আমেরিকার হামলার পরে তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানির গুরুত্বপূর্ণ জলপথ হরমুজ় প্রণালী বন্ধ করে দিতে চাইছে ইরান! ইরানের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম ‘প্রেস টিভি’ জানিয়েছে, ইতিমধ্যে হরমুজ় প্রণালী বন্ধের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে সে দেশের পার্লামেন্ট। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি। হরমুজ় প্রণালী শেষ পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদকেই।
তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের আন্তর্জাতিক বাজারের ক্ষেত্রে হরমুজ় প্রণালী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওমান এবং ইরানের মাঝে সরু একটি জলপথ। আন্তর্জাতিক বাজারে যত তেল আমদানি-রফতানি করা হয়, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগই চলে এই জলপথ দিয়ে। তেল রফতানিকারী দেশগুলির জোট ‘ওপেক’-এর সদস্য সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কুয়েত, কাতার, ইরাকের মতো দেশগুলি এখান দিয়ে তেল রফতানি করে। এই রফতানি হওয়া তেলের বেশির ভাগই যায় এশিয়ায়। আবার বিশ্বের তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি-রফতানিরও প্রায় ২০% হয় হরমুজ় দিয়ে। যার মধ্যে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সমস্ত গ্যাসই যায় এই পথে।
এই প্রণালীটি এতটাই সরু যে কোনও কোনও জায়গায় এই প্রণালী মাত্র ৩৩ কিলোমিটার চওড়া। সেখানে পাশাপাশি দু’টি জাহাজ গেলে তার মধ্যে ব্যবধান থাকে মাত্র দুই কিলোমিটার। ফলে এই সরু প্রণালীকে অবরুদ্ধ করা ইরানের কাজে কঠিন কাজ নয়। এখনও এ বিষয়ে তেহরান কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও সংবাদ সংস্থা রয়টার্স অনুসারে, ইরানের রিভলিউশনারি গার্ডের কমান্ডার ইসমাইল কোসারি রবিবার জানিয়েছেন, ওই প্রণালী বন্ধ করা ইরানের অন্যতম লক্ষ্য। যখনই প্রয়োজন হবে, তখনই তা কার্যকর হয়ে যাবে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইরান যদি হরমুজ় প্রণালীকে শেষ পর্যন্ত অবরূদ্ধ করে দেয়, সে ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বেই জ্বালানির দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। ইরান-ওমানের মাঝে এই সংকীর্ণ প্রণালী দিয়েই সৌদি আরব, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে তেল ও কাতার থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়ে আসে দেশীয় সংস্থাগুলিও।
তবে পশ্চিম এশিয়ার উত্তেজনার মাঝে ভারতের আশঙ্কার কোনও কারণ নেই বলে আশ্বস্ত করেছে নয়াদিল্লি। ভারতের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস বিষয়ক মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী জানিয়েছেন, দেশের আমদানি করা তেলের একটি বড় অংশ গত কয়েক বছর ধরে হরমুজ় প্রণালী হয়ে আসে না। পাশাপাশি দেশীয় সংস্থাগুলি আগামী কয়েক সপ্তাহের তেল মজুত রেখেছে এবং বিকল্প বাণিজ্যপথও খোলা রয়েছে নয়াদিল্লির।