পাক রেঞ্জারদের হেফাজত থেকে এখনও ছাড়া পাননি হুগলির বাসিন্দা বিএসএফ (সীমান্তরক্ষী বাহিনী)-এর কনস্টেবল পূর্ণমকুমার সাউ। সেই আবহেই পঠানকোটে বিএসএফের কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে ফিরলেন জওয়ানের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রজনী সাউ। রজনী জানিয়েছেন, বিএসএফের তরফে তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। যদিও পূর্ণমের বাবা বলছেন, দায় নিতে হবে কেন্দ্রকেই।
পূর্ণমের মুক্তির বিষয়ে এখনও নিশ্চয়তা মেলেনি। তার মাঝেই বৃহস্পতিবার পঠানকোট থেকে বাড়ি ফিরেছেন জওয়ানের স্ত্রী এবং আত্মীয়েরা। রিষড়ার বাড়িতে ঢোকার মুখে রজনী বলেন, ‘‘বিএসএফের কর্তা জানিয়েছেন, ভয়ের কোনও কারণ নেই। আমরা আশাবাদী।’’ পূর্ণমের আত্মীয় সত্যপ্রকাশ গুপ্ত জানান, বিএসএফ আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, পূর্ণমকে ছাড়িয়ে আনার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। সত্যপ্রকাশের কথায়, ‘‘তাঁরা আমাদের বলেছেন ধৈর্য ধরতে। তবে কত দিন অপেক্ষা করতে হবে, সেটা বলা হয়নি। আমরা ধৈর্য ধরব পূর্ণমের মুক্তির বিষয়ে।’’ অন্য দিকে, পূর্ণমের বাবা ভোলানাথ সাউ বলেন, ‘‘বৌমার সঙ্গে কী কথা হয়েছে তা আমি জানি না। ছেলে এখনও ফেরেনি, এটা কেন্দ্রীয় সরকারের দায়। ওকে ফেরানো কেন্দ্রীয় সরকারেরই দায়িত্ব। তাদের কাছ থেকে কোনও রকম খবর পাইনি। এখনই উৎকণ্ঠা কাটছে না।’’
পঠানকোটে বিএসএফ আধিকারিক এবং ২৪ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলে বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরেছেন রজনীরা। ডিআইজি ,আইজির সঙ্গেও ফোনে কথা হয়েছে তাঁর। কবে পূর্ণমকে মুক্তি দেওয়া হবে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট করে বিএসএফের পক্ষ থেকেও কিছু জানানো না হলেও জওয়ানের পরিবারকে আশ্বস্ত করা হয়েছে বলেই জানিয়েছেন রজনী। রজনীর কথায়, ‘‘হিমাচল প্রদেশের কাঁকরায় বিএসএফের হেডকোয়ার্টারের সিও জানিয়েছেন, এ ধরনের ঘটনা নাকি ঘটতেই থাকে। জম্মু-কাশ্মীরের ঘটনার জন্য ওঁকে ফেরাতে একটু দেরি হচ্ছে। তবে পূর্ণমকে ফিরিয়ে আনা হবে। সেখান থেকে আমরা ফিরোজপুরে যাই। সেখানে জানানো হয়, চিন্তার কোনও কারণ নেই, ওঁকে কোনও রকম নির্যাতন করা হয়নি। তিনি সুরক্ষিতই রয়েছেন। খুব তাড়াতাড়ি ফিরেও আসবেন।’’ জওয়ানের স্ত্রী জানিয়েছেন, বার বার ফ্ল্যাগ মিটিং চলছে। কথা হচ্ছে পাকিস্তানের সঙ্গেও। কিন্তু অভিযোগ, ভারতীয় জওয়ানেরা এপার থেকে ফ্ল্যাগ নাড়ালেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কোনও সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। যদি এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণম না ফেরেন, তা হলে রজনীকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে আইজির সঙ্গে কথা বলানো হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে বিএসএফ।
গত ২৩ তারিখ ফিরোজপুর বর্ডারে ডিউটি করার সময় পাক রেঞ্জারসের হাতে বন্দি হন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল পূর্ণম। ভুল করে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে ঢুকে একটি গাছের তলায় বিশ্রাম নেওয়ার সময় সে দেশের রেঞ্জারস পূর্ণমকে বন্দি করে। তার পর থেকেই হুগলির রিষড়ার সুশীলাচন্দ্র আওয়ান রোডের বাড়িতে উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগ। জওয়ানের স্ত্রী রজনী অন্তঃসত্ত্বা, বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা মা ও সাত বছরের সন্তান রয়েছে। এ দিকে পূর্ণমের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এত দিন অতিক্রান্ত হতে চলেছে, কিন্তু এখনও ছাড়া পাননি তিনি। মাঝে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকেও বসেছে বিএসএফ। তবে সমাধানসূত্র মেলেনি। সেই আবহে পূর্ণমকে ঘরে ফেরানোর আশায় সোমবার রজনী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যেরা রওনা দিয়েছিলেন পঞ্জাবে। রবিবার বিএসএফ আধিকারিকেরা পূর্ণমের রিষড়ার বাড়িতে গিয়েছিলেন। গিয়েছিলেন বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহও। সেখানে তিনি জওয়ানের বাবা ভোলানাথ সাউকে ফোনে কথা বলিয়ে দেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। পূর্ণমের স্ত্রী জানান, বিএসএফ আধিকারিকেরা সব রকম ভাবে চেষ্টা করছেন তাঁর স্বামীকে ফিরিয়ে আনার জন্য। পরিবারকেও মানসিক ভাবে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছেন বিএসএফ আধিকারিকেরা।