ইরান-ইজ়রায়েলের যুদ্ধে ‘উদ্বিগ্ন’ ভারত! অপরিশোধিত তেলের দামে প্রভাব ফেলতে পারে এই সংঘাত?

ইরান-ইজ়রায়েল সংঘর্ষে ভারত নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। তবে দু’দেশের যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকে যে নয়াদিল্লি নজর রেখেছে তা রবিবারই জানিয়ে দিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। ইরান এবং ইজ়রায়েলের যুদ্ধ পরিস্থিতি যদি আরও খারাপের দিকে এগোয়, তবে তার সরাসরি প্রভাব ফেলবে অর্থনীতিতে। বাড়তে পারে অপরিশোধিত তেলের দাম। যার জেরে ভুগবে ভারতও!

ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম ৯০ ডলার ছাড়িয়েছে। ইরান এবং ইজ়রায়েলের মধ্যে যদি ক্রমাগত সংঘাত চলতে থাকে, তবে কয়েক দিনের মধ্যেই সেই দাম ১০০ ডলার ছুঁয়ে ফেলবে। যা বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। ভুক্তোভোগী হবে ভারতও।

প্রয়োজনীয় অপরিশোধিত তেলের ৮০ শতাংশই ভারত আমদানি করে। যদি এ ভাবে চড়চড়িয়ে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি পায়, তবে ভারতকে আমদানি খরচ মেটাতে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ভারতে মুদ্রাস্ফীতি ঘটতে পারে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা এবং চলতি হিসাবের ঘাটতি অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করবে।

তেলের আমদানিকারক হিসাবের তালিকায় ভারত বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সবার উপরে রয়েছে। ভারত যা তেল আমদানি করে তার অধিকাংশই আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। তাই ইরান-ইজ়রায়েল লড়াইয়ের কারণে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে ভারত। তবে ভারত ইতিমধ্যেই বিকল্প পথ হিসাবে রাশিয়াকে বেছে নিয়েছে। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাশিয়া থেকে ভারত ৩৫ শতাংশ অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে।

রবিবার ইজ়রায়েলের ভূখণ্ডকে লক্ষ্য করে প্রায় ২০০টি ড্রোন দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। বলা হচ্ছিল, ড্রোনগুলি লক্ষ্যবস্তুর কাছে পৌঁছতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। তার আগেই আমেরিকার সেনাবাহিনী আকাশপথে ড্রোনগুলিকে ধ্বংস করার জন্য গুলি ছোড়ে। একের পর এক ড্রোন গুলি করে নষ্ট করা হয়। আমেরিকার পাশাপাশি ব্রিটেনও এই কাজে ইজ়রায়েলকে সাহায্য করেছে।

ইরানের এই হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। রবিবার সকালে ইরান-ইজ়রায়েল পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘‘ইরান এবং ইজ়রায়েলের শত্রুতায় পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতির অবনতিতে আমরা গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। ওই এলাকার শান্তি বিঘ্নিত করছে এই আক্রমণ। আমরা অবিলম্বে হামলা থামিয়ে শান্তি স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি। হিংসার পথ থেকে সরে এসে আমাদের কূটনীতির পথে হাঁটতে হবে।’’ বিদেশ মন্ত্রক আরও বলেছে, ‘‘আমরা পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছি।’’

ইরান ও ইজ়রায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ এবং তেলের বিশ্ববাজারকে ব্যাহত করার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। শুধু ভারত নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশও এই যুদ্ধ পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রেখেছে। এই হামলার ঘটনায় ইরানের নিন্দা করেছে বিশ্বের প্রায় বেশির ভাগ দেশই।

উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামাস্কাসে ইরানের দূতাবাসে বোমা হামলা চালায় ইজ়রায়েল। তারই জবাব হিসাবে রবিবার ইরানের এই হামলা। সিরিয়াতে হামলার ঘটনার পর থেকেই বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়তে থাকে। ইরানি হামলার কারণে ইজ়রায়েল, সৌদি আরব-সহ পশ্চিম এশিয়ার একাধিক দেশের শেয়ারবাজারে পতন হয়। যুদ্ধ পরিস্থিতি বজায় থাকলে সেই প্রভাব আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.