বিজেপি করছে বলে দাবি করেছেন তিনি। বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘সিপিএম সেটিংয়ের রাজনীতি করে। বিজেপি সেটিং করে না। ২০১১-তে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ছিলেন সুর্যকান্ত মিশ্র। ২০১৬-তে বিরোধী দলনেতা ছিলেন কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান। কিন্তু এরা কেউই লড়াই করেনি। ওরা তৃণমূলের বি টিম। মোদী ছিল বলে বাকিবুরকে নিয়ে বালু, সুকন্যা, অনুব্রত মণ্ডল, পার্থেরা জেলে। চোরেদের আমরা নিকেশ করে চলেছি।’’

পাল্টা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শুভেন্দু তৃণমূলের প্রোডাক্ট। তাই পোশাক বদলে বাহ্যিক পরিবর্তন হয়, অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন হয় না। সিপিএমই আপসহীন ভাবে লড়ছে।’’ কংগ্রেস মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ও বলেন, ‘‘যাহা বিজেপি, তাহাই তৃণমূল। এ আমাদের কথা নয়। এ কথা তৃণমূল ও বিজেপির কমন নেতা মুকুল রায়ের। ইডি-সিবিআইয়ে এই তদন্ত তদন্ত খেলা সবটাই তৃণমূল-বিজেপির বোঝাপড়া।’’

নাম না-করে দলীয় সভামঞ্চ থেকে বিষ্ণুপুরের দলবদলু বিধায়ক তন্ময় ঘোষকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু। বুধবার দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তন্ময়ের চালকলে ম্যারাথন তল্লাশি চালাচ্ছে আয়কর দফতর। সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘কাল থেকে চালচোর, ধানচোর, মদওয়ালার সঙ্গে কী চলছে? কেমন লাগছে? ভাল লাগছে তো?’’ শুভেন্দুর সংযোজন, ‘‘এক দিন আগে দলবদল করে প্রার্থী হয়েছিল ধান, চাল ও মদ চোরটা। তাঁকেও আপনারা বাঁ হাতে ভোট দিয়ে জিতিয়ে দিয়েছিলেন ২০ হাজার ভোটে। বেয়াদবটা প্রার্থী না হলে আপনারা পঞ্চাশ হাজার ভোটে এই আসন বিজেপির হাতে তুলে দিতেন।’’ সদ্য দলবদলু কোতুলপুরের বিধায়ক হরকালী প্রতিহারকেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘এর পর হরকালীর পালা। দেড় কোটি টাকা দিয়ে বাঁকুড়ায় বাড়ি করেছে। বৌ বাঁকুড়া মেডিক্যালে নার্সের চাকরি করে। তৃণমূল বৌকে উত্তরবঙ্গে বদলির হুশিয়ারি দিয়েছিল। হরকালী বলেছিল আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করুন। আগে হাওয়াটা বুঝে নিই।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.