কেন্দ্রের নয়া শিক্ষানীতি মানতে কোনও রাজ্যকে বাধ্য করা যাবে না! জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট, খারিজ জনস্বার্থ মামলা

নতুন শিক্ষানীতি চাপিয়ে দেওয়া যাবে না কোনও রাজ্যের উপর! শুক্রবার এক মামলায় এমনই মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি জেবি পারদিওয়াল এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ জানায়, কেন্দ্রের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত করার বিষয়ে কোনও রাজ্যকে বাধ্য করা যাবে না।

কেন্দ্রের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য আপত্তি তোলে। সেই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরলের মতো অবিজেপি দল শাসিত রাজ্যগুলি। কেন্দ্রের নির্দেশে দেশের অনেক রাজ্যে নতুন শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন হলেও বাংলা, তামিলনাড়ু এখনও নিজেদের পুরনো অবস্থানে অবিচল। প্রথম থেকেই তাদের বক্তব্য ছিল, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থা যৌথ তালিকাভুক্ত। তবে নয়া শিক্ষানীতি নিয়ে কেন্দ্র একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা সংবিধানবিরোধী। ওই রাজ্যগুলি এখনও পর্যন্ত নয়া শিক্ষানীতি চালু করেনি। কেন তারা কেন্দ্রের নির্দেশ মানছে না, সেই প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন জিএস মানি নামে এক আইনজীবী। তাঁর আবেদন, কেন্দ্রের নতুন শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন ঘটাতে রাজ্যগুলি সাংবিধানিক ভাবে বাধ্য। তাঁর কথায়, ‘‘তিন ভাষাকে কেন্দ্র করে এই নীতির বিরোধিতা করা হচ্ছে।’’ সুপ্রিম কোর্টের কাছে মামলাকরীর আবেদন, রাজ্যগুলিকে যেন জাতীয় শিক্ষানীতি মানতে বলা হয়!

নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে আপত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মামলাকারী। তাঁর দাবি, সংশ্লিষ্ট কয়েকটি রাজ্যের শাসকদল অহেতুক নতুন শিক্ষানীতিতে রাজনৈতিক রং লাগাচ্ছে। নতুন শিক্ষানীতি কেবল শিক্ষার ক্ষেত্রে অভিন্নতা প্রদান করতে চায়। সমাজের সকল স্তরের স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য সব ভারতীয় ভাষা বিনামূল্যে শেখানো উচিত।

তবে সুপ্রিম কোর্ট ওই আইনজীবীর আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। শীর্ষ আদালত জানায়, জাতীয় শিক্ষানীতি গ্রহণ করার জন্য কোনও রাজ্যকে বাধ্য করতে পারে না তারা। তবে রাজ্যের পদক্ষেপ যদি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে, তবে শুধু সে ক্ষেত্রেই আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় শিক্ষানীতিকে কেন্দ্র করে তামিলনাড়ুর সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের সংঘাত চরমে উঠেছে। জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। অন্য দিকে, ‘অবাধ্য’ তামিলভূমিকে সাজা দিতে শিক্ষাবিস্তারে আর্থিক অনুদান বন্ধ করছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী প্রশাসন। সমস্যার সূত্রপাত ২০২০ সালে। ওই বছর নতুন শিক্ষানীতি চালু করে কেন্দ্র। নতুন শিক্ষানীতির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, রাজ্যে রাজ্যে প্রথম ভাষা হিসাবে স্কুলপড়ুয়াদের বাধ্যতামূলক ভাবে শিখতে হবে মাতৃভাষা। দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে তাদের হিন্দি বা ইংরেজিকে বেছে নিতে হবে। এ ছাড়া তৃতীয় একটি ভাষাকে বাছতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে। সেটি হবে কোনও প্রাচীন ভারতীয় ভাষা। নতুন শিক্ষানীতির এই বিষয়টিতেই প্রবল আপত্তি রয়েছে তামিলনাড়ু-সহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.