দ্বারিকেশের বাড়ি ফেরা হল না! কুয়েতে বহুতলের আগুন কেড়ে নিল প্রাণ, শোকের ছায়া মেদিনীপুরে

কুয়েতের বহুতলে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৪২ জনই ভারতীয়। মৃতদের তালিকায় রয়েছেন এক জন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাও। মৃতের নাম দ্বারিকেশ পট্টনায়ক (৫২)। তিনি মেদিনীপুরের শরৎপল্লি এলাকার বাসিন্দা।

দ্বারিকেশের আদি বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন-২ ব্লকের তুরকাগড় এলাকায়। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে মেদিনীপুর শহরের শরৎপল্লি এলাকায় থাকতেন। স্ত্রী অন্তরা ও একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া এক মেয়ে থাকেন সেখানে। দ্বারিকেশের আত্মীয় চিন্ময় মহাপাত্র বলেন, “আমি কলকাতায় থাকি। গতকাল জানতে পারি, কুয়েতের একটি আবাসনে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। দ্বারিকেশের আবাসনেই। তবে, কোনও রকম যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। খবরটি শুনে বিভিন্ন নিউজ় পোর্টালে খোঁজ নিয়ে দেখি ঘটনাটা সত্যি। এর পর আমি কুয়েত দূতাবাসের নম্বর জোগাড় করি এবং সেখানে যোগাযোগ করি। ওখান থেকে ফোন করে বলা হয়, কলকাতা বিমানবন্দর পর্যন্ত দেহ পৌঁছে দেবে। এখনও পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে কোনও রকম ভাবে যোগাযোগ করা হয়নি।”

মৃতের পরিবার সূত্রে খবর, প্রায় ২০ বছর ধরে কুয়েতে একটি সংস্থায় কাজ করতেন দ্বারিকেশ। তার আগে মুম্বইয়ে‌ একটি সংস্থায় কাজ করতেন। যে বহুতলে বুধবার ভোরে আগুন লাগে, বর্তমানে তিনি সেখানেই থাকতেন। ঘটনার খবর পেয়ে বুধবার ফোনে ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন‌ পরিজনেরা। জানতে পারেন, দ্বারিকেশ গুরুতর অসুস্থ। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁদের মৃত্যুসংবাদ দেওয়া হয়। অন্তরার ভাই সায়ন্তন পট্টনায়ক বলেন, “জামাইবাবু রোজ সকালে কাজে বেরোনোর আগে বাড়িতে ফোন করতেন। বুধবার দুপুর পর্যন্ত না ফোন না করায় বাড়ির লোকেদের সন্দেহ হয়। বাড়ি থেকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। জামাইবাবুর এক বন্ধুকে ফোন করে ঘটনার সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারি। এর পর থেকে জামাইবাবুর সম্পর্কে কিছুই জানতে পারিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই সংস্থার তরফ থেকে ফোন করে জানানো হয়ে যে, জামাইবাবু মারা গিয়েছেন।” পুজোর সময় বাড়িতে ফেরার কথা ছিল দ্বারিকেশের। মৃতদেহ কবে আসবে তা স্পষ্ট নয় পরিবারের কাছে। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে এখনও যোগাযোগ করা হয়নি দ্বারিকেশের পরিবারের সঙ্গে।

বুধবার ভোরের দিকে কুয়েতের রাজধানী শহরের দক্ষিণে মাঙ্গাফ এলাকার একটি বহুতল আবাসনে আগুন লাগে। জানা যায়, ওই আবাসনে মূলত থাকেন শ্রমিকেরা, যাঁদের অধিকাংশই ভারতীয়। কী কারণে আগুন লেগেছিল, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৪৯ জন ভারতীয়ের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদেহগুলি ফিরিয়ে আনতে ভারতীয় বায়ুসেনার একটি বিমান ইতিমধ্যেই কুয়েতের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। সেটি সম্ভবত শুক্রবার ফিরবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.