সীমান্তে পাকিস্তানের আগ্রাসনের যোগ্য জবাব দিল ভারত, নিহত আট পাক সেনা

দীপাবলীর মুখে আলোর উত্সবকে রক্তাক্ত করে তোলার সমুচিত ফল পেল পাকিস্তান। আচমকাই দীপাবলির আগে উত্তপ্ত ভারত-পাক সীমান্ত। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে অবিশ্রান্ত ভাবে গুলি ও বোমা বর্ষণ করছিল পাক সেনা। পালটা জবাব দেয় ভারত। এতে নিহত হয়েছে কমপক্ষে আটজন পাকিস্তানের সেনা। এর মধ্যে আছে দুই-তিনজন পাকিস্তান স্পেশ্যাল সার্ভিস গ্রুপের কম্যান্ডো বলে ভারতীয় সেনার সূত্রে জানা গিয়েছে। ভিডিওতেই স্পষ্ট পাকিস্তানের বাঙ্কার, লঞ্চ প্যাড ও ফুয়েল ডাম্প এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আটজন মারা গিয়েছে ও গুরুতর আহত হয়েছে ১০-১২ জন পাক সৈনিক। সূত্রের খবর, পাকিস্তানি শিবিরে নিহতদের মধ্যে আছে ২-৩ জন পাক সেনার স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের কম্যান্ডো । সব মিলিয়ে অন্তত ৮ পাক সেনা জওয়ান নিহত হয়েছে।


এর আগে পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীদের অনুপ্রবেশ রুখতে গিয়ে ও যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জেরে প্রাণ হারিয়েছে তিন ভারতীয় সেনা। এদের মধ্যে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে উরি সেক্টরে, একজনের গুরেজে। এছাড়াও মৃত্যু হয়েছে একজন বিএসএফ জওয়ান ও চারজন সাধারণ মানুষের। একজন মহিলা ও সাতবছরের ছেলে সহ চারজন অসামরিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে উরিতে। পাক শেলিংয়ে মৃত্যু হয়েছে তাদের।এছাড়াও আহত হয়েছেন চারজন।
সেনার মুখপাত্র কর্নেল রাজেশ কালিয়া জানিয়েছেন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ডায়ার, কেরান, উরি ও নৌগাম সেক্টরে শেলিং করেছে পাকিস্তান। জেনেবুঝে যেখানে অসামরিক নাগরিকরা থাকে সেখানে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান, বলে তিনি জানান। তবে কর্নেল জানান যে ভারতীয় সেনা যোগ্য জবাব দিয়েছে।
নৌগামে একজন বিএসএফ জওয়ানের শেলিংয়ে মৃত্যু হয়েছে। তবে কেরান ও উরি সেক্টরে যেরকম শেলিং হয়েছে, সেটা সাম্প্রতিক কালে হয়নি বলেই জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সারাদিন শুধু রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সের হুটার ও বোমার আওয়াজে আতঙ্কে শিঁটিয়ে আছেন নাগরিকরা।
জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপার থেকে যুদ্ধবিরতি ভেঙে হামলা করেছিল পাক সেনা। পাশাপাশি পাক সেনার মদতে ভারতে অনু্প্রবেশের চেষ্টাও করে সন্ত্রাসবাদীরা। তাদের ছক বানচাল করতে গিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরে দুটি পৃথক জায়গায় তিন ভারতীয় সেনা জওয়ান নিহত হন। উরি সেক্টরে প্রাণ হারান ২জন, একজন গুরেজ সেক্টরে।
সূত্রের খবর, পাকিস্তান দাওয়ার, কেরান, উরি, নগাঁম সমেত একাধিক সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর কোনও প্ররোচনা ছাড়াই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামলা চালায়।
প্রতিরক্ষামন্ত্রক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, উত্তর কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলায় উরি সেক্টরের হাজিপুরে বিনা প্ররোচনায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিভঙ্গ করে ভারী গোলাবর্ষণ শুরু করে পাক সেনা। ভারতীয় সামরিক ছাউনির পাশাপাশি সীমান্ত লাগোয়া জনবসতি লক্ষ্য করেও গোলা ছুড়তে শুরু করে পাকিস্তান। পাক গোলাগুলির ঘায়ে মৃত্যু হয়েছে বিএসএফ-এর ১ জওয়ানের। সাব-ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার অফিসারে নাম রাকেশ ডোভাল। তিনি আর্টি রেজিমেন্টে পোস্টেড ছিলেন বলে জানিয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী। পাশাপাশি, ভারতীয় সেনার ২ জওয়ানেরও মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। তাঁরা দুজনেই ৫৯ রেজিমেন্টের সদস্য। এছাড়া, মৃত্যু হয় এম মহিলা সহ চার সাধারণ নাগরিকেরও। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ফারুকা বেগম, নাদির হুসেন, তাহির জালাউদ্দিন ও ইরশাদ আহমেদের। পাক গোলাগুলির ফলে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে গিয়েছে। তাঁদের সরে যেতে সাহায্য করেছে বাহিনী। অনেকে আবার বাঙ্কারে নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়েছেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রক সূত্রে খবর, এদিন কামালকোট সেক্টরের চুরান্দা, সিলিকোট, গরকোট, হাতলাঙ্গা, নাম্বলা ও রুস্তম মোহল্লায় ভারী গোলাবর্ষণ শুরু করে পাক বাহিনী। পাশাপাশি, গুরেজ সেক্টরের বান্দিপোরায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করেছে পাক সেনা। সেখানেও চার নাগরিকের আহত হওয়ার খবর মিলেছে। এদের মধ্যে ২ জন কিশোরী ও ২ জন প্রৌঢ়। আহতরা হল -রেহানা খুরশিদ, মুনাজা জামশিদ, জাবর আহমেদ ও সাদা বেগম।
অন্যদিকে, উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়াড়ার কেরন সেক্টরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ করে নিরাপত্তাবাহিনী। প্রতিরক্ষামন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ফরোয়ার্ড পোস্ট লাগোয়া অঞ্চলে সন্দেহজনক গতিবিধি নজরে আসার পরই সতর্ক বাহিনী রুখে দাঁড়ানোয় অনুপ্রবেশকারীদের চেষ্টা ভেস্তে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.