সমাজবাদী পার্টির কোভিড রাজনীতি : কেন তারা উত্তর প্রদেশের ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়াকে কে লাইনচ্যুত করতে চায় ?

সমাজবাদী পার্টির কোভিড রাজনীতি : কেন তারা উত্তর প্রদেশের ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়াকে কে লাইনচ্যুত করতে চায় ?

গোটা বিশ্ব এটা বুঝেছে যে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে ভ্যাকসিন মানবজাতির একমাত্র রক্ষাকর্তা। ভারত বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি দেশের মধ্যে পড়ে যারা নিজের ভ্যাকসিন বানাতে সক্ষম হয়েছে এবং এখানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া চলছে। ভারত বিশ্বের দ্রুততম দেশ যে নিজের ১৭ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়েছে।

এই সংখ্যাটি আমেরিকার প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার বা ইংল্যান্ডের প্রায় ২.৫ গুন জনসংখ্যার সমান। এই সংখ্যায় যোগীর উত্তর প্রদেশের উল্লেখযোগ্যভাবে যোগদান আছে।আজ পর্যন্ত উত্তর প্রদেশ প্রায় তাদের ১.৪৫ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়েছে, এর মধ্যে আছে ১৮+ বয়সের ১৩.৩৯ লাখ, ৭৫ জেলায় উপস্থিত ৬০৭৬টি ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্রের সাহায্যে।

প্রথম এবং দ্বিতীয় দফার ভ্যাকসিনেশনে দ্বিধা এবং সংশয় তৈরি করেছিল ভীতির পরিবেশ। সমাজবাদী পার্টির সভাপতি একটি সাংবাদিক সম্মেলনে দায়িত্বহীন ও অবৈজ্ঞানিকভাবে তার সনর্থকদের বলেছিলেন যে ” এটা বিজেপির ভ্যাকসিন এবং আমি এই ভ্যাকসিন নেব না”।

২০১৭ এর বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় ৩.৫ কোটি ভোটার ভোট দিয়েছিল বিজেপিকে এবং ১.৮ কোটি ভোটার ভোট দিয়েছিল সমাজবাদী পার্টিকে। অখিলেশ যাদব কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে এই দায়িত্বহীন রাজনৈতিক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কোটি কোটি মানুষের জীবীন নিয়ে খেলেছেন।

তার পদানুসরণ করে সমাজবাদী পার্টির MLC আশুতোষ সিনহা আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেন, এই ভ্যাকসিন পুরুষত্বহীনতা নিয়ে আসতে পারে, পার্টির কোনো কারজকর্তা যেন এই ভ্যাকসিন না নেয় এবং উত্তর প্রদেশের জনগণও যেন এই ভ্যাকসিন না নেয়।

একদিকে যোগী আদিত্যনাথ চেষ্টা করছেন যাতে উত্তর প্রদেশের একটা বড় সংখ্যক মানুষকে তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন দেওয়া যায়, যার কারণে হার্ড ইমুনিটি তৈরি হবে, অন্য দিকে অখিলেশ যাদব এবং তার পার্টি মানুষের মধ্যে দ্বিধা এবং সংশয় তৈরি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু উত্তর প্রদেশের সাধারণ মানুষ অখিলেশ যাদব এবং তার পার্টির নোংরা রাজনীতিকে শুঁকে নিতে পেরেছে।

কোভ্যাক্সিন, ভারতের নিজের তৈরি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়ে আমেরিকার হোয়াইট হাউসের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাক্তার অ্যান্থনী ফাউসি এবং আমেরিকার বিখ্যাত মহামারী বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন যে কোভ্যাক্সিন, B.১.৬১৭ ভ্যারিয়েন্টকে নিস্ক্রিয় করতে সক্ষম। ICMR এর তথ্য অনুযায়ী খুবই নগণ্য ০.২%-০.৪% ম্যানুষ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার পর আক্রান্ত হতে পারে।

ভাল খবর এটাই যে, অখিলেশ যাদব এবং তার পার্টির ভ্যাকসিন নয় সংশয় তৈরি করার হাজার চেষ্টাকে ব্যর্থ করে উত্তর প্রদেশের যুবক-যুবতীরা CoWin অ্যাপে উদ্দীপনার সাথে নিজেদেরকে নিবন্ধিত করছে। ভ্যাকসিনেশনের তৃতীয় দফা থেকেই ১৮+ রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। এদিকে যোগী সরকার সবরকম প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে এই ভ্যাকিসনের চাহিদাকে পূরণ করার জন্য, কেন্দ্র সরকারের দেওয়া ভ্যাকসিন ব্যতীত যোগী সরকার নিজে ৫ কোটি ভ্যাকসিনের জন্য টেন্ডার জারি করেছে।

এর আগেও রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীরা ভ্যাকসিন নিয়ে গুজব রটানোর চেষ্টা করেছে প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভ্যাকসিনেশনে, যেটা কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে বহু রাজনৈতিক নেতা এই দুর্যোগকে একটি রাজনৈতিক সুযোগ হিসাবে দেখে এবং সংশয়, ভয় এবং ভুল তথ্য ছড়াতে থাকে।

যোগী আদিত্যনাথ কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পর নিজেই হাসপাতালে গিয়ে বেড, অক্সিজেন, মেডিকেল সাপ্লাই এবং অন্যান্য জিনিসের উপস্থিতি যাচাই করেন, ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্রে গিয়ে সব ব্যবস্থা দেখেন এবং প্রয়োজনমত স্থানীয়, কেন্দ্রীয় বা বিদেশী সহায়তার সাহায্যে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেন।

উত্তর প্রদেশের মানুষ যখন সমস্যায় তখন অখিলেশ যাদব নিজেকে প্রাসাদে আটকে রেখে কেবল ভয় ও সংশয় ছড়ানোর টুইট করে গেছেন। তার ফেসবুকের প্রত্যেকটি পোস্টে মানুষের দুর্দশার সুযোগ নিয়ে কেবল রাজ্য সরকারকে দোষারোপ করে গেছেন। ২০১৭ বিধানসভা এবং ২০১৯ লোকসভায় খারাপ ফল করার পর কোভিড রোগীদের দুর্দশার উপার দাঁড়িয়ে ২০২২ এ ভালো ফল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হয়তো সেজন্যই অখিলেশ যাদব চাননা যে উত্তর প্রদেশের কোভিড অবস্থার আর উন্নতি হোক, হয়তো সে জন্যই এই বড় ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়াকে লাইনচ্যুত করতে চাইছেন ।

কিন্তু উত্তর প্রদেশের মানুষ যথেষ্ট বুদ্ধিমান, তারা জানে যে অখিলেশ যাদবের মত একজন গুরুত্বহীনতাযুক্ত, অবৈজ্ঞানিক নেতা যদি রাজ্যের ভার সামলাতেন তাহলে তাদের কী করুন অবস্থা হত। প্রথম স্তরের মিডিয়া উত্তর প্রদেশে গত ১০-১২ দিনে কোভিডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোকে বিস্ময়কর মনে করেনি। একই অবস্থায় থাকা অন্য এক রাজ্য- মহারাষ্ট্র গত ১ মাসে উপর কোনো উন্নতি করতে পারেনি যেখানে মহারাষ্ট্রের জনসংখ্যা উত্তর প্রদেশের অর্ধেক এবং সেটি বেশি সম্পদশালী রাজ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.