গ্রাম বাংলার প্রতিটি বাস্তুতেই পুষ্টি বাগান হোক

গ্রাম বাংলার সমৃদ্ধির সঙ্গে আহার ও পুষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ থাকা উচিত। সমৃদ্ধি তখনই বলবো যখন গ্রামবাসী রোজ দুবেলা পুষ্টিকর খাবার খেতে পাবেন।
অনেক বাস্তুতেই আলগোছে এক-আধ কাঠা জমি পড়ে থাকে, কখনও তারও বেশি। আবাস-সন্নিহিত জমিটুকুকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যবহার করে কিচেন গার্ডেন বা ঘরোয়া সবজি বাগান গড়ে তোলা যায়। কখনও তার লাগোয়া দুটো একটা ছোটোমাপের ফলগাছ লাগালে, তা এক পরিপূর্ণ পুষ্টি বাগান বা নিউট্রিশনাল গার্ডেনহয়ে দাঁড়াবে।
সবজি বাগানে ৮টি ছোট প্লট বানিয়ে ফসল চক্র অনুসরণ করে সারাবছর ধরে সবজি লাগালে বাড়ির চাহিদা মিটবে। এই বাগানের বেড়াতেও উপযোগী লতানে সবজি তুলে দেওয়া যায়। বাগানে যদি পুরোপুরি বা আংশিকভাবে জৈব পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়, তবে বাংলার মানুষ কৃষির রাসায়নিক দূষণ থেকে রেহাই পাবেন। কারণ সবজি আর ফলেই সবচাইতে বেশি সার, কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা হয়। শহরতলীতেও যাদের গৃহ-সন্নিহিত এক চিলতে জমি আছে; অথচ তাতে ভালো আলো-বাতাস খেলে; তারাও রচনা করতে পারবেন পুষ্টি-বাগান। বাগানের বর্জ্য, গৃহের তরকারীর খোসা, মাছের কাঁটা, মাংসের হাড় ইত্যাদি ব্যবহার করে বাগানেই বানিয়ে নেওয়া যায় কম্পোস্ট সারের ভান্ড। গ্রামের মানুষ গোবর ও গোমূত্র ব্যবহার করে গোবর সার, তরল জৈবসার এবং কেঁচো ব্যবহার করে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার বানিয়ে এই পুষ্টি বাগানে প্রয়োগ করতে পারেন।
অপুষ্টির অভিশাপ থেকে গ্রাম-বাংলাকে শাপমুক্ত করতে ছড়িয়ে দিন পুষ্টি বাগানের এই প্রস্তুত পাঠ। সবজি উৎপাদনে ভারত দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও এখনো দেশের সমস্ত মানুষ আজও দৈনিক ন্যূনতম মাত্রায় সবজি তাদের ব্যঞ্জনে পায় না। অথচ সামান্য সচেতনতা ও প্রচেষ্টা থাকলেও কি এতটা অপুষ্টির পরিমন্ডল থাকা উচিত? পুষ্টিবাগানের তথ্য ও তার নিবিড় পাঠ বাংলার মানুষকে বাস্তু-বাগান রচনায় মনোনিবেশ করতে সাহায্য করবে। বাড়ির পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী ও গৃহকর্ত্রীরাই মিলেমিশে রচনা করবেন এই বাগান। ৫জন সদস্যের পরিবারের জন্য ৫ শতক জমি পুষ্টি বাগানের জন্য বরাদ্দ করতে হবে। বাগানের জন্য এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে পূর্ব ও দক্ষিণ দিক থেকে সূর্যালোক অবাধে আসতে পারে। সবজি