হয়রানিমূলকগ্রেফতারিবন্ধহ‌ওয়া_দরকার

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে গ্রেফতার । তা সে যে দলের সরকার‌ই এই অপকর্ম করুক এর একটা স্থায়ী নিষ্পত্তি দরকার । এ হল আইনকে ব্যবহার করে চরম বেআইনী কাজ । স্রেফ টাইট দেওয়ার জন্য‌ই যে ফালতু একটা মামলাকে বাহানা করে অর্ণব গোস্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে , তা অর্ণবের চরম শত্রুও জানে । অর্ণব গোস্বামীর মতো হাইপ্রোফাইল সেলিব্রেটি সাংবাদিক , যার প্রতি দেশের প্রধানমন্ত্রী – স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পর্যন্ত যথেষ্টই সহানুভূতি আছে তাঁকেও জামিন পাওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্ট ছুটতে হল । মহারাষ্ট্রে শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি জোটের সরকার । নিম্ন আদালত জামিন মঞ্জুর করল না । এমনকী মুম্বাই হাইকোর্ট‌ও জামিন নামঞ্জুর করে দিল । শেষে সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন মিলল অর্ণবের ।

ন্যায় বিচার পেতে অর্ণব গোস্বামীর মতো হাইপ্রোফাইল ও হাইলি পেইড সাংবাদিকের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হ‌ওয়ার সামর্থ্য আছে। দেশের ক’জন মানুষের পক্ষে সম্ভব দিল্লিতে গিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের ন্যায়াধীশদের কর্ণে নিজের আর্জি পৌঁছে দেওয়া ? সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের ফিজের পরিমাণ শুনলেই অনেকে বলবে , থাক বাবা দুটো দিন জেলেই থাকি ।

এই দেশে শত শত মানুষকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটতে হয় । মিথ্যা মামলার একটা বড় অংশ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা প্রসূত । পশ্চিমবঙ্গে ইদানিং গাঁজা কেস খুব জনপ্রিয় হয়েছে । কেউ বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাঁকে গাঁজা কেসে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় । পশ্চিমবঙ্গে আরামবাগের এক স্থানীয় সাংবাদিককে গুচ্ছের‌ মামলা দিয়ে জেলে ভরে দিয়েছিল প্রশাসন । আড়াই তিন মাস জেল খেটে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ওই সাংবাদিক ।

মানুষ অপরাধ করলে জেল খাটবে ঠিক আছে । কিন্তু একজন মানুষ ভিন্ন সুরে কথা বলছে দেখে , মানুষটির আওয়াজ বন্ধ করা যাচ্ছে না দেখে আট দশটা নন বেইলেবল ধারায় মামলা দিয়ে তাঁকে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার এই যে রেওয়াজ এটা আইনের অরাজকতা ছাড়া আর কিছু নয় । সবথেকে আশঙ্কার কথা এই প্রবণতা দলমত নির্বিশেষে বাড়ছে । প্রশাসনকে ব্যবহার করে এই যে নির্যাতন এটা আইনের শাসন বা রুল অব লয়ের জন্য চরম কলঙ্কের ।

সমাজে সবাই অর্ণব গোস্বামী কিম্বা রেহা চক্রবর্তীর মতো সেলিব্রেটি নন যে তাঁদের গ্রেফতারির খবর হ‌ইচ‌ই ফেলবে । হাজার হাজার সাধারণ মানুষ যখন প্রতিহিংসার শিকার হয়ে সাজানো মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলের ঘানি টানতে থাকে তাদের কথা কেউ জানতে পারে না । মামলা চালানোর খরচ দিতে দিতে অনেক পরিবার ফতুর হয়ে যায় । সুপ্রিম কোর্ট তো দূরের কথা হাইকোর্ট থেকে জামিন আনার সামর্থ্য‌ও থাকে না বহু ধৃতের । বেশ কয়েক বছর ধরে একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করছি যে নিম্ন আদালত গুলো ফৌজদারি মামলায় জামিন মঞ্জুর প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে । জামিন পেতে গেলেই হাইকোর্টে ছুটতে হচ্ছে বিচারপ্রার্থীকে । কেন এমন হচ্ছে আমার আইনজীবী বন্ধুরা ভাল আলোকপাত করতে পারবেন এই ব্যাপারে । পরিস্থিতি যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে , হয়রানি মূলক মামলা ও গ্রেফতারি প্রতিরোধে এবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতের একটা শক্তপোক্ত নির্দেশ দেওয়ার সময় এসে গেছে । ন‌ইলে আইনের শাসন বাণীটি অচিরেই ব্যঙ্গে পর্যবসিত হবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.