তা কী ঠিক করলেন? শরিয়া চাই, না চাই না? আফগানিরা কী ভাবছেন?

ফারখান্দা মালিকজাদা। একটু কষ্ট করে গুগল করুন নামটা। বানান Farkhunda Malikzada। ভদ্রমহিলার কথা সবে কাল জেনেছি আমি, ছবি দেখে শিউরে উঠেছি। আপনিও দেখুন রক্তাক্ত মুখটা। কোনও পাহাড় টাহাড়ে নয়, গাঁয়ে গঞ্জে নয়, খোদ কাবুলে ২০১৫ সালে এঁকে পাথর ছুঁড়ে মারা হয়েছে। পুলিশও বাঁচাতে পারেনি, থানার সামনেই পিটিয়ে মেরেছে লোকে। সাধারণ লোকে। সেই সব লোকে, যারা এখন আফগানিস্তান ছাড়তে প্লেন থেকে ঝুলে পড়ার প্রাণপণ কসরত করছে।

এক মৌলবী বলেছিল, ফারখান্দা কোরান পুড়িয়েছেন। ব্যস, স্রেফ এইটুকু। স্রেফ এই অভিযোগে, কোনও প্রমাণ ছাড়াই কাবুলের উন্নততর জনগণ তাঁর ওপর পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। পরে দেখা যায়, অভিযোগ মিথ্যে। যদিও তা সত্যি হলেও কাউকে এ জন্য খুন করা যায় বলে কোনও সভ্য সমাজ সম্ভবত বিশ্বাস করে না। ছবিটা দেখুন। দেখুন, ফারখান্দার পাশ থেকে কারা পাথর তুলে নিচ্ছে। সভ্যভব্য পোশাক পরা লোকজন। কোনও গুহামানব নয়।

এই এরাই এখন আবার বলছে, তালিবান ভয়ঙ্কর। তালিবান নাকি মহিলাদের মানুষ বলে মনে করে না। তাই যেভাবে হোক, একটা প্লেনে চড়ে বসতে হবে, দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। কিন্তু ২০১৫ সালে কারা শাসন করত আফগানিস্তান? তালিবান? সে তো ২০০১ থেকে ক্ষমতায় ছিল না। তাহলে কারা মারল ফারখান্দাকে? কাবুলের সাধারণ মানুষ তো। সাধারণ চাকরিজীবী, ব্যবসা করা, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। যারা মনে করে, একজন মানুষকে পাথর ছুঁড়ে মারা যায়। অথচ এই অপরাধে একজনেরও মৃত্যুদণ্ড হল না। থানার সামনে সব কিছু ঘটলেও পুলিশও ধামাচাপা দিল এত নৃশংস খুন।

আসলে ঘুমিয়ে আছে তালিবান মনস্কতা সব আফগানেরই অন্তরে। সব যদি নাও হয়, ৯৯%। Pew রিপোর্ট তো তাই বলছে। বাকি ১% তো ভয়ঙ্কর রকম সংখ্যালঘু। ওই যে মহিলা গভর্নর, কী যেন নাম। যিনি তালিবানের হাতে বন্দি। বেঁচে আছেন কিনা এখনও জানি না। ওই যে মহিলা পাইলট সাফিয়া ফিরোজি। ও না, তাঁকে তো আবার গতকাল তালিবানেরা পাথর ছুঁড়ে খুন করেছে। আর ওই ছোট্ট মেয়েটা, যাকে গায়ের জোরে তুলে নিয়ে যাচ্ছে একটা ঠাকুর্দার বয়সী লোক। ভিডিওয় দেখলাম। মেয়েটা প্রাণপণে চেঁচাচ্ছে। আশপাশের বোরখা পরা মহিলারা দেখছে। তার ভাষাটা বুঝি না। কিন্তু আর্তিটা বুঝি। তার মানে অবশ্য এমন নয়, যে বেশিরভাগ আফগান মহিলা তালিবান বিরোধী। বরং উল্টোটা। পুরুষদের মত আফগান মহিলারাও শরিয়া চায়, খাঁটি, নিষ্কলুশ, ভেজালহীন তালিবানি শাসন চায়। তালিবান যোদ্ধাদের বাড়িতে ডেকে যথেষ্ট যত্নআত্তি করত তারা, রেঁধেবেড়ে খাওয়াত। এত চাওয়া চাওয়ির ফল মিলেছে। তালিবান এসে পড়েছে হুড়মুড়িয়ে। এখন চাই না বললে চলবে কেন?

আজহারউদ্দিনের একটা কথা আমি খুব মানি। একটা দল তেমনই ক্যাপ্টেন পায়, যেমনটা তারা ডিসার্ভ করে। আফগানরা যেমন শাসন চেয়েছে তেমনই পেয়েছে তো। এখন তাদের পছন্দ হচ্ছে না, মনে হচ্ছে, এ সব খাঁটি শরিয়া টরিয়া দূর থেকেই ভাল দেখাত। এখন তারা প্লেন ট্লেন থেকে ঝুলে পড়ছে, চেষ্টা করছে সুবিধেজনক কোনও দেশে চলে যাওয়ার। যেখানে শরিয়া নেই। তাই যেখানে একটু গুছিয়ে বসেই শরিয়ার দাবি তোলা যাবে।

কাবুলিওয়ালার বাঙালি বৌ সুস্মিতা বাঁড়ুজ্যের বাঙালি ছেলে পোষাত না। তারা সবাই ন্যাকা, মায়ের আঁচল ধরা। তা সুস্মিতা আফগানিস্তান গিয়ে দেখলেন, তাঁর এমন দুর্দান্ত প্রেমিক বর জাঁহাবাজ খানের আরও একটি স্ত্রী সেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে। রাত্রিবাস টাস সবই এক সঙ্গে এক ঘরে হয়। এই তো অবস্থা। তা কী ঠিক করলেন? শরিয়া চাই, না চাই না? আফগানিরা কী ভাবছেন?

মনামী বন্দ্যোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.