দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে কোনও নোটিস ধরানো হয়নি, মিথ্যা রটানো হচ্ছে: আয়কর দফতর

ক’দিন আগেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন যে, দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে নোটিস ধরাচ্ছে আয়কর দফতর। করমুক্ত দুর্গাপুজোর দাবিতে মঙ্গলবার তাঁরই নির্দেশে আবার ধর্নায় বসেছিল তৃণমূলের বঙ্গজননী বাহিনী।

কিন্তু রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে প্রত্যক্ষ কর দফতরের তরফে জানিয়ে দেওয়া হল, মিথ্যা রটানো হচ্ছে। কোনও দুর্গাপুজো কমিটিকে এ বছর নোটিস ধরানো হয়নি।

প্রত্যক্ষ কর দফতরের মিডিয়া এবং টেকনিক্যাল পলিসি বিভাগের কমিশনার সুরভি আলুওয়ালিয়া মঙ্গলবার ওই বিবৃতি জারি করেন। সেই সঙ্গে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বোঝানোর চেষ্টা করেন, ঠিকাদার ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো যে কর ফাঁকি দিচ্ছে, তা আটকানোই তাঁদের লক্ষ্য ছিল। কোনও দুর্গাপুজো কমিটিকে বিপদে ফেলা বা সমস্যা তৈরি করা তাঁদের উদ্দেশ্য নয়।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, আয়কর বিভাগ জানতে পেরেছিল যে, দুর্গাপুজোর সময় প্যান্ডেল বা ইত্যাদি নির্মাণের কাজ করেন এমন বেশ কিছু ঠিকাদার সময়ে কর দিচ্ছিলেন না। এই কারণে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তিরিশটি পুজো কমিটির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে ঠিকাদারদের পেমেন্টের পর তারা উৎসমূলে কর কেটে নিয়েছে কিনা। সেই সংক্রান্ত স্টেটমেন্ট রয়েছে কিনা।

সুরভির আরও দাবি, অনেক পুজো কমিটি এ ব্যাপারে আয়কর বিভাগের সঙ্গে সহযোগিতা করে চলছেন। অনেকে উৎসাহী হয়ে জানতে চাইছেন, কী ভাবে উৎস মূলে কর কেটে নিয়ে তার পর ঠিকাদারদের পেমেন্ট করতে হবে। কী ভাবেই বা ওই টাকা সরকারের কোষাগারে জমা করতে হবে। এমনকী সম্প্রতি পুজো কমিটিগুলিকে নিয়ে একটি ওয়ার্কশপও করেছে আয়কর বিভাগ।

আয়কর দফতরের এক কর্তার কথায়, কিন্তু এই বিষয়টিকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিকৃত করে প্রচার করছে বাংলার শাসক দল। মানুষের কাছে এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, দুর্গাপুজো কমিটি গুলোর উপর কর চাপানো হচ্ছে। কিন্তু ব্যাপারটা আদৌ তা নয়। কলকাতায় বহু পুজো মণ্ডপ বহু লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি হয়। যে ঠিকাদার সে জন্য টাকা নিচ্ছেন, তাঁকে তো কর দিতেই হবে। সাধারণ মানুষ তাঁর আয়ের উপর যদি হাসিমুখে কর দিতে পারে, তা হলে ঠিকাদাররা কর দেবেন না কেন? তবে কি বুঝতে হবে ঠিকাদারদের স্বার্থ রক্ষায় মিথ্যা রটানো হচ্ছে?

কিন্তু আয়কর দফতর যখন এ কথা বলছে, তখন মঙ্গলবারও তৃণমূলের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্টুন প্রকাশ করে প্রচার চালানো হয়েছে যে পুজোর উপরেই কর ধার্য করা হচ্ছে। এমনকী খোঁচা দিয়ে এও লেখা হয়েছে যে, এ বার মা দুর্গার কাছেও আধার কার্ড, প্যান কার্ড দেখতে চাওয়া হবে। নইলে মর্ত্যে প্রবেশের অধিকার হয়তো মিলবে না তাঁর।

পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃণমূল রাজ্যের মানুষকে এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে যে আয়কর লেলিয়ে দিয়ে পুজো কমিটিগুলিকে বিজেপি-র কাছে আত্মসমর্পণ করাতে চাইছে মোদী সরকার। সম্ভবত সেই কারণেই গোটা বিষয়টি নিয়ে এ দিন ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রত্যক্ষ কর বিভাগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.