ইন্টারপোলের শীর্ষ কমিটিতে কয়লাকাণ্ডের তদন্তকারী সিবিআই কর্তা, চাপ বাড়ল বিনয় মিশ্রের।

ইন্টারপোলের এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হলেন সিবিআই স্পেশাল ডিরেক্টর প্রবীণ সিনহা। কয়লা পাচারকাণ্ডে সুপারভাইজারি অফিসার ছিলেন প্রবীণ। ইন্টারপোলের এক্সিকিউটিভ কমিটিতে তিনি জায়গা পাওয়ায় সিবিআই ও ভারতের অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থার কাজে সুবিধা হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে বিদেশে লুকিয়ে থাকা অভিযুক্তদের দেশে ফেরানোয় গতি আসবে বলেও মনে করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। একই সঙ্গে প্রবীণের ইন্টারপোলের এক্সিকিউটিভ কমিটিতে আসা কয়লাকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত বিনয় মিশ্রের জন্য কিছুটা চাপের হয়ে উঠবে না তো, উঠছে সে প্রশ্নও।

প্রবীণ সিনহা ইন্টারপোলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চলতি বছরের সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এর ফলে ভারতে যে সমস্ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা রয়েছে যেমন সিবিআই, ইডি, এনআইএ-এর কাজে বেশ কিছুটা সুবিধা হবে। কারণ, বহু সময় তদন্তের ক্ষেত্রে দেখা যায় অভিযুক্তরা বিদেশে ফেরার হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের দেশে ফেরানো যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায় তদন্তকারীদের কাছে।

ইন্টারপোলের এক্সিকিউটিভ কমিটিতে ভারতের কোনও সদস্য থাকা মানে ইন্টারপোলে যে কর্তাব্যক্তিরা রয়েছেন তাঁদের কাছে অভিযুক্তর রেকর্ড তুলে ধরা অনেক সহজ। কোন ঘটনায় ওই ব্যক্তি অভিযুক্ত, ওই ব্যক্তিকে দেশে ফেরানো কতটা জরুরি তা বোঝানো সম্ভব। ফলে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা মনে করছে, এতে দেশের সুবিধাই হবে।

প্রবীণ সিনহার মতো তদন্তকারী অফিসার কয়লা পাচারকাণ্ডের সুপারভাইজারি অফিসার ছিলেন। প্রসঙ্গত এই কয়লা পাচারকাণ্ডেই অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র এই মুহূর্তে বিদেশে রয়েছে। তিনি ভানুয়াতুর প্রদেশের নাগরকিত্ব নিয়েছেন। বিনয়কে দেশে ফেরাতে ইডি ও সিবিআই এই মুহূর্তে যৌথ চেষ্টা করছে। বিনয়ের মতো অভিযুক্তদের দেশে ফেরানোর ক্ষেত্রে ভারতীয় এই আধিকারিকের ইন্টারপোল এক্সিকিউটিভ কমিটিতে থাকা যে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, তেমনটাই মনে করা হচ্ছে। বিনয় মিশ্রের জন্য তা বেশ চাপেরও হতে পারে।

গরু পাচারকাণ্ড ও কয়লা পাচারকাণ্ডে নাম জড়িয়েছে বিনয় মিশ্রের। অভিযোগ, এই দুই পাচারকাণ্ডে প্রভাবশালীদের কাছে টাকা লেনদেনের অন্যতম মাধ্যম ছিলেন বিনয়। যদিও একাধিকবার তিনি সে সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেই দাবি করেছেন তিনি। তবে একদিকে ইডি যখন তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে, সিবিআইও এফআইআর দায়ের করেছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় তদন্তকারীরা।

দক্ষিণ কলকাতার একটি কলেজ থেকে অঙ্কে স্নাতক হন বিনয়। সেই সময় ছাত্র রাজনীতি করতেন। পাশাপাশি এলাকায় টিউশন পড়াতেন। কোটিপতি ব্যবসায়ীর বাড়ির ছেলেমেয়েদের অঙ্ক করাতে শুরু করেন বিনয়! সিবিআই আধিকারিকদের দাবি, “অঙ্কের টিউশন করার সূত্রেই এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় বিনয়ের। সেই সূত্র ধরেই রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে বেআইনি কয়লার কারবারীদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয় তাঁর।” সিবিআইয়ের কেস ডায়েরিতে বিনয়ের পরিচয়, রাজ্যের একজন প্রথম সারির নেতা এবং কয়লা পাচার চক্রের পাণ্ডার ‘প্রটেক্টর’ হিসাবে।

সেই বিনয়ের নাম কয়লাকাণ্ডে জড়ানোর পর পরই কলকাতা হাইকোর্টকে এক মামলায় জানান, ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার খরচ করে ভানুয়াটুরের নাগরিকত্ব নিয়েছেন বিনয় মিশ্র। সে সংক্রান্ত নথিও তিনি দাখিল করেছেন। একইসঙ্গে বলেছেন, ভারতীয় নাগরিকত্ব ছাড়ার পর দুবাইয়ে ভারতীয় দূতাবাসে তাঁর পাসপোর্টও জমা রাখা আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.