২৫ কোটির বোলারের হাত ধরে আইপিএলের ফাইনালে কেকেআর, রবিতে ট্রফির লড়াইয়ে বাদশার কলকাতা

২০২১ সালের পর আবার আইপিএল ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্স। সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে ৮ উইকেট হারিয়ে দিলেন শ্রেয়স আয়ারেরা। প্যাট কামিন্সদের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জ্বলে উঠলেন মিচেল স্টার্ক। প্রথম পাঁচ ওভারের মধ্যে ৩ উইকেট নিয়ে কেকেআরকে চালকের আসনে বসিয়ে দেন ২৫ কোটির বোলার। হায়দরাবাদের ১৫৯ রানের জবাবে কেকেআর ১৩.৪ ওভারে ২ উইকেটে করল ১৬৪ রান। ২০ ওভারের ম্যাচে ৩৮ বল বাকি থাকতেই ফাইনালে চলে গেল কলকাতা।

টস জিতে আমদাবাদের ২২ গজে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন কামিন্স। প্রায় সব দলকে ভোগানো ট্রেভিস হেড-অভিষেক শর্মার ওপেনিং জুটি কোয়ালিফায়ারে ব্যর্থ হল। ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই হেডের (শূন্য) স্টাম্প ছিটকে দেন স্টার্ক। দ্বিতীয় ওভারে অভিষেককে (৩) আউট করেন বৈভব অরোরা। ১৩ রানে ২ উইকেট নিয়ে চাপে পড়ে যায় হায়দরাবাদ। স্টার্ক প্রতিপক্ষকে আরও কোণঠাসা করে দিলেন নিজের তৃতীয় ওভারে। শেষ দু’বলে পর পর আউট করলেন নীতীশ কুমার রেড্ডি (৯) এবং শাহবাজ় আহমেদকে (শূন্য)। স্টার্ক অবশ্য হ্যাটট্রিক পেলেন না। ১৯তম ওভারে তাঁর হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা নষ্ট করে দেন কামিন্স। হায়দরাবাদের ব্যাটারদের দেখে প্রথম থেকেই বোঝা যাচ্ছিল চাপে রয়েছেন। খুচরো রান নেওয়ার ক্ষেত্রেও ঠিক মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না তাঁরা।

৩৯ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর হায়দরাবাদকে লড়াইয়ে ফেরান তিন নম্বরে নামা রাহুল ত্রিপাঠী এবং ছ’নম্বরে নামা হেনরিখ ক্লাসেন। পঞ্চম উইকেটে জুটিতে আগ্রাসী মেজাজে তাঁরা তুললেন ৬২ রান। পাল্টা আক্রমণের জন্য হায়দরাবাদের দুই ব্যাটার মূলত বেছে নিয়েছিলেন সুনীল নারাইনকে। বিশেষ করে ক্লাসেনকে আটকাতে পারছিলেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের অলরাউন্ডার। এ সময় শ্রেয়সের এক চালে সাজঘরে আবার লড়াইয়ে ফেরে কেকেআর। আক্রমণে আনেন বরুণ চক্রবর্তীকে। তাঁর বলে ঠকে যান ক্লাসেন (২১ বলে ৩২)। জুটি ভাঙার পর নিজের ভুলে আউট হলেন রাহুলও। ৩৫ বলে ৭টি চার এবং ১টি ছক্কার সাহায্যে ৫৫ রান করে আউট হন তিনি। নিজের ভুলে আউট হয়ে হতাশ রাহুল সাজঘরে ফেরার সিঁড়িতে মাথা নীচু করে বসেছিলেন বেশ কিছু ক্ষণ। তাঁর সেই বসে থাকার ছবি ভাইরাল হতে সময় লাগেনি। এর পর আর হায়দরাবাদ তেমন রান তুলতে পারেনি। আবদুল সামাদ করেন ১২ বলে ১৬। শেষ দিকে ২টি করে চার এবং ছয়ের সাহায্যে কামিন্সের ২৪ বলে ৩০ রানের ইনিংস হায়দরাবাদকে লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছে দেয়। ৩ বল বাকি থাকতে ১৫৯ রানে শেষ হয় কামিন্সদের ইনিংস।

এ দিন কেকেআরের সব বোলার উইকেট পেলেন। সফলতম স্টার্ক ৩৪ রানে ৩ উইকেট নিলেন। ২৬ রানে ২ উইকেট বরুণের। ১৫ রানে ১ উইকেট রাসেলের। ১৭ রানে ১ উইকেট বৈভবের। ২৭ রানে ১ উইকেট নিলেন হর্ষিত রানা। নারাইনের ১ উইকেট এল ৪০ রান খরচ করে।

জয়ের জন্য ১৬০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা কেকেআর প্রথম থেকেই ছিল সাবলীল। নারাইন-রহমানুল্লাহ গুরবাজ়ের নতুন ওপেনিং জুটিও ভরসা দিলেন দলকে। আফগান উইকেটরক্ষক-ব্যাটার করলেন ১৪ বলে ২৩ রানের ইনিংস। ২টি চার এবং ২টি ছক্কা এল তাঁর ব্যাট থেকে। নারাইন করলেন ১৬ বলে ২১। ৪টি চার মারলেন তিনি। আমদাবাদের ২২ গজে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেললেন বেঙ্কটেশ আয়ার, শ্রেয়সও। কামিন্সেরা তাঁদের সমস্যায় ফেলতে পারলেন না। ব্যাটিং ধস সামলাতে আগেই ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে এক জন অতিরিক্ত ব্যাটার নামাতে বাধ্য হয় হায়দরাবাদ। তাতে কামিন্সদের বোলিং আক্রমণও কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। বেঙ্কটেশ ২৮ বলে ৫১ রান করে অপরাজিত থাকলেন। মারলেন ৫টি চার এবং ৪টি ছক্কা। শ্রেয়সও ৫টি চার, ৪টি ছক্কার সাহায্যে খেললেন ২৪ বলে ৫৮ রানের অপরাজিত ইনিংস।

হায়দরাবাদের বোলারদের মধ্যে সফলতম নটরাজন ২২ রানে ১ উইকেট নিলেন। ৩৮ রান খরচ করে ১ উইকেট কামিন্সের। আর কোনও বোলার উইকেট পেলেন না। প্রথম কোয়ালিফায়ারে হেরে গেলেও আইপিএলের ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ আছে হায়দরাবাদের সামনে। বুধবার এলিমিনেটরে রাজস্থান রয়্যালস এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর মধ্যে বিজয়ী দলের সঙ্গে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলবেন কামিন্সেরা। সেই ম্যাচ জিতলে ফাইনালে আবার কেকেআরের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পাবেন তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.