যুদ্ধে কোনো রাজা হেরে গেলে, জয়ী রা পুরুষ দের বন্দী করতো বা হত্যা করতো। সনাতনী জয়ীরা নারীদের দাসী হিসাবে ব্যবহার করলেও, যৌন অত্যাচার করতোনা। কিন্তু অ-সনাতনী জয়ী রা নারীদের উপর যৌন অত্যাচার করতো। সেই যৌন অত্যাচার থেকে বাঁচতেই কোনো হিন্দু নারী জহর ( বিষ) পান করতো বা স্বেচ্ছায় জ্বলন্ত আগুনে ঝাঁপ দিয়ে পুড়ে আত্মহত্যা করতো, যৌন অত্যাচার থেকে রক্ষা পাবার জন্য।

“বিদ্যা দেহেজিয়া বলেন যে ভারতীয় সমাজে সতীদাহ প্রথার প্রচলন দেরিতে হয়েছিল এবং ৫০০ খ্রিস্টাব্দের পরেই নিয়মিত হয়ে ওঠে। আশিস নন্দীর মতে, এই প্রথাটি সপ্তম শতাব্দী থেকে প্রচলিত হয়ে ওঠে।” অনেকে ঐতিহাসিক নাকি বলেন, যে আলেকজেন্ডার ও ভারতে সতীদাহ দেখেছিলেন। কিন্তু বৈদিক শাস্ত্রে বা মনুসংহিতায় সতীদাহ শব্দের উল্লেখ নেই।

আলেক্সজেন্ডারের পূর্বে (আলেক্সজেন্ডার ৩৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মানে ২৩৫৬ বছর পূর্বে আরিয়া (হিরাট) দখল করে আলেকজান্ডার বর্তমান আফগানিস্তানে পদার্পণ করেন। ) ভারতবর্ষ বিদেশিরা আক্রমণ করেনি। পারস্য (পার্সিয়ান) সাম্রাজ্য থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম আক্রমণ ঘটেছিল প্রায় ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, যখন সাইরাস দ্য গ্রেট (Cyrus the Great) উত্তর-পশ্চিম ভারতীয় সীমান্ত আক্রমণ করেন। ৭১২ খ্রিস্টাব্দে আরবদের সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যমে ভারতে ইসলামের অত্যাচার শুরু হয়। কাজেই ২৩৫৬ বছর পূর্বে নারীদের যৌন অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য আত্মহত্যা করার প্রয়োজন হয়নি। তাই বৈদিক শাস্ত্রে সতীদাহের উল্লেখ নেই। বিদেশী দের আক্রমণ ভারতের যে অঞ্চলে যত বাড়তে থাকলো, যে অঞ্চলের রাজারা যুদ্ধে যত বেশী হারতো , বিদেশিদের হাতে চলে যাওয়া সেই অঞ্চলের বিবাহিত নারীরা যৌন অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য নানা ভাবে আত্মহত্যা করতো, সহমরণ ছিল আত্মহত্যার একটা ধরণ।

অর্থাৎ বিদেশী আক্রমণ কারীদের যৌন অত্যাচার থেকেই বিবাহিত নারীরা বাঁচতেই সমাজে সতীদাহ প্রথা আসে। সনাতন সমাজে হারেম প্রথা ছিলোনা। সুলতান বা ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা লুঠ করে আনা মহিলাদের যে বাড়িতে রাখতো, তাকেই হারেম বলে। হারেমে থাকা নারীদের যৌনঅত্যাচার করার অধিকার ছিল হারেমের মালিকের। হারেমের নারীরা কখনো স্ত্রীর সম্মান পেতোনা।

