বিশ্বে প্রথম নিপা ভাইরাসের টিকা তৈরির পথে ভারত, কতটা বিপজ্জনক এই ভাইরাস?

নিপা ভাইরাসের প্রতিষেধক কি তবে তৈরি হতে চলেছে? করোনাভাইরাসের মতো নিপাও মারণ ভাইরাস। এই ভাইরাকে নিয়ে আতঙ্কের শেষ নেই। প্রতি বছর কেরলে নিপার সংক্রমণে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। বাংলার শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়িতে বছর বছর নিপা-আতঙ্কে সচেতনতার প্রচার চলে। নিপা নিয়ে সবচেয়ে বড় ভয়ের ব্যাপার হল এই ভাইরাসকে ঠেকাবে এমন কোনও ওষুধ বা টিকা এখনও অবধি তৈরি হয়নি। বিশ্বে হয়তো এই প্রথম বার ভারতের কোনও সংস্থা নিপার প্রতিষেধক তৈরি করতে চলেছে।

পুণের বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি জেনোভা নিপা ভাইরাসের টিকা তৈরি করতে চলেছে। করোনার মতো নিপাও আরএনএ ভাইরাস। তাই একে জব্দ করার জন্য মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) পদ্ধতিতে প্রতিষেধক তৈরি হবে। এই প্রতিষেধক শরীরে ঢুকে ভাইরাসের প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি করবে। পাশাপাশি, শরীরের টি-কোষগুলিকে (রোগ প্রতিরোধী কোষ) সক্রিয় করে তুলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা বলয় তৈরি করবে শরীরে।

কী এই নিপা ভাইরাস?

এই ভাইরাসের উৎস মূলত বাদুড়। বাদুড়ের আধখাওয়া ফল ভাল ফলের সঙ্গে মিশে থাকলে সেখান থেকেও ছড়াতে পারে এই ভাইরাস। আক্রান্তের ব্যবহৃত বিছানা, পোশাক বা অন্যান্য জিনিসপত্র থেকেও সংক্রমণের ক্ষমতা রাখে নিপা ভাইরাস। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের মতো উপসর্গ হলেও নিপা ভাইরাসে মৃত্যুহার ৫০-৬০ শতাংশ। আক্রান্তের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই তাঁকে সুস্থ করতে পারে। সে জন্য দ্রুত রোগ ধরা পড়া অত্যন্ত জরুরি।

নিপাকে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘জুনটিক ভাইরাস’। অর্থাৎ পশুর শরীর থেকে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢোকে। আক্রান্ত পশুদের দেহের অবশিষ্টাংশ, বা মলমূত্র থেকে সংক্রমণ ঘটতে পারে। ২০০১ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণে প্রায় ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। মাঝের কয়েকটা বছর নিপার আতঙ্ক সে ভাবে ছড়ায়নি। ২০০৭ সালে ফের নিপা ফিরে আসে দেশে। বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন নদিয়ায় ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে। পাশাপাশি, কেরলে ছড়িয়ে পড়ে নিপা। সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের খোঁজ মেলে সেখানেই।

রোগের লক্ষণ ভাইরাল জ্বরের চেয়েও ভয়ানক

প্রথমে সাধারণ জ্বরই হয় রোগীর। এর পর শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। মাথাব্যথা, বমি শুরু হয়। মাথায় পৌঁছে যায় সংক্রমণের রেশ। শুরু হয় খিঁচুনি। গলা ব্যথা, তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন রোগী। রোগ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে ২৪–৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগী কোমায় চলে যেতে পারেন। মস্তিষ্কে প্রদাহ শুরু হয়, হৃদ্‌পেশিতেও প্রদাহ হয় অনেকের।

সাধারণ পরীক্ষায় নিপার সংক্রমণ ধরা পড়ে না৷ বায়ো-সেফটি লেভেল-থ্রি স্তরের কোনও ল্যাবরেটরিতেই নিপা ভাইরাসের পরীক্ষা করা সম্ভব। কারণ এই স্তরের ল্যাবরেটরি না হলে যিনি পরীক্ষা করবেন তাঁরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আক্রান্তের থুতু-লালা, মূত্রের নমুনা বা সেরিব্রাল স্পাইনাল ফ্লুইড থেকেই নিপা ভাইরাস চিহ্নিত করা সম্ভব। বিপজ্জনক এই ভাইরাসের মোকাবিলা করতে টিকাই একমাত্র উপায় হতে পারে। জেনোভার প্রতিষেধক কাজ করলে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচবে বলেই আশা করছেন গবেষকেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.