ঠাকুরনগর,৩০ শে মার্চ। পূর্ণব্রহ্ম পূর্ণাবতার শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১৪ তম আবির্ভাব তিথি ছিল গত ২৭ শে মার্চ। এই তিথি উপলক্ষে প্রতি বছর আয়োজিত হয় মতুয়া সম্প্রদায়ের মহামিলন মেলা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ঠাকুরনগরে, যা বারুণি মেলা নামেও পরিচিত। এবছর এই মেলার সঠিক ইতিহাস জানতে ‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ(দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত)’-এর উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রতিনিধি দলের পক্ষে সহ-সম্পাদক জয়ন্ত চক্রবর্তী ও ঠাকুরনগর চর্চাকেন্দ্র প্রমুখ মিঠু বিশ্বাস পৌঁছে গেছিলেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের অফিসে ।মেলা চলাকালীন বহু ব্যস্ততার মাঝে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরের সহধর্মিনী ও মতুয়া মহাসংঘের মাতৃ সেনার সভানেত্রী সোমা ঠাকুর জানালেন তাদের মেলা শুরুর কথা ও ঠাকুরনগর পত্তনের ইতিহাস।
তিনি বলেন, মতুয়া সম্প্রদায়ের পথপ্রদর্শক শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর বাস করতেন অধুনা বাংলাদেশের ওরাকান্দি জেলাতে। পিছিয়ে পড়া নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের দুঃখ দূর করার জন্য, সমাজের অস্পৃশ্যতাকে দূর করে মানব ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্য নিয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের পত্তন করেন শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর। তারপর
ভারত দেশ বিভক্ত হল ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট,পাকিস্তান গঠনের মধ্যে দিয়ে। বহু মানুষ তাদের ঘর হারালেন। এই উত্তাল পরিস্থিতিতে ভারতে আসেন অনেক মানুষ। সেই সাথে মতুয়া সম্প্রদায়ের মূল পরিবারও চলে আসেন এই ভারতবর্ষে। হরিচাঁদ ঠাকুরের বংশধর প্যারীচাঁদ ঠাকুর; যিনি লন্ডনে ব্যারিস্টারী পড়ে ছিলেন, তিনি তখন হাল ধরলেন এই সম্প্রদায়ের। তিনি মতুয়া দের ঐক্যবদ্ধ করতে প্রতিষ্ঠা করলেন ঠাকুরবাড়ির, যা থেকেই এলাকার নাম হল ‘ঠাকুর নগর’।
এই ঠাকুর বাড়িতে একটি পুষ্করিণি আছে, যার নাম ‘কামনা সাগর’। কথিত আছে হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব তিথিতে যে স্নান যোগ তৈরি হয়, তাতে মনস্কামনা নিয়ে কামনা সাগরে স্নান করলে তা পূর্ণ হয়। সেই জন্য প্রতি বছর সারা ভারতের লক্ষ লক্ষ মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ এই দিন ঠাকুরনগরে আসেন। পুজো দেন হরি মন্দিরে। লক্ষ লক্ষ বাতাসার লুট হয় মন্দির চত্বরে।
এবছরও ঠাকুরের ২১৪ তম আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে সেই মিলন মেলা আয়োজিত হয়েছিল। ৭ দিন ধরে চলে এই মেলা। কালের নিয়মে এখন মেলা শুধু মতুয়াদের নয়, সকলের আনন্দ স্থল হয়ে উঠেছে।
সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ(দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত)-এর প্রতিনিধিরা মেলাটির প্রাচীন ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতেই পৌঁছে গেছিলেন ঠাকুর নগরের পূণ্য ভূমিতে। তারা ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে জেনে, তা বজায় রাখার কাজ করে থাকে। পিছিয়ে পড়া মানুষদের ঐক্যবদ্ধ ক’রে তাদের অধিকার আদায় করার ইতিহাস জানতেই পৌঁছে গেছিলেন তারা বলে জানান মিঠু বিশ্বাস।
জেলা সম্পাদিকা সুপ্রীতি সুতার জানান যে, পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস নিয়ে আমরা চর্চা করে থাকি।পূর্ণব্রহ্ম পূর্ণাবতার শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য ঠাকুরনগর আজ সারা ভারত তথা বিশ্বের মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের মিলনস্থল হয়ে উঠেছে। ঠাকুরের আবির্ভাব তথি উপলক্ষে এই মিলন মেলা ও পুণ্য স্নানে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমরা ধন্য হয়েছি।
মিলন খামারিয়া
