ভারী বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত জম্মু ও কাশ্মীর। শ্রীনগরে ফুঁসছে ঝিলম নদী। জলস্তর বিপদসীমা ছুঁইছুঁই। অন্যদিকে মঙ্গলবারের ধসের জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বৈষ্ণোদেবী যাত্রা। দুর্যোগে অন্তত ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই পুন্যার্থী। বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার জম্মুর রেইসি জেলায় অর্ধকুঁয়ারীতে ইন্দ্রপ্রস্থ ভোজনালয়ের কাছে ধস নামে। ওই ধসের জেরে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া জম্মুর ডোডা জেলায় বৃষ্টি এবং হড়পা বানের জেরে চার জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।
বৈষ্ণোদেবীর পথে ধসে নিহতদের দেহ কাটরা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে জম্মুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে। সেখানে এখনও পর্যন্ত ১৮ জনের দেহ শনাক্ত করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে পঞ্জাব, দিল্লি, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা রয়েছেন। কাটরার এক হাসপাতালে ১৩ জন আহত পুন্যার্থী ভর্তি রয়েছেন। বুধবার তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে যান জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিংহ। আহতদের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন তিনি। তাঁদের পরিবারকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাসও দেন। এ ছাড়া নিহতদের পরিবারপিছু ৯ লক্ষ আর্থিক সহায়তারও ঘোষণা করেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর।
প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বৈষ্ণোদেবী যাত্রার অনুমতি নিয়েও। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা স্বয়ং এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। দুর্যোগের সতর্কবার্তা থাকার পরেও আধিকারিকেরা কেন পুন্যার্থীদের যাত্রায় বাধা দেননি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। সংবাদমাধ্যমকে ওমর বলেন, “আবহাওয়ার সতর্কবার্তা আমাদের কাছে কয়েকদিন আগেই এসেছিল। যখন আমরা আবহাওয়া সম্পর্কে জানতাম, তখন জীবন বাঁচানোর জন্য আমাদের কি পদক্ষেপ করা উচিত ছিল না? তখন কেন মানুষ যাত্রাপথে (বৈষ্ণোদেবী যাওয়ার রাস্তায়) ছিলেন? কেন তাঁদের থামানো হয়নি? কেন নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি? এ বিষয়ে আমাদের পরে কথা বলতে হবে।”
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের ত্রিকূট পাহাড়ের বুকে অবস্থিত বৈষ্ণোদেবী মন্দির। এই মন্দিরে তীর্থযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে বৈষ্ণোদেবী মন্দির পরিচালন সমিতি (শ্রী মাতা বৈষ্ণোদেবী শ্রিন বোর্ড)। এই সমিতির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ। যদিও দুর্যোগের মধ্যে যাত্রীর অনুমতি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুললেও ওমর সরাসরি কারও নামোল্লেখ করেননি।
পাহাড়ের উপরে অবস্থিত বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে পৌঁছানোর জন্য দু’টিই রাস্তা রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ধস নামা রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হলেও অন্যটি খোলা ছিল। মঙ্গলবার সকালে ধসের পরেও অন্য পথ দিয়ে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পুন্যার্থীদের যেতে দেওয়া হয়েছে। তার পরে দ্বিতীয় পথটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। জানিয়ে দেওয়া হয়, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত বৈষ্ণোদেবী যাত্রা বন্ধ থাকবে।
জম্মুতে গত ১১৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে মঙ্গলবার। আধিকারিক সূত্রে খবর, জম্মুতে মঙ্গলবার ৩৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ১৯১০ সালে জম্মুতে বৃষ্টিপাত পরিমাপের ব্যবস্থা শুরু হয়। তার পর থেকে সেখানে ২৪ ঘণ্টায় এত বৃষ্টি দেখা যায়নি। এর আগে ১৯৮৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ২৭০.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল জম্মুতে। জম্মুতে তাওয়ি নদীর উপর এক সেতু হড়পা বানে ভেঙে গিয়েছে। বুধবার সেই সেতুটি পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী ওমর। দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি কারণে বিঘ্নিত হওয়া ইন্টারনেট পরিষেবা দ্রুত স্বাভাবিক করার জন্যও বিএসএনএল এবং অন্য টেলিকম সংস্থাগুলিকে অনুরোধ করেছেন ওমর।
হড়পা বান এবং ভূমিধসের কারণে জম্মু-পাঠানকোট, জম্মু-শ্রীনগর এবং বাতোতে-ডোডা-কিশ্তওয়ার সংযোগকারী জাতীয় সড়কেও কিছু কিছু অংশে যান চলাচলও সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে হয়েছে। গত তিন দিনের ভারী বর্ষণের জেরে জম্মুর বেশ কিছু জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা এবং উদ্ধার অভিযানে নেমেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দল, পুলিশ এবং সেনা। আটকে পড়া মানুষদের নৌকায় করে উদ্ধার করা হচ্ছে। জম্মুর বিভিন্ন নীচু এলাকা থেকে এখনও পর্যন্ত পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
শ্রীনগরে ঝিলম নদী প্রায় কানায় কানায় ভরে গিয়েছে। নদীর জলস্তর বিপদসীমা ছুঁইছুঁই। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কাশ্মীরে ২০১৪ সালের বন্যার কথা মাথায় রেখে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করছে শ্রীনগরের প্রশাসনও। কাশ্মীরের বিভাগীয় কমিশনার অনশুল গর্গ জানান, নদীর জলস্তরের দিকে নজর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে। দক্ষিণ এবং মধ্য কাশ্মীরে সকল ডেপুটি কমিশনারেরা সরেজমিনে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের সব স্কুল-কলেজও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

