রাম রহিম যদি এক হয়; তবে প্রতিমা কেন‌ ভাঙ্চুর হয়?

বাংলাদেশের ইলিশ খুব পছন্দের , কিন্তু হিন্দুরা নয় :-

“ধর্ম যার যার, উৎসব সবার”- বক্তব্য কে সমর্থন জানিয়ে দশমীর আগেই মায়ের বিসর্জন দেওয়া হল এবং নজরুলের লেখা ” একই বৃন্তে দুটি কুসুম’ এর মধ্যে একটি কুসুমের আপাদমস্তক ছাল ছাড়িয়ে পিছমোড়া করে বেঁধে ডোবার জলে ফেলে দেওয়া হল , যাতে‌ ঘুড়ে দাঁড়াতে না পারে, কিন্তু কথায় আছে, “স্বভাব যায় না মোলে”, তাই যুধিষ্ঠিরের রাজ্যাভিষেক কালে শিশুপাল বধের সময় যেমন করে কৃষ্ণের সুদর্শন চক্র গর্জে উঠেছিল, ঠিক তেমনই দেবীপক্ষে বাংলাদেশের বিশেষ বিশেষ অঞ্চলগুলিতে ঘটে চলা বর্বরোচিত আক্রমনের বিরুদ্ধে ওই দেশের সংখ্যালঘু  কুসুম ধীরে ধীরে জেগে উঠছে । কিন্তু এই দেশের খবর কি? ওহহহ , বড় ভুল হয়ে গেছে , ক্ষমা করবেন , খবরে বলছে  বাংলাদেশের পূজা মন্ডপে ভাংচুর করেছে দুষ্কৃতীরা , আরোও এক জনপ্রিয় সংবাদপত্রে লিখেছে বাংলাদেশের পূজা মন্ডপে দুষ্কৃতীদের গোষ্ঠী সংঘর্ষ , আরোও অনেক কিছুই দেখলাম ।  আসাম , ঝাড়খন্ড, ত্রিপুরার  স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো জুড়ে  ও প্রথম সারির সংবাদপত্রে ইন্ডিয়া টুডে,  হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য হিন্দু ,  দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার হওয়া নিয়ে খবর গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছে । তবে যে বিষয়টি সবথেকে  আঘাত দিয়েছে , তা হল বিখ্যাত বুদ্ধিজীবীরা কোনো ট্যুইট, পোস্ট, প্রেস কনফারেন্স কিছু করেনি!!! তাই গতকাল আমি পোস্ট করলাম -” সন্ধান চাই-
অপর্ণা সেন,অমর্ত্য সেন,কৌশিক সেন,শুভাপ্রসন্ন মজুমদার,সুবোধ সরকার, শ্রীজাত,সুজাত ভদ্র,শাঁওলি মিত্র,রুদ্রপ্রসাদ,কবীর সুমন, মন্দাক্রান্তা,মীরাতুন,পরমব্রত, ইত্যাদি নামী বুদ্ধিজীবীদের।” এক কুসুম অন্য কুসুমের ওপর অত্যাচার করলে সমগ্ৰ বিশ্বে এই অত্যাচারের নাম কমিউনাল রাইট , কিন্তু বাংলায় তার নাম দুষ্কৃতী তান্ডব , গোষ্ঠী সংঘর্ষ ইত্যাদি । সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে বাংলাদেশের পূজা মন্ডপে উগ্ৰ মৌলবাদীদের তান্ডব সকলে প্রত্যক্ষ করেছে, কারোর অজানা নয় , তাই আর ঘাটাচ্ছি না । প্রিয় বাংলায় প্রথমে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার , ও পরে একটু হালকা সাহস পেয়ে কিছু পূজা কমিটির মেম্বার প্রকাশ্য রাস্তায় এর প্রতিবাদ করেছেন । চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা ও জেএমসেন হলের নিকটে প্রতিবাদ সভা হয়েছে। সুদূর আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় হিন্দুরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বাংলাদেশের দুর্গাপূজা মন্ডপের ওপর হামলার।

