দায় নেবেন মমতা ? নেওয়া তো উচিত, এই অকাল মৃত্যুর ? ড: অবন্তিকা ভট্টাচার্যের । ছোট্ট একটা অসহায় মেয়েকে রেখে যিনি জীবন থেকে ছুটি নিলেন ক্ষোভে, ঘৃণায়, দুঃখে ।

দায় নেবেন মমতা ? নেওয়া তো উচিত, এই অকাল মৃত্যুর ? ড: অবন্তিকা ভট্টাচার্যের । ছোট্ট একটা অসহায় মেয়েকে রেখে যিনি জীবন থেকে ছুটি নিলেন ক্ষোভে, ঘৃণায়, দুঃখে ।

কি চেয়েছিলেন ড: অবন্তিকা ? আট বছর নাগাড়ে মেদনিপুর মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি করার পর তাঁর পাওনা হয়েছিল হোম টাউনে ফেরার হকটা । সেই মত আবেদনও করেছিলেন । স্বামী কান্দিতে, অটিজমে আক্রান্ত কন্যা কলকাতায়, নিজে মেদনিপুরে মানুষের রোগ সরাচ্ছেন দিন রাত এক করে । চেয়েছিলেন কলকাতায় কোন একটা হাসপাতালে ফিরতে । সেটা তাঁর পাওনাও ছিল । দেয়নি এই সরকার । পাননি ড: অবন্তিকা । দিনের পর দিন স্বাস্থ্য ভবনে দরবার করেও । ৮ বছর বাদে মেদনিপুর থেকে ট্রান্সফার করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ডায়মন্ড হারবারের এক হাসপাতালে ।

অসহায়,বিপর্যস্ত অবন্তিকা স্বাস্থ্য ভবনের এই নির্দেশিকায় ভেঙে পড়েছিলেন । ফেস বুক পোস্টে হৃদয় নিংড়ে লিখেছিলেন – Where peace lies for me – Job resignation ? After 8 years of peripheral service….again dragged to another peripheral service…in the same job capacity….can’t take it any more.

আর তারপর, শেষ পর্যন্ত স্বেচ্ছা মৃত্যুটাকেই বেছে নিলেন । আজ তাঁর মৃত্যু সংবাদ ধ্বনিত হল । সমাজও সেই সংবাদ পেল ইথার তরঙ্গে । তাঁর ছোট্ট অসহায় শিশু কন্যা কি পেল, কি বুঝল জানিনা ।

কতটা নির্লজ্জ ভাবুন সান্তনু সেন ! এই মর্মান্তিক সংবাদ পেয়েও, ঘটনা পরম্পরা অবন্তিকা নিজেই লিখে যাওয়ার পরও, আজ সংবাদ মাধ্যমে বসে সান্তনু বলছেন এর সঙ্গে সরকারের ট্রান্সফার পলিসির কোন সম্পর্ক নেই !

ভাগ্যিস অবন্তিকা বেঁচে নেই । ওঁর জীবন কালে এ হেন নির্বোধের আস্ফালন শুনলে অবন্তিকার বেঁচে থাকাটাই কতটা যন্ত্রণাদায়ক হত কেউ ভেবে দেখেছেন ?

গত দু সপ্তাহে এভাবেই কলকাতা তো দেখেছে শুধু প্রতিবাদ করার খেসারত দিয়ে দু দফায় ২৬ জন সামান্য বেতন পাওয়া শিক্ষিকা চারশো, পাঁচশো কিলোমিটার দূরে ট্রান্সফার হয়েছেন । তাঁদেরই ৫ জন বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করতে গেছেন ।

এই কলকাতাই তো দেখেছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা করতে করতে আক্রান্ত হওয়া এক ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মেডিক্যাল কলেজে ও পরে মেডিকায় চল্লিশ দিন যুঝে শেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন । তাঁর স্ত্রী বিষ্ণুপুর সদর হাসপাতালে চাকরী করতেন । একমাত্র কন্যাকে নিয়ে কলকাতার কাছাকাছি কোথাও একটা আসতে চেয়েছিলেন । তিন বার স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে কথা বলে, স্বাস্থ্য ভবনের প্রায় সব অফিসারের সঙ্গে কথা বলেও আজও পাননি সামান্য সেই প্রত্যাশা পূরণ । এক প্রয়াত কভিড যোদ্ধার অসহায় সহধর্মিনীর এই করুণ পরিণতি নিয়ে দেখেছেন কেউ কোন বাংলা সংবাদ মাধ্যমকে কথা বলতে ?

এগুলো তো সব সাম্প্রতিক ঘটনা ।

গত দশ বছর ধরে ঐ স্বাস্থ্য ভবন থেকে নির্যাতনের নির্দেশ নামায় কত সহস্র ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন কেউ খবর রাখি আমরা ? ড: শ্যামাপদ ঘরুই, ড: অরুণ সিংহ, ড: অরুণাচল দত্ত চৌধুরীর প্রতি সরকারের নির্মম আচরণ তো আজ ইতিহাস । অবন্তিকার অকাল মৃত্যুর কাহিনী শুধু তার সর্বশেষ সংযোজন । বোধহয় নিষ্ঠুরতম ।

সান্তনু সেন, নির্মল মাঝিদের ফোঁড়েবাজীর রাজত্বে এই নির্মমতা, এই নিষ্ঠুরতা, এই নির্লজ্জতা স্বাভাবিক যুক্তিতেই প্রত্যাশিত । আমি নিজে অবাক হই না আর ।

কিন্তু যেটা আমাকে আজ সত্যিই বিস্মিত করেছে এত বীভৎস এক ঘটনা ঘটার পরও বাংলার পরিচিত বড় বড় ডাক্তাররা যাঁদের অমৃত বাণীতে মাঝে মাঝে সান্ধ্য কিম্বা বৈকালিক টি ভিতে আমরা সমৃদ্ধ হই তাঁরাও আজ নীরব ? কেন ? কিসের স্বার্থে ?

এক তরুণ সতীর্থের অকাল মৃত্যুর (হত্যার) প্রতিবাদ না করে কাউকে খুশী রাখাটাও কি এই মুহূর্তে তাঁদের কাছে অনেক বেশী অনিবার্য ?

উত্তর দেবেন কি তাঁরা ? এই অসময়ে ? ড: অবন্তিকার হারিয়ে যাওয়ার দিনে ?

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.