তিন কন্যা হওয়ায় বাবা-মা কে শুনতে হয়েছিল গঞ্জনা, পদক জিতে অপমানের বদলা নিলেন লভলিনা

না তাঁর বাব-মা গত জন্মে কোনও ভুল করেননি। তাঁর বাবা-মা কোনও ভুলের ফল পাননি। শুধু তার বাবা মা কেন, দেশের কোনও বাবা-মা, যাদের ছেলে না হয়ে মেয়ে হয়েছে তারা কেউই কোনও ভুল করেননি। এটাই প্রমাণ করলেন ভারতের ব্রোঞ্জ জয়ী মহিলা বক্সার লভলিনা বড়গোহাঁই। তাঁর বক্সিং এর প্রত্যেকটা পাঞ্চ যেন, সব অপমানের উত্তর দিচ্ছিল। অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জিতে ভারতের কুসংস্কারের মুখে যেন কশিয়ে একটা চড় মারলেন লভলিনা। বাবা মা নাকি ভুল করেছেন! গত জন্মে ভুল করেছিল তাই ছেলে না হয়ে তিনটে মেয়ে হয়েছে। আর পূর্ব জন্মের ভুলের শাস্তি পেতেই এবারে তিনটে মেয়ে হয়েছে। এটাও শুনতে হয়েছিল ভারতের ব্রোঞ্জ জয়ী মহিলা বক্সার লভলিনা বড়গোহাঁইকে। 

পর পর তিন মেয়ের জন্ম দেওয়ায় বাবা মাকে বহু অপবাদ, গঞ্জনা শুনতে হয়েছে। প্রতি নিয়ত এটা শুনেই বড় হয়েছিলেন লভলিনা বড়গোহাঁই। যা বড় হওয়ার পরেও প্রতি নিয়ত কানের কাছে শুনতে পেতেন ভারতের ব্রোঞ্জ জয়ী মহিলা বক্সার। এই কুসংস্কাররের বিরুদ্ধে জবাব দিতে চেয়েছিলেন তিনি। টোকিও অলিম্পিক্সে পদক জেতার পরে সেটাই যেন দিলেন। ব্রোঞ্জ জয়ের পরে নিজের অতীতের কথা জানালেন লভলিনা। বুকের মধ্যে বহু যন্ত্রনা নিয়েই এই কথা গুলো বলছিলেন তিনি। আসলে অলিম্পিক্সে পদক জিতে যেন সেই সব অপমানের জবাব দিলেন ভারতের এই মহিলা বক্সার।

পদক জেতার পরে লভলিনা বড়গোহাঁই বলেন, ‘আসলে আমরা তিন মেয়ে ছিলাম, অন্ধবিশ্বাসী লোকজন বলতেন আমার মা বাবা গত জন্মে কোনও ভুল করেছিলেন যে কারণে ওদের মেয়ে হয়েছে।’ লভলিনার এই কথাই বলে দিচ্ছিল যে ভারতে এখনও কতটা কুসংস্কার ছড়িয়ে রয়েছে। এছাড়াও ভারতে মেয়েদের সর্বত্র কী ভাবে দেখা হয় সেটাও বোঝা যাচ্ছিল। 

তবে লভলিনা এখানেই থেমে থাকেননি, তিনি জানান মেয়ে হয়ে বক্সার হওয়ার জন্য রিং-এর বাইরে তাঁকে কত কঠিন লড়াই করতে হয়েছিল। এরপরেও কত কিছু ত্যাগ করে আজ লভলিনা বড়গোহাঁই ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন, তারও ব্যাখ্যা দিলেন তিনি। লভলিনা জানান, অলিম্পিক্সের জন্য তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে সমস্ত রকম যোগাযোগ ছেড়ে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, অলিম্পিক্সের অনুশীলনে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তারজন্য পছন্দের খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন লভলিনা। খেলায় প্রভাব পড়বে এই কথা ভেবে ছোট থেকে আজ পর্যন্ত কোথাও ঘুরতে যাননি লাভলিনা। তাই তিনি এবার ঘুরতে যেতে চান, তবে ২০২৪ অলিম্পিক্সের ভাবনা এখন থেকেই তৈরি করে দিলেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.