কাজেই সতীদাহ প্রথার জন্য বিদেশী আক্রমণকারীরাই দায়ী। হিন্দুরা এ জন্য দায়ী নয়।

যে অঞ্চল মুসলিম রা বেশি দখল করেছিল, সেই অঞ্চলে সতীদাহ বেশি প্রচলিত ছিল। কারণ বিধবা মহিলাদের সুলতানের গোয়েন্দারা তুলে নিয়ে হারেমে রাখতো। বাংলাতে সতীদাহ ছড়িয়ে পড়েছিল, কারণ বাংলা মুসলিমরা দখল করেছিল। দক্ষিণ ভারতে সতীদাহ বিরল ছিল, কারণ দক্ষিণ ভারত মুসলিম শাসকদের অধীনে ছিলোনা।

অনেকে বলে, সম্পত্তির লোভে সন্তানহীনা বিধবাদের স্বামীর সাথে সহমরণে যেতে বাধ্য করতো হিন্দু সমাজ। হিন্দু পারিবারিক আইনে নারীদের কখনোই সম্পত্তির উপর অধিকার ছিলোনা। বিধবা নারীদের আজীবন ভরণপোষণ পাবার অধিকার ছিল। সন্তানহীনা বিধবা নারীরা একান্নবর্তী পরিবারের অনেক কাজ করে দিতো। ভরণ পোষণে যে খরচ হতো, কৃষিজীবী পরিবারে বিধবারা যে কাজ করতো, সেই কাজ অন্যকে দিয়ে করাতে গেলে পরিবারের অনেক বেশি খরচ হতো। কাজেই সন্তানহীনা বিধবা দের দিয়ে পরিবারের লাভ হতো। কাজেই সম্পত্তির লোভে এদের কে সহমরণে যেতে বাধ্য করার মধ্যে কোনো যুক্তি নেই। তবে সন্তানহীনা বিধবাদের যৌথ পরিবারে ক্ষমতা বা সম্মান ছিলোনা। তাই সমাজে অনেক বিধবারা স্বেচ্ছায় সহমরণে গিয়ে আত্মহত্যা করতো কিনা জানা নেই । প্রত্যেক বিবাহিত নারী নিজেকে সংসারের রানী ভাবে। রানীর ক্ষমতা হারিয়ে পরিবারে স্রেফ গৃহকর্মী হয়ে বেঁচে থাকা অনেকেই মেনে নিতে পারতোনা, তাই হয়ত কেহ কেহ সহমরণে যেতো। তবে বেশিরভাগ সন্তানহীনা বিধবা রা সহমরণে যেত, যাতে সুলতানদের গোয়েন্দারা তাদের কে জোর করে তুলে নিতে না পারে। সহমরণ প্রথা ব্রাম্মন পরিবারে বেশি ছিল। যবনের দ্বারা আমৃত্যু ধর্ষিত হবার সহমরণ অনেক সম্মানের। পাণ্ডু রাজার মৃত্যুর পরে কুন্তী সহমৃতা হননি, মাদ্রী হয়েছিলেন। সহমরণ বৈকল্পিক ছিল।যবন রা নারীদের ধরে নিয়ে বিক্রি করে দিতো যৌনদাসী বানাবার জন্য!

যেহেতু হিন্দু সামাজিক-প্লাটফর্ম বলে কোনো সময় কিছু ছিলোনা, তাই হিন্দু ধর্মপ্রধান রা কেন্দ্রীয়ভাবে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য তাদের ইতিহাস লিখে রাখতোনা, তাই আমরা পুরানো ইতিহাস জানতে পারিনা। অনেক মিডিয়া ও সাংবাদিক টাকার লোভে নিজেদের বিক্রি করে, মিথ্যা কথা লিখে সমাজকে প্রভাবিত করে। যদি নিরপেক্ষ হিন্দু ধর্মীয় এক্সপার্ট দের প্লাটফর্ম থাকতো, যদি হিন্দু ইতিহাস এর সঠিক সোর্স থাকতো, তা হলে হিন্দু এক্সপার্ট রা মিথ্যা প্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতো, সমাজকে সঠিক তথ্য দিতো। সাংবাদিকদের বেতন সামান্য, কিন্তু অনেকেই ধনী। সাংবাদিক রা কি করে দুর্নীতি করে? ঘুষ নিয়ে মিথ্যা তথ্য লিখে, সঠিক তথ্য না লেখার জন্য ঘুষ নিয়ে, মানুষ কে প্রভাবিত করে এরা অনেক টাকা আয় করে। এদের কে সাহায্য করে মিডিয়ার মালিক। তাই অনেক সাংবাদিক অতি ধনী।