পাড়ার চায়ের দোকানে দমদম পার্কের পূজামন্ডপ নিয়ে আলোচনা চলছিল, জুতো দিয়ে মন্ডপ কে সাজানো হয়েছে । যে জুতো খুলে আমরা মন্দিরে প্রবেশ করি , তা দিয়েই শিল্পী তার স্বাধীনতা প্রয়োগ করে পূজামন্ডপকে সাজিয়েছে । অবশ্য গতবছর আমরা দেখেছি আজান বেজেছে পূজা মন্ডপে। কি সুন্দর স্বাধীনতা !! এগুলো হিন্দুধর্মের সঙ্গেই করা সম্ভব, কারণ হিন্দুরা সহনশীল । পৃথিবীর অন্যান্য মহান ধর্মগুলির মধ্যে হিন্দু ধর্ম একমাত্র ধর্ম যা এই ধারণাকে পোষণ করে যে ব্রহ্মাণ্ড নিজেই একটি বিশাল তথা অসীম সংখ্যক মৃত্যু এবং পুনর্জন্মের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। এটি একমাত্র ধর্ম যেখানে সময়ের পরিমাপ, অবশ্যই কাকতালীয় ভাবে, আধুনিক বিশ্বতত্ত্বের সাথে মিলে যায়। এই ধর্ম অনুসারে, একটি চক্র ৮৬৪ কোটি বছর দীর্ঘ যা আমাদের সাধারণ দিনরাত থেকে শুরু করে ব্রহ্মার দিনরাত পর্যন্ত বিস্তৃত এবং যা পৃথিবী বা সূর্যের বয়সের তুলনায় বেশি এবং বিগ ব্যাং-এর প্রায় অর্ধেক সময়।১৪৯১(৬৩০ খ্রীঃ)বছর আগে কাবা ঘরের প্রধান মূর্তি হুবল সহ ৩৬০ টি মূর্তি ভেঙেছিলেন পয়গম্বর মহম্মদ। প্রায় সমস্ত গনহত্যা বা নির্যাতনের কিন্তু সোচ্চারে প্রতিবাদ হয় বা হয়েছে , যেমন- ইহুদি গনহত্যা , সোভিয়েত জমানায় অঙ্গরাজ্যগুলোতে গনহত্যা , ১৯১৫-১৬ সালে তুর্কিতে মুসলিমদের হাতে আর্মেনিয়ান খ্রীষ্টানদের গনহত্যা , হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণকায়দের ওপর শ্বেতকায়দের অত্যাচার ।হয়নি কেবল পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের বেলায় ।  আর এটা ভূলিয়ে দেবার জন্য যথাসম্ভব করা প্রয়োজন তা করেছে বামেরা । ১৯৪৬  এর নোয়াখালী দাঙ্গা প্রসঙ্গে  ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বক্তব্য ছিল ‘ Peasant’s Uprising ‘ মানে ‘কৃষকদের অভ্যুত্থান’ । ১৯২১ এর  মোপলা বিদ্রোহ নিয়েও  কমিউনিস্ট পার্টি স্ট্যান্ড একই রকম ছিল ।  কমিউনিস্ট পার্টির বরিষ্ঠ নেতা  ইএমএস নাম্বুদিরিপাদ  মোপলা বিদ্রোহের পেছনে  ব্রিটিশদের উস্কানি ,  হিন্দু জমিদারদের  অত্যাচার  খুঁজে পেলেও  মুসলিমদের কোন দোষ পাননি । ইসলামের পাঁচজন নবীদের নামে সিন্নি প্রদান করে হিন্দুদের বিপথগামী করা সর্বধর্ম সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান, নোয়াখালীর চৌমুহনীতে অবস্থিত রামঠাকুরের সমাধি মন্দিরও বর্বরোচিত সাম্প্রদায়িক জেহাদি নৃশংসতা থেকে বাঁচতে পারেনি। অযথা নেকামি গুলো করার কোনো দরকার ছিল না। একটি নৌকায় বাঁদিকে ২ জন আর ডানদিকে ২ জন বসে আছে, হঠাৎ বা দিকে ফুটো দিয়ে জল ঢুকতে শুরু করল, তাই দেখে ডানদিকের ২ জন বললেন ,- ” যাক বাঁচা গেছে, ফুটোটা তো আমাদের দিকে নেই !!” এই হল হিন্দুদের বর্তমান অবস্থা। গালাগাল দিয়েও কোনো লাভ নেই , যেখানে বিকৃত মানসিকতার নপুংসক মেকী হিন্দুরা রয়েছে , সেখানে বড়জোড় কয়েকটি বছরের অপেক্ষা, বাংলায় নোয়াখালী, কুমিল্লা , চাঁদপুর, হাজিগঞ্জ হতে । বিচ্ছিন্নতাবাদী,কাফের বিরোধী,মালাউন বিরোধীরা কিন্তু নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছে,প্রতিটি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় এরা ঢুকে গেছে,উদ্দেশ্য ভোট-রাজনীতিকে প্রভাবিত করে সামনের কিছু বছরের মধ্যে নিজস্ব প্রতিনিধিকে জিতিয়ে আনা,আর রাজনৈতিক দল নিজেদের ভোটব্যাংকের স্বার্থে এদের প্রশ্রয় দিচ্ছে ,এইভাবে এক বৃহত্তর অংশ আজ এদের দখলে,আগামী কিছু বছরের মধ্যে এরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে এটা পশ্চিমবঙ্গ না বাংলাদেশ বুঝতে পারবেন না,এমনিতেই সাউথের ট্রেনে চড়লে বোঝা যায়না আমরা কলকাতায় আছি না ঢাকাতে আছি।বছরের-পর-বছরের ট্র্যাডিশন বজায় রেখে  দুর্গাপুজো – দিওয়ালির সময়  গতকাল বাংলাদেশ জুড়ে  হিন্দুদের উপর আক্রমণ নেমে এসেছে , দুর্গা মূর্তি ধ্বংস করা হয়েছে ।  এদেশে ব্রিটিশ শাসনের শেষের দিকে  বাংলাদেশ অঞ্চলে দাঙ্গা হলেই  তার পাল্টা দাঙ্গা হত বিহার,  উত্তর প্রদেশে । নোয়াখালী দাঙ্গার পাল্টা হয়েছিল গডমুকুটেশ্বরে ।  নৃশংসতার এবং বীভৎসতার দিক থেকে  যা কোন অংশে কম ছিল না , মহিলাদের ওপর আক্রমণটা বাদ দিলে ।

