পুজোয় ত্রাণ নয়, কংক্রিটের নদী বাঁধের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন সুন্দরবনবাসী

আরও একবার কংক্রিটের বাঁধের দাবি নিয়ে নদী বাঁধে দাঁড়িয়ে আন্দোলনে নামলেন সুন্দরবনবাসী। সুন্দরবন নদীবাঁধ ও জীবন জীবিকা রক্ষা কমিটির ডাকে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর থেকে ইচ্ছামতি পর্যন্ত নদী বাঁধের উপর দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুললেন এই সংগঠনের মানুষজন।

আয়লা, আমফান, যশ, বুলবুলের মত ঘূর্ণিঝড় প্রতি বছর সুন্দরবনের উপর আছড়ে পড়ে। এতে একদিকে যেমন ঝড়ের দাপটে তছনছ হয়ে যায় একের পর এক বাড়ি, ঘর, তেমনি ঝড়ের দাপটে নদীবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয় একের পর এক গ্রাম। জমির ফসল থেকে শুরু করে পুকুরের মাছ সব ভেসে যায়। বাড়ি ঘর দিনের পর দিন জলমগ্ন হয়ে যায়। সুন্দরবনবাসীর সমস্ত কিছু তছনছ করে দিয়ে যায় একের পর এক ঘূর্ণিঝড়। মাথা গোঁজার ঘর, চাষের জমি এক লহমায় সবই জলের তলায় চলে যায়। এই পরিস্থিতিতে বারে বারে কংক্রিটের নদী বাঁধের দাবি জানিয়েছেন সুন্দরবনের মানুষজন। বিশেষ করে যে সমস্ত মানুষ নদী তীরবর্তী এলাকায় থাকেন তাঁরা বারে বারে এই নদীবাঁধের জন্য আন্দোলন করেছেন। আমফানের পরও সুন্দরবনের একাধিক জায়গায় মানুষ নদী বাঁধের উপর দাঁড়িয়ে কংক্রিটের বাঁধের দাবি জানিয়েছিলেন। এবারও তাঁরা রবিবার সকাল থেকে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে নদী বাঁধের উপর দাঁড়িয়ে কংক্রিটের বাঁধের দাবিতে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে আন্দোলন করলেন।

হাতে গোনা দু’ একদিন বাদেই পুজো। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফ থেকে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় পুজোর জন্য নতুন জামাকাপড়, ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে মানুষ হাজির হতে শুরু করেছেন। এই পরিস্থিতিতে আরও একবার সুন্দরবন নদীবাঁধ ও জীবন জীবিকা রক্ষা কমিটি ডাক দিয়েছেন, “ত্রাণ নয়, চাই কংক্রিটের নদীবাঁধ।”

সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার নদী বাঁধ বেহাল। পূর্ণিমা, অমাবস্যার কোটালেই বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয় গ্রাম। সেখানে বুলবুল, আমফানের মত ঝড় কী ভাবে সামলাবে এই নড়বড়ে নদীবাঁধ, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। আয়লার পরে তৎকালীন বাম সরকার এ নিয়ে দিল্লিতে দরবার করে সুন্দরবনে কক্রিটের নদী বাঁধ তৈরির জন্য প্রথম দফায় ৫০৩২ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সাহায্য নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু মাত্র ১৮৪ কোটি টাকার কাজ হতে না হতেই পতন হয় বাম সরকারের। তৃণমূল ক্ষমতায় আসে। বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে জমিজটের সমস্যা দেখা দেয় বিভিন্ন এলাকায়। তা মিটিয়ে কিছু কিছু এলাকায় তৈরি হয় আয়লা বাঁধ। কিন্তু বেশির ভাগ এলাকাতেই এই কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করা যায়নি। গোসাবা ব্লকের অন্তর্গত ৩৮৪ কিলোমিটার নদী বাঁধের মধ্যে মাত্র ১৮ কিলোমিটার নদী বাঁধ কংক্রিটের হয়েছে। একই রকম হিসাব সুন্দরবনের অন্য ব্লকের নদী বাঁধেরও।

সংগঠনের সদস্য চন্দন মাইতি বলেন, “আমরা সুন্দরবনের মানুষ উদবাস্তু জীবন চাই না, আমরা স্থায়ী বাসস্থান চাই। আর সেটা স্থায়ী নদীবাঁধ না হলে সম্ভব নয়। সেই স্থায়ী নদীবাঁধের দাবিতেই এই আন্দোলন।”

সংগঠনের সভাপতি অনাথ কুমার মাইতি বলেন, “সুন্দরবনের মানুষের জীবন, জীবিকাকে সুনিশ্চিত করতে হবে। তাই চাই কংক্রিটের নদী বাঁধ। সেই দাবিতেই আমরা আন্দোলন করছি। যতদিন না আমাদের দাবি পূরণ হবে, ততদিন আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.