বিচার ব্যবস্থাকে কলুষিত করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করল কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার বেলা এগারোটা নাগাদ এই রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ। তারপরেই তিনি নন্দীগ্রাম মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর কথাও ঘোষণা করেন। বিচারপতি কৌশিক চন্দ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জরিমানার অর্থ রাজ্য বার কাউন্সিলের জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই অর্থ পরবর্তীকালে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত হবে বলেও জানিয়েছেন।
কৌশিক চন্দ এই মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর এই নন্দীগ্রাম মামলা এবার কোন বেঞ্চের যাবে তা ঠিক করবেন হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল।
নন্দীগ্রাম মামলার শুনানি সময় বিচারপতি কৌশিক চন্দ্র বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে মামলাকারীর তরফে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তার জন্য কখনোই তিনি এই মামলা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন না। বরং বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার কারণেই তারই সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন। বিচারপতি চন্দের কথা,”আমার সঙ্গে একটি রাজনৈতিক দলের গভীর সম্পর্ক রয়েছে, তাই মামলাটি ছেড়ে দেওয়া উচিত। এই অভিযোগের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সাধারণ মানুষের উপর কখনোই ছেড়ে দেওয়া যায় না। সেটা বিচারপতি ঠিক করবেন। ব্যক্তি স্বতন্ত্র হিসেবে কারও কোনো রাজনৈতিক পছন্দ থাকতে পারে না এটা আমাদের দেশে প্রায় অসম্ভব। বিচারপতিরাও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেন। তারাও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ভোট দেন।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত সিক্রেট রিপোর্ট জনসমক্ষে আনা কি ঠিক? একজন মুখ্যমন্ত্রী গোপনীয়তা বজায় রাখারও শপথ নেন।
এই মামলার রায় ঘোষণার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান বলেন, “একজন মূখ্যমন্ত্রীকে এইভাবে জরিমানা করার ঘটনা লজ্জাজনক। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পদক্ষেপ করছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করার বিরুদ্ধে সরব হয়ে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইট করে লিখেছেন,”আমরা এমন একটা পৃথিবীতে বাস করছি যেখানে সত্যি কথা বলার জন্য ৫ লক্ষ টাকা দিতে হয়। এমন একটা পৃথিবীতে বাস করি যেখানে মিথ্যা প্রচারের জন্য কোনও দাম দিতে হয় না। প্রসঙ্গটি কি ধরা গেল? মোদী হ্যায় তো সব মুমকিন হ্যায়”
তবে বার কাউন্সিলের সদস্য অচিন্ত্য কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারীর মামলা থেকে আজ সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি কৌশিক ছন্দ। এটি ভারতের বিচার ব্যবস্থার মহিমার জয়। বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতার জয়।
নন্দীগ্রামে ভোটের ফল গণনার কারচুপির অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে মামলা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুনর্গণনার দাবিও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মামলাটি বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে উঠতেই আপত্তি জানায় তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, বিচারপতির সঙ্গে বিজেপির পূর্ব যোগ রয়েছে। বিচারপতি আইনজীবী থাকাকালীন বিজেপির হয়ে বহু মামলা লড়েছেন। ফলে তাঁর পক্ষে কি নিরপেক্ষ বিচার করা আদৌ সম্ভব হবে? তাতে তাদের ভরসা নেই। তাই এই মামলা অন্য বেঞ্চে সরানোর আর্জি জানানো হয়। হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির কাছে এই আর্জি জানিয়ে আবেদনও করেন তারা।