মায়ানমারে মৃতের সংখ্যা ২০০০ ছাড়াল! ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মসজিদের সামনেই সোমবার চলল ইদের নমাজ

ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে মায়ানমারে উদ্ধারকাজ এখনও চলছে। সেই সঙ্গেই বৃদ্ধি পাচ্ছে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা। সে দেশে ভূমিকম্পে শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২,০৫৬ জনের। জুন্টা সরকারকে উদ্ধৃত করে সোমবার জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি। সেই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। মায়ানমারে ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন, ৩,৯০০ জন। এখনও নিখোঁজ প্রায় ৩০০ জন। এক সপ্তাহ ধরে জাতীয় শোকপালনের কথা বিবৃতি দিয়ে ঘোষণা করেছে জুন্টা সরকার। ভূমিকম্পে ভেঙে গিয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুসলিম অধ্যুষিত দেশের প্রায় ৬০টি মসজিদ। সোমবার সে রকম কয়েকটি ভাঙা মসজিদের সামনেই ইদের নমাজের জন্য জড়ো হন শয়ে শয়ে মানুষ।

শুক্রবার মায়ানমারে যে ভূমিকম্প হয়েছিল, তার মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭.৭। উৎসস্থল ছিল মায়ানমারের মান্দালয় শহরের কাছে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ বার ভূকম্প পরবর্তী কম্পন (আফটার শক) হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মান্দালয়। ভূমিকম্পের জেরে ভেঙে পড়েছে হাজার হাজার বাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি, মোবাইলের টাওয়ার। ফাটল ধরেছে সড়ক, সেতুতে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিস্তৃত এলাকা। মনে করা হচ্ছে, সে কারণে এখনই মৃতের পরিসংখ্যান সঠিক ভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলিতে উদ্ধারকারীরা পৌঁছতে পারলে মৃতের প্রকৃত পরিসংখ্যান মিলবে। এখনও দিনরাত উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন পুলিশ, দমকল, প্রশাসনের কর্মীরা। তাঁদের ভোগাচ্ছে অস্বস্তিকর গরম। উদ্ধারকারীদের একাংশের আশঙ্কা, এই গরমের কারণে ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা দেহগুলিতেও পচন ধরবে। এর ফলে শনাক্তকরণের সমস্যা হতে পারে।

ভূমিকম্পের কারণে ঘরছাড়া হাজার হাজার মানুষ। রাজধানী নেপিডোয়ে এখনও বহু মানুষ ত্রাণ শিবিরে রাত কাটাচ্ছেন। অনেকে আবার কোলের সন্তানকে নিয়ে রাস্তায় চাদর পেতে শুয়ে রয়েছেন। মান্দালয়েও একই অবস্থা। তবে সোমবার থেকে সেখানকার বেশ কিছু দোকান, হোটেল খুলে গিয়েছে। ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে সেই শহর। ভূমিকম্পে শহরের বহু মসজিদও ভেঙে গিয়েছে। সোমবার সেই ভাঙা মসজিদের সামনেই ইদের নমাজের জন্য জড়ো হন শয়ে শয়ে মানুষ। মায়ানমারে মৃতের সংখ্যা ২০০০-এর গণ্ডি ছাড়িয়েছে। ভূমিকম্পে মায়ানমারে মৃতদের মধ্যে তিন জন চিনের নাগরিক। এমনটাই জানিয়েছে চিনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। ফ্রান্সের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ভূমিকম্পে তাদেরও দু’জন নাগরিক মারা গিয়েছেন।

প্রশাসন সূত্রে খবর, সোমবার মান্দালয়ের একটি হোটেলের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে এক তরুণীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তার পরেই উদ্ধারকারীদের আশা ছিল, আরও কয়েক জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হবে। যদিও সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখান থেকে আর কাউকে জীবিত উদ্ধার করার খবর প্রকাশিত হয়নি।

গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মায়ানমারে সাত দিনের জন্য জাতীয় শোকপালনের ঘোষণা করেছে জুন্টা সরকার। ৬ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি দফতর, সৌধে অর্ধনমিত থাকবে জাতীয় পতাকা। দুনিয়ার সব দেশ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে বলেছে। ভারত ইতিমধ্যে সাহায্য পাঠিয়েছে সে দেশে। সাহায্য করছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।

প্রতিবেশী তাইল্যান্ডেও ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে। রাজধানী ব্যাঙ্ককে একটি নির্মীয়মাণ ৩০ তলা ভবন ভেঙে পড়ে শুক্রবার। এখনও পর্যন্ত সেখানে ১৭ জনের মৃত্যুর কথা জানা গিয়েছে। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৪২ জনকে। এখনও অন্তত ৭৮ জনের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। উদ্ধারকারীদের অনুমান, অনেকে ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে রয়েছেন। তাঁদের খুঁজে বার করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে উদ্ধারকারী দল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.