হিন্দুসমাজের খেয়ে , পড়ে , পরজীবীর মত না বেঁচে থেকে হিন্দুসমাজের কাজে আসুন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তো অনেক হল ।

পরিশেষে আরোও একবার স্মরণ করুন-
“সমগ্র হিন্দু জনগণের মিলন ও সঙ্ঘবদ্ধতাই মায়ের কাম্য | হিন্দু সমাজের তথা জনগণের ঐক্য, মিলন ও সঙ্ঘবদ্ধতাই শ্রীশ্রী মা দুর্গার আসল পূজা | সমগ্র হিন্দু সমাজ সংগঠিত ও সঙ্ঘবদ্ধ হলে ভারতের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে |
হিন্দুকে আজ নূতন করে তার ধর্ম ও জাতীয়তার মর্ম উপলব্ধি করতে হবে | হিন্দুধর্ম বীর্য্যের সাধনা, হিন্দুর দেবতা অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত; অত্যাচারী দুষ্টের দমন হিন্দুর দেবতার লীলা | আত্মরক্ষার সঙ্কল্প ও সঙ্ঘশক্তি গঠনের প্রচেষ্টা ও দায়িত্ববোধ প্রত্যেক হিন্দু নরনারীর প্রাণে জাগ্রত করে দিতে হবে | ”       – স্বামী প্রনবানন্দ

।। সপ্তর্ষি।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.