বাগানের বড় গাছগুলি লাগাতে হবে সেই বাগানের উত্তর বা পশ্চিম সীমানায়। বড় গাছ বলতে পাতিলেবু, বকফুল, পেঁপে,সজনে, কাঁচকলা, বিলাতি আমড়া, কারিপাতা, করমচা, চেরি প্রভৃতি। জমি পর্যাপ্ত থাকলে কখনও আরও একধাপ ফলের গাছ যেমন একটা করে পেয়ারা, আম্রপালি আম, নারিকেল কুল, গোলাপজাম ইত্যাদি। জমিতে জলনিকাশের বন্দোবস্ত থাকতে হবে। দরকার মত জমির ঢাল রাখতে হবে যাতে নিকাশের সুবিধা হয়। তৈরি করে নিতে হবে নিকাশি নালা। পুরো জমিটা সবজির জন্য ১১টি ছোটো প্লটে, দক্ষিণ থেকে উত্তর বরাবর করে নিতে হবে। এই প্লটগুলির পশ্চিমে টানা একটি অথবা দুটি লম্বাটে প্লট তৈরি করতে হবে। লম্বা প্লটের পূর্ব প্রান্তে থাকবে সবজি হিসাবে ব্যবহৃত বড় গাছ যেমন পেঁপে, কারিপাতা, বকফুল, সজনে ইত্যাদি। তার পশ্চিমের লম্বা প্লটে লাগাতে হবে খর্বাকৃতি আম, পেয়ারা, গোলাপজাম,কুল ইত্যাদি। পুষ্টিবাগানের ফসলচক্রঃ
প্লট-১ : জলদি ফুলকপি এবং সাথি ফসলরূপে পালং শাক (আষাঢ় থেকে আশ্বিন), আলু (কার্তিক থেকে ফাল্গুন), নটেশাক (চৈত্র থেকে আষাঢ়)।
প্লট-২ : নাবি বাঁধাকপি (আশ্বিন থেকে মাঘ), ভিন্ডি(ফান্তুন থেকে আষাঢ়), মুলো(আষাঢ় থেকে ভাদ্র)।
প্লট-৩ : ফুলকপির সঙ্গে সাথি ফসল ওলকপি (আশ্বিন থেকে মাঘ), গ্রীষ্মকালীন বেগুন সঙ্গে সাথি ফসল নটে শাক (ফান্তুন থেকে ভাদ্র)
প্লট-৪ : জলদি বাঁধাকপি সঙ্গে সাথি ফসল পালং (ভাদ্র থেকে অঘ্রাণ), মটরশুঁটি (পৌষ থেকে বৈশাখ), বরবটি (জ্যৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ)।
প্লট-৫ : জলদি ফুলকপি সঙ্গে সাথি ফসল লালশাক (শ্রাবণ থেকে কার্তিক), পিয়াজ (অঘ্রাণ থেকে জ্যৈষ্ঠ), বরবটি (জ্যৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ)।
প্লট-৬ : ভিন্ডি (শ্রাবণ থেকে অঘ্রাণ), আলু (অঘ্রাণ থেকে ফাল্গুন), বরবটি (চৈত্র থেকে আষাঢ়)।
প্লট-৭ : টমেটো (কার্তিক থেকে ফাল্গুন), ভিন্ডি (বৈশাখ থেকে ভাদ্র), মুলো (ভাদ্র থেকে কার্তিক)।
প্লট-৮ : বরবটি (ভাদ্র থেকে কার্তিক), পেঁয়াজ (অঘ্রাণ থেকে বৈশাখ), লালশাক (জ্যৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ)।
প্লট-৯ : লালশাক (কার্তিক থেকে অঘ্রাণ), টমেটো (অঘ্রাণ থেকে বৈশাখ), উচ্ছে (বৈশাখ থেকে আশ্বিন)।
প্লট-১০ : বেগুনের সাথে সাথি ফসল পালং শাক (আষাঢ় থেকে ফাল্গুন), নটে শাক(চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ)।
প্লট-১১ : পেঁয়াজ (কার্তিক থেকে বৈশাখ), ভিন্ডি(জ্যৈষ্ঠ থেকে আশ্বিন)।
তথ্যসূত্র : বিসিকেভি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.