রাষ্ট্রের বা অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিলে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার প্লাটফর্ম আছে। হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিলে, প্রতিবাদ করার কোনো প্লাটফর্ম নেই। সেই তথ্য যে ভুল তা পরীক্ষা করার হিন্দুদের কোনো তথ্যভান্ডার নেই। গুরুদের নিজেদের মধ্যে কোন সমন্বয় ও একতা নেই। পার্থিব বিষয় নিয়ে অনেক গুরুদের জানার কোন আগ্রহ নেই। তাই হিন্দুরা তাদের ধর্মের সঠিক তথ্য জানতে পারেনা। পেইড মিডিয়ার তথ্য হিন্দুরা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় ও হীনমন্যতায় ভোগে। হিন্দু তথ্যের সব ভারতীয় ভাষায় Artificial Intelligence তথ্যভান্ডার দরকার। কিন্তু সব গুরুরা ও ইতিহাসবিদ রা একমত হয়ে এমন তথ্যভান্ডার বানাতে চায় বলে আমার জানা নেই। এই কাজের জন্য টাকাও নেই হিন্দুদের। হিন্দুদের স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে কোনো কাজে অনুপ্রেরণা দেবার কোনো প্রতিষ্ঠান নেই ।

অতীত কাল থেকে সব হিন্দুরা কেন্দ্রীয়ভাবে একটা সামাজিক প্লাটফর্মের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকলে, এদের একতা ও শক্তি শক্তি থাকতো, তখন বিদেশিরা আক্রমণ করে ভারতীয় রাজাদের হারাতে পারতোনা, হিন্দু নারীদের উপর যৌন অত্যাচার করতে পারতোনা, সমাজে সহমরণ প্রথার সৃষ্টি হতোনা। যতবার মুসলিম দের বিরুদ্ধে জেরুজালেম নিয়ে খ্রিস্টানরা Crusade করেছে, প্রতিবার ইউরোপের খ্রিষ্টান রাজারা সৈন্য পাঠিয়েছে।

ব্রাম্মন রাজা রামমোহন রায় বেদান্ত-উপনিষদ পড়ে প্রমান করেছিলেন যে সতীদাহ হিন্দু শাস্ত্র বিরোধী। তিনি তার লিখিত বইয়ে ‘প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ’ প্রমান করেন, সতীদাহ হিন্দু শাস্ত্র বিরোধী। তার প্রতিবাদে সতীদাহপন্থীরা বই লেখেন ‘বিধায়ক নিষেধকের সম্বাদ’। এভাবে ২ পক্ষ কয়েকটা বই প্রকাশ করেন। লর্ড বেন্টিক ১৮২৯ সালের চৌঠা ডিসেম্বর মাসে আইন করে সতীদাহ নিষিদ্ধ করে।

ব্রাম্মন পরিবারে তুলনামূলক সহমরণ কেন বেশি হতো, বা ব্রাম্মন পরিবারের মেয়েরা আজকাল তুলনামূলক বেশী ধর্মান্তরিত হয়, সেটা অন্য বিষয়।

নেশায় ও নিজের উন্নতিতে আসক্ত সনাতন সমাজের অনুগামী ব্যক্তিরা যদি একত্রিত হয়ে গণতান্ত্রিক ধর্ম প্রধান নির্বাচিত না করে, সনাতন সমাজ একদিন বিলোপ হবে।

মৃণাল মজুমদার, বার্লিন, ২৫.০৫.২০২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.