পূর্বঅংশ

।।দ্বিতীয়।।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পেলেও ভগবতী দেবীর গৃহমধ্যে যে পারিবারিক সামাজিক শিএক্ষা এবং ধর্মীয় শিক্ষা পেয়েছিলেন তা অসম্ভব সুন্দর। তিনি গৃহকর্মে নিপুনা ছিলেন। তিনি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গৃহকাজে নিপুন ভাবে লিপ্ত থাকতে। শ্রম করলে শান্তি লাভ ঘটে এই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত । ভগবতী দেবীর মাতুলালয় ছিল পাতুল গ্রামে । ভগবতী দেবীর জীবনের সর্ব বৃহৎ শিক্ষা ছিল হিন্দু ধর্মে কোনো উচ্চ নিচ নেই। সকলে সমান ও পাংতেও।

পাতুল গ্রামে রাজপুত, ক্ষত্রিয়, কায়স্থ নাপিত প্রত্যেকেরই বাস ছিল ।ভগবতী দেবী এমনকি অন্ত্যজ শ্রেণীর লোকও ছিল , তাঁর মাতুলালয়ের অতি নিকটে বাস করতেন। ভগবতী দেবী দ্বিধানহীন ভাবে সমস্ত সমবয়সী মেয়েদের সঙ্গে নিজের আঙিনায় খেলার আসর বসাতেন । হিন্দু ধর্মে জাতিভেদ প্রথা নাই এবং জাতির বিরম্বনা ঘুচিয়ে এক ঐক্যবদ্ধ হওয়া যায় এ চিন্তা তার হৃদয় শৈশব থেকে প্রতিপালিত হয়ে এসেছিল । কখনো তিনি কাউকে পরান্মুখ করতেন না ।প্রত্যেকের সঙ্গে পাতাতেন প্রীতির বন্ধন । কেউ পীড়িত হলে তার পরিচর্যা করে তাকে রোগ মুক্ত করে পেতেন গভীর আনন্দ।

উৎকৃষ্ট অশন , বসন, ভূষনের প্রতি ভগবতী দেবীর কোন স্পৃহা ছিল না। সামান্য গ্রাসাচ্ছদনে তিনি অসম্ভব ভাবে পরিতৃপ্ত হতেন ।বরং অন্যকে খাদ্য, বস্ত্র দান করে সুখী হতেন। এমন আচরণ দেখে মাতৃদেবী আশঙ্কা বোধ করতেন। কারন তাঁরা নিজেরাই ছিলেন পরান্নজীবী । যদি এমন আচরণে পরিবারের যদি কেউ কখনো বা রুষ্ট হন…..

কিন্তু ভগবতী দেবী ছিলেন নির্ভয়া। তার স্থির বিশ্বাস ছিল যে, তাঁর এমন আচরণে মাতুলরা কেউ অসন্তুষ্ট হবেন না। যদি কেউ কখনো রুষ্ট হন ,তাহলে তিনি চরকা কিনে সুতো কেটে বিক্রি করে সেই বাবদ অর্থ ব্যয় তুলে দেবেন মামাদের হাতে ।

এক সময় সকল কথা বাড়ির কর্তা মাতুল রাধামোহন বিদ্যাভূষণের কর্ণগোচর হলো। তিনি ভগবতী কে ডেকে সস্নেহে বললেন “তুমি আমার সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা তুমি যত ইচ্ছা গরিবকে দান করো …গরিবকে দান করলে তো অপব্যয় হয় না ।

শাস্ত্রে বলা আছে-

” দাতব্যমিতি যদ্দানং দীয়তেহনুপকারীনে।
দেশে কালে চ পাত্রে তদদানং মাত্বিকং স্মৃতম ।।”

দান করতে হবে এ কথা মনে করিয়ে দেশ-কাল-পাত্র বিবেচনায় অপকারীকেও যদি দান করা যায় তাকে সাত্ত্বিক দান বলে।

খুব ছোট বয়সে ভগবতীর বিবাহ হয়েছিল সেই সময়ের নিয়মে । বড় সচ্ছল পরিবারে তিনি বড় হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু বিবাহের পর এমন এক পরিবারে এলেন যেখানে আর্থিক সচ্ছলতা অভাব ছিল বড় তবুও তা ছিল পরমার্থিক সম্পদ পূর্ন। শশুর মশাই ছিলেন একজন ঋষিকল্প পুরুষ ।

বিবাহের সময় ভগবতীদেবী বাল্য কৈশোরের সন্ধিক্ষণে ছিলেন। আশ্চর্য, এই বয়সে ভগবতী হয়ে উঠেছিলেন পরিণত মনের অধিকারীনি। তিনি জানতেন পরিবারের তিনি জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ। শ্বশুর-শাশুড়ির ছোট ছোট দেওর , ননদ নিয়ে তার সংসার এর আনন্দে ভরিয়ে রাখতে হবে , কোন দুঃখের ছায়াপাত তিনি ঘটতে দেবেন না। নুন আনতে পান্তা ফুরোনো সংসারেও তিনি সীমাহীন শ্রম ও সেবা দিয়ে আনন্দময় করে তুলবেন। তাই তিনি সার্থক নামা ভগবতী, তিনি আনন্দময়ী।

ক্রমশঃ

দুর্গেশনন্দিনী

পরবর্তি অংশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.